E-Paper

কাছে-দূরের অঙ্ক কষেই ভোটে তৃণমূল

মোট ৬০ আসনের বিধানসভায় ২৮টিতে প্রার্থী দিয়ে ত্রিপুরায় লড়তে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত পুরভোটে আগরতলায় প্রায় ২০% ভোট পাওয়া দলের এ বারের হাল দেখে বিভিন্ন মহল থেকে কটাক্ষ আসছে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৬
Picture of Abhishek Banerjee.

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

প্রার্থীরা ঘুরছেন নিজেদের কেন্দ্রে। পাশে হাতে-গোনা লোক। বাংলা থেকে ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ, সায়নী ঘোষ, জয়া দত্তেরা এলেও বিশেষ উত্তাপ নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হলে তখন ভিড়ের চেহারা পাল্টাচ্ছে।

মোট ৬০ আসনের বিধানসভায় ২৮টিতে প্রার্থী দিয়ে ত্রিপুরায় লড়তে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত পুরভোটে আগরতলায় প্রায় ২০% ভোট পাওয়া দলের এ বারের হাল দেখে বিভিন্ন মহল থেকে কটাক্ষ আসছে, বাংলার শাসক দল গোয়া, মণিপুরের মতো ত্রিপুরাতেও ভোট কাটতে এসেছে!

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, হার-জিতের প্রশ্নই শেষ কথা নয়। বাংলার বাইরে দলকে সম্প্রসারিত করার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের অঙ্গ হল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের স্পষ্ট কথা, ‘‘মাথা নত করব না, লড়াই ছেড়ে যাব না— এটা হল মূল কথা। এখানকার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বলছি, যখন ডাকবেন, আসব। যেখানে যেতে বলবেন, চলে যাব। কিন্তু আগে আপনাদের ঠিক থাকতে হবে! ময়দানে থেকে লড়তে হবে।’’

অভিষেকের এমন বার্তার কারণও আছে। গত পুরভোটে এই রাজ্যে জয়ী তৃণমূলের একমাত্র প্রার্থী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সেই নির্বাচনে তৃণমূলের সৈনিক থাকা অনেকেই এখন আর দলের ছাতায় নেই। রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিকও বনিবনা না হওয়ায় আবার ফিরে গিয়েছেন বিজেপিতে। কংগ্রেস ছেড়ে আসা পীযূষ বিশ্বাসের উপরে এখন রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব। ত্রিপুরার রাজনীতিতে অ-বাম শিবিরের দস্তুরই হচ্ছে হাওয়া বুঝে চলা! সুদীপ রায় বর্মণেরা যেমন কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূলের মঞ্চ কাজে লাগিয়েছিলেন। পরে আবার সুযোগ বুঝে বিজেপি ঘুরে মন্ত্রী হয়ে এই ভোটে ফের কংগ্রেসের ‘ওজনদার’ মুখ!

অভিষেক যেমন দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের কথা বলছেন, তার পাশাপাশি কাছের অঙ্কও মাথায় আছে তৃণমূল নেতৃত্বের। পরের পর নির্বাচনে শান্তিতে ভোট দিতে না পারা এবং হিংসাত্মক রাজনীতি, বিরোধীদের উপরে লাগাতার হামলা, অভিযোগে জনমানসে অসন্তোষ আছে। ভোটে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই। সত্যিই তেমন পরিস্থিতি হলে আর তৃণমূল দু-একটা আসন বার করতে পারলেও নানা রকম সমীকরণের দরজা খুলবে। তৃণমূলের সাংসদ সুস্মিতা দেবের মতে, ‘‘তেমন পরিস্থিতি হলে নতুন করে অনেক কিছুই ভাবতে হবে। হতেই পারে, বিজেপিকে সরকার থেকে দূরে রাখতে নানা রকম সম্ভাবনা বিবেচনা করতে হল!’’

তৃণমূল নেত্রী মমতা নিজে এসে রোড-শো এবং সভা করে গিয়েছেন। দলের তরফে ত্রিপুরার দায়িত্ব নিয়ে এখানে ঘাঁটি গেড়ে আছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রী এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মা প্রয়াত হয়েছেন, তিনি কাজ করতে যাবেন না? দলনেত্রীর সস্নেহ অনুমতি নিয়ে ভোটের মুখে স্বল্প-বিরতিতে ত্রিপুরা ছেড়েছিলেন রাজীব। তিনিও বলছেন, ‘‘বিজেপি এখানে কারও গণতান্ত্রিক অধিকার থাকতে দেবে না। আমাদের লড়াই শেষ পর্যন্ত মাটি কামড়ে অধিকার রক্ষা করার।’’

ময়দানে দল আছে, এই বার্তা দিতেই ভোটে নেমেছে তৃণমূল। মমতার শাসনে বাংলার ‘মডেল’কে সামনে রেখেই ত্রিপুরায় তাদের লড়াই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tripura TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy