Advertisement
E-Paper

দিদির নামেই ভরসা, বাংলাপ্রধান কেন্দ্রে নজর রাখছে তৃণমূল

গত বার ছিল ১০১। এ বার মেরেকেটে ২৫। পুরনো কর্মীদের সিংহভাগ ছিটকে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাহায্যের উপরেও তেমন ভরসা নেই। কিন্তু তার পরেও লড়াইয়ের জমি ছাড়তে নারাজ অসমে তৃণমূল কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক দ্বীপেন পাঠক। অবশ্য উজানি অসমের দিকে বেশি লড়ার কথা ভাবছে না দল। বরং ‘দিদি’র নাম নিয়ে বাঙালিপ্রধান জেলাগুলিতে লড়ার পরিকল্পনা তৃণমূলের। নজর মূলত বরাক উপত্যকা আর নামনি অসমের দিকেই।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০৪:৫১

গত বার ছিল ১০১। এ বার মেরেকেটে ২৫। পুরনো কর্মীদের সিংহভাগ ছিটকে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাহায্যের উপরেও তেমন ভরসা নেই। কিন্তু তার পরেও লড়াইয়ের জমি ছাড়তে নারাজ অসমে তৃণমূল কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক দ্বীপেন পাঠক। অবশ্য উজানি অসমের দিকে বেশি লড়ার কথা ভাবছে না দল। বরং ‘দিদি’র নাম নিয়ে বাঙালিপ্রধান জেলাগুলিতে লড়ার পরিকল্পনা তৃণমূলের। নজর মূলত বরাক উপত্যকা আর নামনি অসমের দিকেই।

২০১১ সালের বিধানসভায় নির্বাচনে বিরাট ভাবেই অসমের ময়দানে নেমেছিল তৃণমূল। সাংবাদিক সম্মেলন করা, দফতর নেওয়া, শতাধিক আসনে প্রার্থী দাঁড় করানো তৃণমূল সে বার লড়তে নামার আগেই অন্তর্কলহে দুর্বল হয়ে পড়ে। রাজ্য সভাপতি পদ নিয়ে শুরু হয় কাজিয়া। তৃণমূলের নাম নিয়ে রেলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অসাধু চক্রও গড়ে ওঠে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দেবেশ্বর বরা, অলক ঘোষ, দ্বীপেন পাঠক, কৈলাশ শর্মারা লড়াই চালিয়ে যান।

অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাহায্য মেলেনি। অনেক অনুরোধেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে যাননি। তিনি তখন বাংলা দখলের ‘ডু অর ডাই’ লড়াইতে ব্যস্ত। কিন্তু হাজোতে দ্বীপেনবাবুর হয়ে হেলিকপ্টারে প্রচারে এসেছিলেন তাপস পাল, শতাব্দী রায়ের জুটি। কপালের জোরই হোক বা রাজনৈতিক সমীকরণ অথবা বাংলার ‘হিট জুটি’র হাতযশ— হাজোয় জিতে যান পাঠক। ৫৬০০ ভোটে তিনি হারিয়ে দেন কংগ্রেসের এক সময়ের সাংসদ, দুঁদে নেতা কিরিপ চলিহাকে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, গগৈ বিরোধী নেতা কিরিপকে হারাতে কলকাঠি নেড়েছিলেন গগৈয়ের তদনীন্তন ডান হাত হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তখন থেকেই দ্বীপেনবাবু অসমে তৃণমূলের সভাপতি।

গত লোকসভা ভোটে ১২টি আসনে লড়েছিল তৃণমূল। দলের হয়ে লড়েন মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল রঞ্জিৎ শেখর মুশাহারি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের পুত্র পরভেজ আহমেদ, বর্ষীয়ান অভিনেতা বিজু ফুকন। সে বার মমতাদেবী নিজে গুয়াহাটিতে এসে জনসভা করেন। কিন্তু একটি আসনেও তৃণমূল জেতেনি। লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দল টুকরো হতে শুরু করেছিল। ভোটের পরে রাজ্য থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেস। মুশাহারি এবং পুরনো সদস্য কৈলাশ শর্মাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবজ্ঞার প্রতিবাদে দল ছাড়েন। শিবরাত্রির সলতে হয়ে থেকে যান শুধু দ্বীপেনবাবু।

দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া এক নেত্রীর অভিযোগ, ‘‘নির্বাচনের আগে দলের ‘সর্বভারতীয়’ তকমা অক্ষুণ্ণ রাখতে তৃণমূল নেতারা রাজ্যে এসে যে কোনও উপায়ে কয়েকজন প্রার্থী দাঁড় করিয়ে যান। কিন্তু যুদ্ধের রসদ যোগানোর কোনও ভার তাঁরা নেন না। টাকার জোরে ও ভোটে দাঁড়ানোর লোভে ব্যবসায়ী, অন্য দল ছেড়ে আসা ব্যক্তিরা তৃণমূলের দাঁড়িয়ে পড়েন।’’

এ বার নির্বাচনের আগে ফের তৃণমূলের কলকাতার নেতারা দ্বীপেনবাবু, কৈলাশবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিস্তর অনুরোধ করে কৈলাশবাবুকে ফেরানো হয়। সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্য জুড়ে প্রার্থী দিয়ে লাভ নেই। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম যে সব জেলায় প্রভাব ফেলতে পারে, সেই বাংলাভাষী প্রধান জেলাগুলিতেই লড়া ভাল। কৈলাশবাবু আজ বলেন, ‘‘এখনও আমাদের প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা বরাক উপত্যাকা, ধুবুরি, গোয়ালপাড়া, চিরাং, মঙ্গলদৈ জেলাগুলিতে বেশি জোর দিচ্ছি।’’ অবশ্য মধ্য ও উজানি অসমে একেবারে ছাড়া হচ্ছে না। শিবসাগর জেলার নাজিরা, লখিমপুর জেলাতেও প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নগাঁও জেলাতেও বাঙালি অনেক। তাই সেখানেও লড়তে চাইছে দল। কৈলাশবাবু জানান, আগামী কাল তাঁদের প্রথম প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করা হবে। পরের তালিকা ঘোষণা হবে বুধবার।

দ্বীপেনবাবু বলেন, ‘‘আমরা চাই দিদি অসমে প্রচারে আসুন। কিন্তু এ বার তিনি শুধু দলের প্রধান নন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। তাই তিনি হয়ত সময় দিতে পারবেন না। কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তী, তাপস পাল, শতাব্দী রায় আর জনপ্রিয় সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে আনার চেষ্টা হচ্ছে।’’ বিশেষ করে তাঁর ‘পয়া তারকাজুটি’কে আনতে মরীয়া পাঠক। শুভেন্দুবাবু জানিয়েছেন, দোলের পরে তিনি অসমে প্রচারে যাবেন। অবশ্য শতাব্দীদেবী বলেন, ‘‘দিদি পশ্চিমবঙ্গের ভোটে যে এলাকাগুলিতে প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছেন সেগুলি আগে শেষ করব। অসমে প্রচারের ব্যাপারে এখনও কোনও কথা হয়নি।’’

অন্য দিকে, গত কাল এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমল তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রস্তাব দেন। জানান, মমতাদেবী তাঁদের হয়ে অসমে প্রচার চালালে তিনিও পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু এলাকায় তৃণমূলের হয়ে প্রচারে যাবেন। কৈলাশবাবু অবশ্য জোটের প্রস্তাব উড়িয়ে বলেন, ‘‘রাজ্যে আমরা ‘একলা চলো’ নীতিই নিয়েছি।’’

Assembly elections Assam tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy