Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Sudip Bandyopadhyay

রাজ্যের বকেয়া পাওনা চাইলেন সুদীপ, পাল্টা সিএজি রিপোর্ট পড়তে বললেন প্রধানমন্ত্রী

সিএজি রিপোর্টের উল্লেখ করে সুকান্তের অভিযোগ, প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ সরাসরি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। যার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

Sudip Bandyopadhyay

তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪২
Share: Save:

জাতীয় সঙ্গীত সদ্য শেষ হয়েছে। নিজের আসন ছেড়ে সবাইকে নমস্কার জানিয়ে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। উঠে দাঁড়িয়েছেন সকলেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঠিক পিছনের আসনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা যায়, কিছু বলছেন তিনি। পরে জানা যায়, রাজ্যের বকেয়া অর্থ কেন্দ্র কবে মঞ্জুর করবে, সেই প্রশ্ন করেন তিনি। হঠাৎ প্রশ্ন উড়ে আসায়, এক বার পিছন ফিরে তাকান প্রধানমন্ত্রী। সুদীপের দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘সিএজি রিপোর্টটি আমি এখন পড়ছি। আপনারাও দেখে নিন।’

প্রাপ্য অর্থ চাইলে কেন সিএজি রিপোর্টের উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী করলেন, তা সে সময়ে স্পষ্ট হয়নি সুদীপের কাছে। তবে প্রধানমন্ত্রী-সুদীপের ওই বাক্যালাপের ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে দিল্লিতে বিজেপি’র সদর কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া। বিষয়— সিএজি রিপোর্ট। সুকান্তের দাবি, ওই সিএজি রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে রাজ্যে আর্থিক দুর্নীতির উল্লেখ রয়েছে।

রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনে সুকান্ত বলেন, ‘‘গ্রামোন্নয়ন, নগরোন্নয়ন ও শিক্ষা খাতে ২০১৮-২০২১ সালে কেন্দ্র যে অর্থ পাঠিয়েছিল, তা খরচের কোনও শংসাপত্র রাজ্য কেন্দ্রকে দিতে পারেনি। যার পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। একাধিকবার বলা সত্ত্বেও ওই শংসাপত্র পাঠাতে ব্যর্থ হয় রাজ্য। এমনকি, কোন খাতে ওই অর্থ খরচ হয়েছে তার কোনও স্পষ্ট দিশাও সিএজিকে দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। আমাদের তাই আশঙ্কা, ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ভুয়ো খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেশাসক শিবির।’’

সিএজি রিপোর্টের উল্লেখ করে সুকান্তের অভিযোগ, প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ সরাসরি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। যার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সুকান্তের কথায়, ‘‘সিএজি যে তিনটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে, তাতে গ্রামোয়ন্নন দফতরও রয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, এত বড় পুকুর চুরির পরে কোন যুক্তিতে কেন্দ্রের কাছে গ্রামোন্নয়ন-সহ অন্য দফতরের জন্য অর্থ দাবি করে রাজ্য সরকার? তৃণমূল চুরি করবে আর কেন্দ্র টাকা জোগাবে, এ তো হতে পারে না।’’

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের আমলে যে পরিমাণ আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে, তা ইউপিএ সরকারের আমলের দুর্নীতিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন গৌরব। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় যা হয়েছে, তা মাদার অব অল স্ক্যাম।’’

অন্য দিকে, আজ সিএজি রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সিএজি রিপোর্ট বাড়িতে বসে তৈরি করা হয়। বুধবার বিকেলে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে পৌঁছে তিনি বলেন, “সিএজি রিপোর্ট লোকসভায় অডিট হয়। অ্যাসেমব্লির কমিটি সিএজি রিপোর্ট দেখে। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি প্রতিটি রিপোর্ট দেখে। যারা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সদস্য, তাদের জিজ্ঞাসা করুন কত লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা, গরিবের টাকা দিয়ে ধনসম্পত্তি বানিয়েছে। আগে সেটার উত্তর দিক।”

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্নায় বসতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি আজ বলেন, ‘‘নিয়মমাফিক হিসাব পেলেই টাকা ছাড়তে সমস্যা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছিল, কেন্দ্র ও রাজ্যের আমলারা একসঙ্গে বৈঠক করে জট ছাড়াবেন। কেন্দ্র অফিসার নিযুক্ত করলেও, রাজ্য এখনও তাঁদের অফিসার নিযুক্ত করেনি।’’

নিরঞ্জন ওই দাবি করলেও, গত ২৩ জানুয়ারি কৃষি মন্ত্রকে কেন্দ্র ও রাজ্যের আমলারা বৈঠক করেন। যদিও তাতে লাভ হয়নি। আজ জ্যোতির বক্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিথ্যে কথা বলেন। এর প্রমাণ আমরা আগেও পেয়েছি। আর এ সব বিষয়ে উনি বলার কে? আমরা প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে কথা বলব।’’

অন্তর্বর্তী বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে আজই দিল্লি এসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামিকাল বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে তাঁর। তৃণমূল সূত্রের মতে, রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাব ও বাজেট নিয়ে বক্তব্যের সময়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে সরব হতে পারে তৃণমূল শিবির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sudip Bandyopadhyay PM Narendra Modi TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE