ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের সদর কার্যালয়ের সামনে।
পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা নাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনার অন্দরমহল। এত বড় সেনা কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হানার ঘটনা প্রায় নজিরবিহীন। সেনার মুভমেন্টের প্রতি মুহূর্তের খবর কী ভাবে জঙ্গিদের কাছে পৌঁছেছিল, তা চিন্তায় ফেলেছে সেনা গোয়েন্দাদের। সেই সব ফাঁকফোকর আটকানো এবং সেনার শক্তি আরও সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী করতেই এ বার ঢেলে সাজছে সেনা সদর দফতরগুলি। সেনার সদর দফতরগুলিতে এক দিকে যেমন বেশ কিছু নতুন পদ তৈরি হচ্ছে, তেমনই পদাধিকারের মর্যাদাতেও আসছে রদবদল। এর ফলে সেনার কাজ আরও সুসংহত ও একমুখী হবে বলেই মনে করছেন সেনা আধিকারিকরা। এ মাসের মধ্যেই এই গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে বলে সেনার একটি পদস্থ সূত্রে খবর।
পুলওয়ামা পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেনার অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো, অস্ত্রভাণ্ডার-সহ যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখে সেনার আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরিকাঠামো, সেনাবিভাগে নিয়োগ, অস্ত্রভাণ্ডার বাড়ানোর পাশাপাশি সবচেয়ে অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে সেনার সদর দফতরগুলির আধুনিকীকরণ এবং একমুখীকরণ। মূলত যে কোনও বিষয়ে যাতে দ্রুত এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তার জন্য একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।
জরুরি পরিস্থিতিতে সেনা সদর দফতরগুলিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা ছিল। উরি বা পাঠানকোটের মতো সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হানা, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাক সেনার গোলাগুলি মোকাবিলা করার মতো ক্ষেত্রে একাধিক পদমর্যাদা ঘুরে সর্বোচ্চ পদাধিকারীর কাছে পৌঁছনো এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাঝখানেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেত। ফলে প্রতিরোধ বা প্রত্যাঘাতে দেরি হয়ে যেত। এই সব সমস্যা মেটাতে সেনার পদাধিকারে প্রচুর রদবদল আনা হচ্ছে।
সেনার পদস্থ এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইতিমধ্যেই পুনর্গঠন বা সংস্কারের নীতিগত অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। প্রতিটি সেনা সদর দফতরে এক জন করে নতুন ডেপুটি চিফ (সাবস্ট্যান্স) নিয়োগ করা হচ্ছে। সেনা ছাউনির অভ্যান্তরে কতটা জায়গা রয়েছে, কোন জায়গা কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, কোন এলাকা কতটা সুরক্ষিত, সুরক্ষায় কোনও খামতি থাকলে তা নিশ্ছিদ্র করতে আরও কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। বর্তমানে সেনা সদর দফতরে দু’জন ডেপুটি চিফ রয়েছন— এক জন তথ্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক এবং অন্য জন পরিকল্পনা ও রূপায়ন বিভাগে। এই দু’টি পদই তুলে দিয়ে এক ছাতার তলায় আনা হচ্ছে বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পডু়ন: গাঁধী পরিবারের বাইরের কেউ সভাপতি হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেস ভেঙে টুকরো হয়ে যাবে, মন্তব্য নটবরের
আরও পড়ুন: বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট সরকারি আইনজীবীদের
আরও একটি বড়সড় রদবদল আসছে সেনা অপারেশেন, গোয়েন্দা এবং যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে সরবরাহের ক্ষেত্রে। এখন এই তিন বিভাগের কর্তারাই রিপোর্ট করবেন স্ট্র্যাটেজি বিভাগের উপপ্রধানের কাছে। পরিকল্পনা বিভাগের নীচু স্তরের কর্তারাও এই স্ট্র্যাটেজি বিভাগের উপপ্রধানকেই রিপোর্ট করবেন। প্রযুক্তি এবং সাইবার সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্ত কিছুর জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন তথ্য-ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপ্রধান। এ ছাড়া এক জন অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেলেরক (ভিজিল্যান্স) পদ তৈরি করা হচ্ছে, যিনি সরাসরি সেনা প্রধানকে রিপোর্ট করবেন।
সেনা সদর দফতরগুলির সংস্কার ও পুনর্গঠনের চারটি ক্ষেত্রে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। সেনা জওয়ান অফিসারদের মধ্যে থেকে ‘সুংসহত যুদ্ধ-বাহিনী’ গঠন করা ছিল অন্যতম। অর্থাৎ আগে থেকেই দক্ষ, সাহসী এবং প্রখর বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন জওয়ান-অফিসারদের বেছে আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট দল তৈরি থাকবে। সেই অনুযায়ী তাঁদের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলবে। কোথাও যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে যাতে ওই বাহিনী দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করতে পারে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। এছাড়া সেনা কর্মী-অফিসারদের র্যাঙ্ক বা পদমর্যাদা রিভিউয়ের ব্যবস্থাও তৈরি হচ্ছে সদর দফতরগুলিতে। আবার ব্যারাকের মধ্যে বা বাইরে কোনও সেনা জওয়ান বা অফিসার নিয়ম ভঙ্গ করলে শাস্তির ব্যবস্থাও আরও কঠোর এবং স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে সেনার ওই সূত্রে।
এর বাইরেও নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা, হিউম্যান রিসোর্স সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করলে তার শাস্তি এবং অন্যান্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে বড়সড় কয়েকটি রদবদল আনা হচ্ছে। এডিজি হিউম্যান রিসোর্স পদমর্যাদার একটি নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেনার পদস্থ এক কর্তা বলেন, এক কথায় ‘‘মূল উদ্দেশ্য হল সেনার দক্ষতা বাড়ানো, আধুনিকীকরণ এবং একই সঙ্গে খরচ কমানো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy