লাতেহারের ববরাডিহর বাসিন্দা দীপক সরোজ কৃষ্ণ তাঁর পরিবারকে নিয়ে আজ সকালে জিপ সাফারিতে বেরিয়েছিলেন। দীপকবাবুর কথায়, ‘‘হঠাৎই দেখি, একটু দূরে ফাঁকা ফাঁকা জঙ্গলের মধ্যে বাঘটা বসে রয়েছে! সত্যি দেখছি তো? ফের চোখ কচলে ভাল করে দেখি, হ্যাঁ, আদি-অকৃত্রিম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।’’ বাঘ দেখে ভয় পাননি দীপকবাবু ও তাঁর পরিবার। পটাপট ছবি উঠতে থাকে বাঘের। তবে ছবি তোলার জন্য বেশিক্ষণ সময় দেয়নি বাঘটি। ফের সে জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে যায়। এ দিকে বাঘ দেখার খবর ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি বেশি। ফরেস্ট গার্ড মহেশ পিটার নুনাহি নালার সামনে আসেন। আসেন দফতরের আধিকারিকরা। অন্য পর্যটকরাও ভিড় করেন। কিন্তু আর বাঘের আর দেখা মেলেনি। তবে বাঘ দেখে ততক্ষণে ভিআইপি হয়ে গিয়েছেন দীপকবাবু। হোয়াটসঅ্যাপে বাঘের ছবি ‘ফরোর্য়াড’ করার জন্য অনুরোধের ঢল নামে। বেতলার রেঞ্জার নাথুনি সিংহ বলেন, ‘‘জঙ্গলের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন:
আইসা-এবিভিপি সংঘর্ষে উত্তপ্ত দিল্লি
স্বস্তির নিশ্বাস পড়েছে জঙ্গলের ট্যুর অপারেটরদের মধ্যেও। বেতলা জঙ্গলের এক ট্যুর অপারেটর সোমনাথ রায়। তাঁর কথায়, ‘‘গত দু’বছর ধরে পর্যটকদের বেতলার বাঘের গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। পর্যটকরা বলতেন, গল্প না শুনিয়ে সত্যিকারের বাঘ দেখান! তখন চুপ করে যেতাম।’’ দেশের প্রাচীন টাইগার রিজার্ভ প্রোজেক্টের মধ্যে বেতলা টাইগার রিজার্ভ অন্যতম। আশির দশকেও বেতলার জঙ্গলে অনেক বাঘ ছিল। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘একটা সময় এত বেশি বাঘ ছিল যে প্রায়শই ওরা গ্রামে ঢুকে গরু-মোষ খেয়ে যেত। গ্রামবাসীদের অনেক টাকা ক্ষতিপূরণও দিতে হতো বন দফতরকে।’’
পশ্চিমবঙ্গের বক্সা টাইগার রিজার্ভে বাঘের অস্তিত্ব নিয়ে যখন সন্দেহ তীব্র হতে শুরু করে ঠিক সেই সময়ে, কয়েক সপ্তাহ আগেই ট্র্যাপ ক্যামেরায় ব্ল্যাক পান্থারের ছবি ধরা পড়ে। একই ভাবে, সম্প্রতি নেওড়া ভ্যালিতে বাঘের ছবি তুলে বিখ্যাত হয়ে যান এক জিপ চালক। আর এখন প্রতিবেশী বেতলায় বাঘের এই অস্তিত্ব সার্বিক ভাবেই দেশের ব্যাঘ্র বিশারদদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।