Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Mahua Moitra

মহুয়া-কাণ্ডে অস্বস্তি, চর্চা তৃণমূলের অন্দরে

আগামী লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ সামনে রেখে বড় ধরনের জনমত তৈরির পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল।

mahua moitra

মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৪২
Share: Save:

দলীয় সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নের অভিযোগে বড় ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের বকেয়া নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে এই ঘটনায় চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। এই প্রেক্ষাপটে সংসদীয় দলের কাজকর্ম পরিচালনা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।

সংসদে প্রশ্ন তোলার ব্যাপারে সাংসদদের জন্য তৃণমূলের সংসদীয় দলের কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। দলীয় অবস্থান সম্পর্কে সাধারণ বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই সংসদে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। সেই ফাঁক গলেই এই রকম অভিযোগ সামনে এসেছে কি না, এখন তা নিয়েই দলের অন্দরে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকে। তবে গুরুতর এই অভিযোগের তদন্তের গতিপ্রকৃতি স্পষ্ট হওয়ার আগে বিড়ম্বনা তৈরি হলেও কিছুটা ধীরেই এগোতে চাইছে তৃণমূল। লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কোন বিষয়ে দলের কী অবস্থান, তা আমাদের জানা। জনস্বার্থে সেই সব বিষয়ে যে সব প্রশ্ন আসতে পারে, সাংসদেরা তা আনতেই পারেন। প্রতিদিনের কাজে কেন দল হস্তক্ষেপ করবে? আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থেকে শিখেছি।’’ রাজ্যসভায় দলের মুখ্য সচেতক সুখেন্দু শেখর রায়ের বক্তব্য, ‘‘প্রথমত, এটা লোকসভার বিষয়। তা ছাড়া, এ নিয়ে আমার সঙ্গে কারও কিছু আলোচনাও হয়নি।’’

আগামী লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ সামনে রেখে বড় ধরনের জনমত তৈরির পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। শুধু রাজ্যেই নয়, সেই কর্মসূচিকে ফের এক বার দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও ঘোষণা করে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় দলীয় সাংসদ মহুয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগে কিছুটা বিব্রত হয়ে পড়েছেন তাঁরা। সেই কারণেই দলগত ভাবে বিষয়টি নিয়ে এখনও মহুয়ার থেকে কিছুটা দূরত্বই রক্ষা করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে দলের নেতা ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ইতিমধ্যে বলেছেন, ‘‘আমি মহুয়ার পাশে আছি। মহুয়া বিজেপির বিরুদ্ধে বেশি সরব বলেই একটা ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতে পারে। মনে হচ্ছে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!’’ যদিও দলের তরফে এখনও মহুয়ার পক্ষে কোনও অবস্থান নেয়নি তৃণমূল। বরং, তদন্তের জন্য অপেক্ষার কথা জানানো হয়েছে।

তৃণমূল দলীয় ভাবে মহুয়া-কাণ্ডে কোনও অবস্থান নেয়নি বলেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছে না সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বুধবারই বলেছেন, ‘‘তৃণমূল কেন চুপ? তৃণমূলের নেত্রী সব বিষয়ে এত মুখর, তাঁর ভাইপো এত সরব। এখন তাঁরা নীরব কেন? তৃণমূলের লোকজনের বোঝা উচিত, পিসি ওঁর কয়লা কারবারি ভাইপো ছাড়া আর কারও পাশে দাঁড়াবেন না! দল হিসাবে এরা সবাই কর্পোরেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে।’’ সেলিমের আরও দাবি, নারদের ঘুষ-কাণ্ডের সময়ে বিজেপি এবং সংসদের এথিক্স কমিটির তৎপরতা দেখা যায়নি। অথচ এখন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, কারণ এই ক্ষেত্রে আদানির চাপ আছে!

আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল ‘ধীরে চলো’ নীতি নিলেও সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে দলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। একাধিক বার সংসদে নির্বাচিত সাংসদদের অনেকেই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুতর বলেই মনে করছেন। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘বিষয়টি এখনও অভিযোগের স্তরে। কিছু প্রমাণ হয়নি। তবে এ সব বিষয় এতটাই স্পর্শকারতর যে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে সকলের সতর্ক থাকা উচিত।’’

তিন বারের এক দলীয় সাংসদের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থেকে শিখেছি, কোনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয় নয়। তৃণমূলের কাছে সাধারণ মানুষের স্বার্থই অগ্রাধিকার। সে সব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা, বিতর্ক করাই তৃণমূল সাংসদদের কাজ।’’ সে ক্ষেত্রে শিল্প বা আর্থিক নীতির পরিবর্তে শিল্পপতিকে নিশানা করা হয়েছে কি না, সে বিষয়টি নিয়েও বিশ্লেষণ চাইছেন তিনি।

রাজ্যের প্রাপ্য আদায়ের আন্দোলনে দিল্লিতে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়াকে। কৃষি ভবনে দলের অবস্থান- বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে তাঁকে পাঁজাকোলা করে বার করে দেওয়ার দৃশ্য দেখা গিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধেই এই অভিযোগের প্রভাব কতটা? দলের এক নেতার কথায়, ‘‘দু’টি বিষয় একেবারেই আলাদা। তবু বলছি, এটা অবাঞ্ছিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahua Moitra TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE