বাবা-মায়ের সঙ্গে শ্রীধন্যা।
খবর পেয়েছিলেন ইউপিএসসির লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছেন। গোটা পরিবারে একটা আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। তাঁদের মেয়ে যে আমলা হতে চলেছে! কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সেই আনন্দ উবে গিয়েছিল। লিখিত পরীক্ষায় তো পাশ করেছেন, কিন্তু ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে দিল্লিতে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার এই টাকাটা কী ভাবে জোগাড় করবে তা ভেবেই দিশাহারা হয়ে পড়েছিল।
বন্ধুর পাশ করার খবর পেয়েছিলেন বাকি বন্ধুরা। একই সঙ্গে তাঁরা জানতে পেরেছিলেন যে, ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে পারেনি বন্ধু। তাঁদের এক বন্ধু আমলা হতে চলেছে, আর তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, তা তো হয় না। সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে বন্ধুর হাতে তুলে দিয়ে দিল্লিতে পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। পরীক্ষার ফল যখন বেরোল, দেখা গেল ৪১০ র্যাঙ্ক নিয়ে পাশ করেছেন।
শ্রীধন্যা সুরেশ। কেরলের আদিবাসী সমাজের প্রথম আইএএস। ওয়েনাড জেলার ছোট গ্রাম পোজুথুনার বাসিন্দা। কেরলের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলা এই ওয়েনাডের পোজুথুনা গ্রামে কুরিচিয়া উপজাতির বাস। শ্রীধন্যা সেই উপজাতি সম্প্রদায়ের।
বাবা দিনমজুরের কাজ করতেন। মা মনরেগার সুবাদে একটি কাজ জুটিয়েছিলেন। দিন আনা দিন খাওয়া, অভাবের সংসারে বেড়ে উঠেছেন শ্রীধন্যা। সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলের পড়া শেষ করে প্রাণীবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হন। উচ্চশিক্ষার জন্য কোঝিকোড়ে চলে যান। সেখানে কালিকট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। স্নাতকোত্তর করতে করতেই সরকারি চাকরির চেষ্টা করেন। রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায় উন্নয়ন বিভাগে কেরানির চাকরিও পেয়ে যান। চাকরি করতে করতেই তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। ২০১৬ এবং ’১৭ সালে পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু পাশ করতে পারেননি। এর পর ২০১৮ সালে ফের ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। লিখিত পরীক্ষায় পাশও করেন তিনি।
পরীক্ষায় পাশ করার খবর পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শ্রীধন্যার পরিবার। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তাঁদের সেই আনন্দ যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল। এক সাক্ষাৎকারে শ্রীধন্যা বলেন, “পরীক্ষায় তো পাশ করেছিলাম, কিন্তু দিল্লিতে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য ভাড়ার টাকা ছিল না। বন্ধুরা যখন জানতে পারে, ওঁরাই ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy