রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পশ্চিমবঙ্গের নামে অপপ্রচার করেছেন বলে দাবি করল তৃণমূল। নির্মলার বক্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার কক্ষ থেকে তৃণমূল সাংসদেরা ‘ওয়াকআউট’ করেছেন। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গে ভুল বোঝানো হয়েছে। প্রতিবাদ করার সুযোগও দেওয়া হয়নি। একে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ।
বুধবার কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক (সংশোধনী) বিল লোকসভায় পাশ হয়েছে। বৃহস্পতিবার তা নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনা হয়। সংসদের উচ্চকক্ষে এই বিলের নেপথ্যে কেন্দ্রের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি। নতুন বিলে তামাকজাত পণ্যে শুল্কবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, এটি রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনামাত্র। বিলের নেপথ্যে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও চিন্তাভাবনা নেই। তৃণমূলের সাগরিকা বলেন, ‘‘এই বিল রাজস্বের পদক্ষেপ। স্বাস্থ্য সংস্কারের জন্য নয়।’’ কেন্দ্রের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আপনারা কী করছেন? শুধু শুল্ক বৃদ্ধি করলে তো সিগারেট বা অন্য তামাকজাত পণ্যের বিক্রি কমবে না। যাঁরা নেশাগ্রস্ত, তাঁরা ধূমপান করবেনই।’’ পানমশলা এবং তামাক-পণ্যের বিজ্ঞাপনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা না থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ। এর পরেই তিনি জানান, কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও দু’লক্ষ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের।
আরও পড়ুন:
সাগরিকার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে নির্মলা পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তাঁর দাবি, কেন্দ্রের পূর্ণ সহযোগিতা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে মমতার সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই রাজ্যকে কখনও অবহেলা করেননি। পশ্চিমবঙ্গ ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প থেকে নাম কেন তুলে নিয়েছিল? তা আদৌ জনহিতৈষী পদক্ষেপ কি না, প্রশ্ন তুলেছেন নির্মলা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন তৃণমূল সাংসদেরা। সংসদ চত্বর থেকে সাগরিকা বলেন, ‘‘আজ আমরা রাজ্যসভায় গণতন্ত্রের হত্যা চাক্ষুষ করলাম। কেন্দ্রীয় আবগারি বিল নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বার বার পশ্চিমবঙ্গের নামে অপপ্রচার করলেন। এমন এমন তথ্য দিলেন, যা প্রমাণিত নয়।’’ তৃণমূলের তরফে ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রতিবাদ করতে চাইলেও তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়নি, জানান সাগরিকা।
বর্তমানে সমস্ত তামাকজাত পণ্যের উপর জিএসটি কাঠামো অনুসারে কর নেয় কেন্দ্র। শুল্কের হার ২৮ শতাংশ। নতুন আবগারি বিলে প্রস্তাব, অনুৎপাদিত তামাকের উপর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। সিগার, চুরুটের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কিংবা প্রতি এক হাজার সিগারেটে পাঁচ হাজার টাকা হিসাবে শুল্ক নেওয়া হবে। তৃণমূলের দাবি, কেবল শুল্কবৃদ্ধিতে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।