E-Paper

বিজ্ঞাপন-ব্যয় ২৩২০ কোটি ‘এড়িয়েও’ জবাব কেন্দ্রের

রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর কাছে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানতে চেয়েছিলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের বিজ্ঞাপন খাতে গত পাঁচ বছরে কেন্দ্র মোট কত টাকা খরচ করেছে?

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৪

—ফাইল চিত্র।

মুখ তো বিজ্ঞাপনে ঢেকেছেই। কিন্তু তার জন্য সাধারণ মানুষের করের কত টাকা গুনেছে মোদী সরকার, সেই তথ্যও সংসদে ‘এড়িয়ে যাওয়া’ হচ্ছে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আজ এই অভিযোগে সরব হলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সংসদে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে শুধুমাত্র যে ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিয়েছে কেন্দ্র, তাতে দেখা যাচ্ছে গত পাঁচ বছরে মোট ২৩২০.১৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বিজ্ঞাপনে। ওই ওয়েবসাইটের ভিত্তিতে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার দাবি, ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ এর মধ্যে সরকারি বিজ্ঞাপনের খরচ ৮৪ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর কাছে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানতে চেয়েছিলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের বিজ্ঞাপন খাতে গত পাঁচ বছরে কেন্দ্র মোট কত টাকা খরচ করেছে? পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন ছিল, কেন্দ্রের মোদী সরকার তার ১১ বছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষে কত ব্যয় করেছে বিজ্ঞাপনে? এর লিখিত জবাবে প্রতিমন্ত্রী এল মুরুগান সরাসরি কোনও তথ্য না দিয়ে জানান, সেন্ট্রাল ব্যুরো অব কমিউনিকেশনের ওয়েবসাইটেই বিজ্ঞাপনের ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রয়েছে।

ডেরেকের কটাক্ষ, “এমনিতেই থরহরি কম্প মোদী সরকার সংসদকে অবজ্ঞা করার আরও একটি উপায় বার করেছে। অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরাসরি উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে তারা ওয়েবসাইটে যেতে বলছে। সেখানে গিয়ে আমরা যা পেলাম, তাতে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়! বিজ্ঞাপনে যে অঙ্কের টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে পিএম কী ভাবে পিআরএম (পাবলিক রিলেশনস মিনিস্টার) হয়ে উঠেছেন। সংসদকে সেই হিসাবও দেওয়া হয়নি। অবনমনের এ এক নতুন মাত্রা।” ডেরেকের আরও দাবি, “উত্তর তো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বটেই। রাজ্যসভার টেবিলেও উত্তর জমা দেওয়া হয়নি। এর পর আমরা ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে দেওয়া তথ্যের হিসাব করে দেখছি, মোট ৬৬টি মন্ত্রকে গড়ে প্রতি বছর ৪৫৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এই টাকা সাধারণ মানুষের করের টাকা।”

সরকারের উল্লিখিত ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে কৃষি মন্ত্রকে ২০২০-২১ সালে বিজ্ঞাপনে খরচ করা হয়েছিল প্রায় ১৩ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ সালে সেই খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭ কোটি। অর্থ মন্ত্রকের বিজ্ঞাপনে খরচ ২০২০-২১ সালে ছিল ৪৩ কোটি। সেখানে লোকসভা ভোটের বছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালে এই পরিমাণ হয় ৭২ কোটি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জনজাতি উন্নয়ন মন্ত্রকে ২০২০-২১ সালে বিজ্ঞাপন খরচ হয়েছিল মাত্র ৪৭ লাখ টাকা। লোকসভা ভোটের আর্থিক বছরে তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি টাকায়। বছর অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনের খরচ ২০২৩-২৪ সালে ৬৫৬.০৮ কোটি টাকা এবং ২০২৪-২৫ সালে ৬৪৩.৬৩ কোটি টাকা।

রাজ্যসভায় তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের মতে, “কেন্দ্র ইচ্ছে করেই উত্তরের এই অংশ চেপে গিয়ে ওয়েবসাইট দেখিয়ে দিয়েছে। কারণ সরাসরি উত্তরে যদি বিজ্ঞাপনের খরচের এই বিপুল অঙ্ক চলে আসে, সেটা সংবাদমাধ্যমের নজরে চট করে পড়বে। ওয়েবসাইট দিলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক সাংসদই তা আর খুলে দেখেন না। ডেরেক ও'ব্রায়েন অত্যন্ত সচেতন সাংসদ, তাই বিষয়টি তাঁর চোখ এড়ায়নি।” সুখেন্দুশেখরের মতে, এ ভাবে উত্তরে ‘অর্ধসত্য’ বলার মানে সংবিধান এবং সংসদকে ‘অগ্রাহ্য, উপেক্ষা এবং অবমাননা’ করা। সুখেন্দু ব্যাখ্যা করে বলেন, সভার ৪৭ নম্বর বিধি বলছে সাংসদদের প্রশ্ন করার ২২টি পূর্বশর্ত রয়েছে। সেই শর্ত মেনে প্রশ্ন করা হয়েছে বলেই রাজ্যসভার চেয়ার তা গ্রহণ করেছে। এর পর ওই বিধিতে বলা রয়েছে, জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে কোনও তথ্য, যা মন্ত্রীর জ্ঞাত, তা নিয়ে সাংসদ প্রশ্ন করবেন এবং জবাব দেওয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দায়িত্ব। সাংসদের দাবি, “সাংসদের অধিকার রয়েছে মন্ত্রীর কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার। কোনও লিঙ্ক দেওয়ার কথা রাজ্যসভা এবং লোকসভার সংশোধিত বিধিতেও নেই। তাতে সংসদীয় প্রণালী ধ্বংস করা হয়। যে তথ্য সরকারের পক্ষে অস্বস্তির, সে ক্ষেত্রে স্পষ্ট পরিসংখ্যান না দিয়ে ওয়েবসাইট গছিয়ে দেওয়ার এই কৌশল ইদানীং মোদী সরকারের নতুন দফায় খুবই দেখা যাচ্ছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Parliamentary Session Advertisements Central Government TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy