Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Sudip Bandyopadhyay

কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র পাল্টা টাকা লুটের অভিযোগ

দুর্নীতি এবং প্রকল্পের শর্ত না মানার অভিযোগে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাঠানো বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র।

sudip banerjee

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৩১
Share: Save:

বিজেপি বাঙালি-বিরোধী, এই স্লোগানে শীতকালীন অধিবেশনে প্রচারে নামার কৌশল নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা অর্থ নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রতিহিংসাবশত আটকে রেখেছে, এই অভিযোগে আজ লোকসভায় সরব হন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সুরে একশো দিনের কাজে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে আগামিকাল রাজ্যসভায় বলার জন্য আবেদন জানিয়ে নোটিস দিতে চলেছেন তৃণমূলের ১৩ জন রাজ্যসভা সাংসদ।

অন্য দিকে, সুদীপের অভিযোগের জবাবে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান আজ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পাঠানো টাকা নয়ছয় করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ব্যবহার করা হয়েছে দলীয় কাজে। সেই কারণে সিবিআই তদন্ত চলছে। যাতে সব কিছু সামনে আসে।’’ প্রধানমন্ত্রী পোষণ যোজনা ও মিড ডে মিল প্রকল্পে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধান। তৃণমূলের বিরুদ্ধে গরিবের হকের টাকা লুট করে দলের কাজে খরচের অভিযোগ আনেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এঁদের ভয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বও জেলে যাবেন। সেই ভয় থেকেই এখন (মিথ্যা অভিযোগ করে) সংসদের সময় নষ্ট করছেন।’’

দুর্নীতি এবং প্রকল্পের শর্ত না মানার অভিযোগে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাঠানো বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। এর ফলে রাজ্যের সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েছেন, ওই যুক্তি দেখিয়ে দ্রুত টাকা ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে সরব তৃণমূল নেতৃত্ব। বকেয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কাজ হয়নি।

আজ তাই শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে লোকসভায় জিরো আওয়ারে বিষয়টি তোলেন সুদীপ। তিনি বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, আবাস যোজনার মতো একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা গত দু’বছর বন্ধ করেছে কেন্দ্র। যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকায়।’’ সাংসদের কথায়, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে সংসদে আলোচনা করা হোক। পশ্চিমবঙ্গে উপরে যেন কোনও অর্থনৈতিক অবরোধ না থাকে।

বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জনা জ্যোতির সঙ্গে বৈঠক করার জন্য মাসখানেক আগে কৃষি ভবনে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ ও রাজ্যের মন্ত্রীরা। সুদীপের অভিযোগ, ‘‘আমাদের চা খাইয়ে দু’ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত যখন আমরা দেখা করতে যাই, তখন মন্ত্রী পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান।’’ ওই দিন সাংসদদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের অভব্যতার অভিযোগ এনেছেন সুদীপ।

তৃণমূল সূত্রের মতে, গত দু’বছর ধরে যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ রেখেছে মোদী সরকার, তা রাজ্যের শাসক দলকে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। বিজেপি গোটা রাজ্যকেই চোর বলে দাগিয়ে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ করে, তা থেকে ফায়দা তোলার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। সুদীপের দাবি, বিজেপির ওই নেতিবাচক প্রচারে বাঙালি ভদ্রলোক সমাজের একাংশ ক্ষুব্ধ। সে কথা মাথায় রেখে সংসদের উভয় কক্ষে বাংলার বঞ্চনা নিয়ে সরব হওয়ার কৌশল নিয়েছেন সুদীপ-ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। সুদীপের দাবি, বিজেপি যে বাংলা-বিরোধী, তা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়া থেকেই স্পষ্ট।

আজ সুদীপ যখন কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ করছেন, তখন প্রতিবাদ জানান লোকসভায় উপস্থিত বাংলার বিজেপি সাংসদেরা। সুদীপের বক্তব্য শেষেই জবাব দিতে উঠে দাঁড়ান কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তিনি বলেন, ‘‘টাকা আটকে রাখার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। ভারত সরকার বাংলার গরিব মানুষের জন্য যে টাকা পাঠায়, সেই টাকায় এঁরা (তৃণমূল নেতৃত্ব) তোলাবাজি করেন, কাটমানি খান।’’ প্রধানের দাবি, ‘‘সেই কারণেই বাংলায় কেন্দ্রীয় অর্থ পাঠানো বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য রাজ্যগুলি আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চললেও, পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sudip Bandyopadhyay TMC Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE