আদিবাসী প্রৌঢ়ার দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে তেতে উঠল ওড়িশার মালকানগিরি জেলার একাংশ। সেখানকার এমভি-২৬ গ্রামে অন্তত ৫০টি বাড়িতে অগ্নি-সংযোগ, লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে সোমবার ওড়িশা বিধানসভায় বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আজ, মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
করকুণ্ডা সদর থানার অন্তর্গত রাখালগুডা গ্রামের বাসিন্দা লেকা পদিয়ামি (৫১) নামে এক প্রৌঢ়ার মুন্ডুহীন দেহ নদীর ধার থেকে উদ্ধারকে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত। রাখালগুডার বাসিন্দাদের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত এমভি-২৬ গ্রামের তিন জন। প্রসঙ্গত, এমভি-২৬ গ্রামে রয়েছেন মূলত ’৬০-’৭০-এর দশকে ওড়িশায় আসা উদ্বাস্তু বাঙালিরা। দেহ উদ্ধারের পরে কয়েক দফায় এমভি-২৬ গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িতে অগ্নি-সংযোগ, লুটপাট, যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা সত্যজিৎ হালদারের অভিযোগ, “পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও বাড়িতে-বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। নেপথ্যে রাজনৈতিক রংও আছে। গ্রাম পুরুষ-শূন্য। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে সমস্যার সমাধান হোক।”
অশান্তির ঘটনাকে সামনে রেখে এ দিন বিধানসভায় ‘জ়িরো আওয়ারে’ মহিলার দেহ উদ্ধার সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিত্রকোন্ডার কংগ্রেস বিধায়ক মঙ্গু খিল্লা। পাশাপাশি, আউলের বিজেডি বিধায়ক প্রতাপকেশরী দেব সামগ্রিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন। ওড়িশা পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম রেঞ্জের ডিআইজি কনওয়ার বিশাল সিংহ, মালকানগিরির জেলাশাসক সোমেশকুমার উপাধ্যায়, পুলিশ সুপার বিনোদ পাটিল ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষকে নিয়ে শান্তি বৈঠক করেছেন। মলকানগিরির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজকিশোর দাস জানিয়েছেন, ওড়িশা পুলিশ ও বিএসএফ-এর অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। দমকল ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দলও এলাকায় রয়েছে। দেহ উদ্ধারের ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট দুই গ্রামের আশপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দেহ উদ্ধারের ঘটনার নেপথ্যে জমি সংক্রান্ত কোনও বিবাদ থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মালকানগিরি (শহর) বাঙালি সমাজের সভাপতি দিলীপ দাস বলেছেন, “আমরা শান্তি চাইছি। ওড়িশা সরকারের উপরে আস্থা রাখছি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)