ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে আলোচনার দাবিতে সংসদ উত্তাল করতে চাইছে তৃণমূল। অথচ সোমবার থেকে লোকসভায় এবং মঙ্গলবার থেকে রাজ্যসভায় অপারেশন সিঁদুর নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা নির্ধারিত রয়েছে। আজ লোকসভার স্পিকার সব দলের সংসদীয় নেতাদের ডেকে কথাও বলেছেন। বিরোধীরা শুরুতে ভোটার তালিকা পরিমার্জন নিয়ে আলোচনা চাইলেও, রাজনৈতিক সূত্রের খবর, লোকসভায় পূর্বনির্ধারিত আলোচ্যসূচি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তৃণমূল চায়, রাজ্যসভায় অন্তত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আগে আলোচনা হোক ভোটার তালিকার পরিমার্জন নিয়ে। সরকার যে তা মেনে নেবে না, তা জানে তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে সংসদ অচল করা যায় কি না, তা নিয়েও চলছে ভাবনা। তবে কংগ্রেস এবং অন্যা বিরোধী দলগুলি সহমত না হলে একা তৃণমূলের পক্ষে সংসদ অচল রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ রাজ্যসভায় বিরোধী দলগুলির মধ্যে একমাত্র তৃণমূলের সাংসদরাই (দোলা সেন, সুস্মিতা দেব, নাদিমূল হক) ওয়েলে নেমে স্লোগান দিয়েছেন— ‘ভোট চুরি বন্ধ করো।’ কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদ গলা মিলিয়েছেন। সংসদ শুরু হওয়ার আগে ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিরোধিতা করে সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তি থেকে মকরদ্বারে আসেন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সদস্যরা। সেখানে তাঁরা নতুন ভোটার-ফর্ম ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান। তৃণমূল শিবিরের আশঙ্কা, সংসদের দুই কক্ষে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনায় জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুলবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, ওই আলোচনায় ভোটের চিঁড়ে বিরোধীদের জন্য ভিজবে তো না-ই, বরং বিজেপি মেরুকরণের অস্ত্র পাবে। শুধু বিহারে নয়, প্রতিবেশী বাংলাতেও। ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিষয়টি অনেক বেশি ভোট-কেন্দ্রিক। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ বলেন, “ভোটার তালিকা নিবিড় পরিমার্জনের বিরোধিতা আমাদের অগ্রাধিকার। এই নিয়ে সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গেও কথা বলব। দরকার হলে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করা হবে। কমিশন বিজেপির শাখা অফিসের মতো আচরণ করছে।”
আজ স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস এবং তৃণমূল ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় আলোচনার দাবি তুলেছে। তৃণমূলের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার পরে বলেন, “এই পরিমার্জন করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ে যাচ্ছে। এটা মেনে নেব না বলে স্পিকারকে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি নির্বাচন কমিশনের কাজ নিয়ে একটি বিবরণী পড়ে শুনিয়ে জানিয়েছেন, কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা। তার কাজ নিয়ে সংসদে আলোচনা করা যাবে না।” কাকলি এই দাবিও তোলেন, লোকসভায় সোমবার ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা হলে প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে, পহেলগামের জঙ্গিরা কেন এখনও গ্রেফতার হল না।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সোমবার লোকসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর, নিশিকান্ত দুবে বিতর্কে বলবেন। প্রধানমন্ত্রীও আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বলে সূত্রের খবর। রাজ্যসভায় মঙ্গলবার শুরু হবে এই আলোচনা। দু’টি কক্ষেই সময় নির্ধারিত হয়েছে ১৬ ঘণ্টা করে। আলোচনায় বিরোধীদের মধ্যে থেকে লোকসভায় রাহুল, রাজ্যসভায় খড়্গে বলবেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে লোকসভায় বলবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)