আজ নিয়ে চতুর্থ দিন বাংলার বঞ্চনা নিয়ে সংসদ চত্বরে ধারাবাহিক ভাবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখালেন তৃণমূল সাংসদেরা। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় অংশ পাঠানো সত্ত্বেও সেই টাকা খরচ না করতে পারা নিয়ে এ বার লোকসভায় সরব হল নরেন্দ্র মোদী সরকার। দাবি, রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান যোজনায় রাজ্য সরকার টাকা পেলেও সেই অর্থ খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সংসদের বাইরে তৃণমূল যখন রাজ্যের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ নিয়ে আন্দোলনে ব্যস্ত, তখন পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের ব্যর্থতার দিকটিও সংসদে নথিভুক্ত করে রাখার কৌশল নিয়েছে কেন্দ্র।
রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (আরইউএসএ) যোজনায় পশ্চিমবঙ্গ যে অর্থ পেয়েছে, তার কী হল, তা শিক্ষা মন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে খগেন বাংলায় প্রশ্ন করায় পাল্টা বাংলাতেই উত্তর দেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে কেন্দ্রের আরইউএসএ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে সময়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোট ৯০৩.৪৫ কোটি টাকার বিনিময়ে ২০৬টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। যার মধ্যে কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল ৫৪৫.৬৫ কোটি টাকা এবং বাকিটা রাজ্যের। কিন্তু সুকান্তের দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ৬১টি প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়েছে। ১৪৫টি প্রকল্প ঝুলে রয়েছে।’’ যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘বিজেপির সব দাবি অসার। এরা যে পশ্চিমবঙ্গকে টাকা না দিয়ে বঞ্চনা করে চলেছে, তা এখন গোটা দেশের লোক জানে।’’
পাল্টা সুকান্তের দাবি, তিনি বহু বার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে দ্রুত প্রকল্প শেষ করার অনুরোধ করলেও কোন লাভ হয়নি। সুকান্তের কথায়, ‘‘উন্নয়নের পরিবর্তে ওঁরা বেছে নিয়েছেন দীর্ঘসূত্রিতা। তৃণমূল সরকারের সংকীর্ণ নীতির ফলে আখেরে ফল ভুগতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে। প্রকল্পের সুফল নিতে পারছেন না তাঁরা।’’
গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কেন্দ্র সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আজ প্রশ্নোত্তর পর্বে তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘কুম্ভমেলার পরেই সবথেকে বেশি ভিড় হয়ে গঙ্গাসাগরে। তা সত্ত্বেও গঙ্গাসাগরকে স্বদেশ দর্শন ও প্রসাদ প্রকল্পের আওতায় কেন আনা হয়নি?’’ জবাবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে উপকূলবর্তী এলাকার উন্নয়নে ৬৮ কোটি টাকা, বেলুড় মঠের উন্নয়নপ্রকল্পে ৩১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। গঙ্গাসাগরের পৌরাণিক ও সামাজিক মাহাত্ম্য রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রকল্প
চাওয়া হয়নি।’’ তাই সাংসদের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে গঙ্গাসাগর উন্নয়ন উপলক্ষে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে অনুরোধ করেছেন শেখাওয়াত।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)