Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মূর্তি না, ওটা আমাদের কবর! ফুঁসছে নর্মদার আদিবাসীরা

ফোনের ওপার থেকেই আঁচ মিলল ক্ষোভের, ‘‘বল্লভভাই পটেলের মূর্তি বানিয়ে আদিবাসীদের কবর খোঁড়া হয়েছে। উনিশের ভোটে শুধু গুজরাত নয় দেশের সমস্ত আদিবাসী বলয় এর জবাব দেবে।’’ 

গুজরাতে সর্দার পটেলের ‘বিশাল’ মূর্তি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

গুজরাতে সর্দার পটেলের ‘বিশাল’ মূর্তি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

অগ্নি রায় 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৫
Share: Save:

ফোনের ওপার থেকেই আঁচ মিলল ক্ষোভের, ‘‘বল্লভভাই পটেলের মূর্তি বানিয়ে আদিবাসীদের কবর খোঁড়া হয়েছে। উনিশের ভোটে শুধু গুজরাত নয় দেশের সমস্ত আদিবাসী বলয় এর জবাব দেবে।’’

নরেন্দ্র মোদীর বহুল বিজ্ঞাপিত বল্লভভাই পটেলের মূর্তির উন্মোচন ঘিরে নর্মদা জেলার আদিবাসী গ্রামগুলো এখনও ফুটছে। উত্তাল ভারুচ, সোনগাঁ, রাজপিপলা। ভারুচের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বাহাদুর ভাসাভাও বলছেন, ‘‘প্রথম এ রকম একটা সুযোগ এসেছে আদিবাসীদের একজোট হওয়ার। গুজরাত তো বটেই, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান যেখানে যত আদিবাসী গ্রাম রয়েছে, সেখান থেকে আরএসএস বিজেপি-র সব ধ্যানধারণাকে আমরা নির্মূল করে দেব। এই ঘটনাটা দেশলাইয়ের কাজ করছে!’’ বাহাদুর ভাসাভাও বলেন, ‘‘রাস্তায় নামার জোরদার পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যেখানে যেখানে আমাদের জমিজায়গা ধ্বংস করে মোদী সরকার প্রকল্প করছে, বাঁধ দিচ্ছে, নদী সংযোগ করছে, ‘আদিবাসী বাঁচাও’য়ের নাম করে সেখানে গিয়ে আমরা জনআন্দোলন করব।’’

গত কাল মোদী যখন পটেল মূর্তির উন্মোচন করছেন, তখন নর্মদা লাগোয়া ৭৩টি গ্রাম পালন করেছে অরন্ধন। কালো বেলুন উড়িয়ে, টায়ার পুড়িয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ একাধিক— সর্দার সরোবর বাঁধ নির্মাণের জন্য যে সব গ্রামবাসীকে উৎখাত করা হয়েছে, তাঁরা ঠিক মতো পুনর্বাসন পাননি। কেউ জমি পাননি। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদেরও অনেকেরই জুটেছে অনুর্বর জমি। বাঁধের ৩ কিলোমিটার দূরে মূর্তি গড়ার জন্য শতাব্দীপ্রাচীন বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাঁদের জমি-রুটি কেড়ে যে ভাবে নর্মদাকে বিলাসবহুল ‘তাঁবুর শহর’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, তা মানতে পারছেন না আদিবাসী নেতারা। প্রফুল্ল ভাসাভাও বলছেন, ‘‘গুজরাতের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতে ৩ হাজার কোটি টাকার মূর্তি একটা নির্মম তামাসা ছাড়া কিছু নয়। আমরা সর্দার পটেলের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালও চাই।’’

আরও পড়ুন: মোদীর মুঠোই আলগা হচ্ছে কি

স্থানীয় সূত্রের খবর, কেবাড়িয়া গ্রামের ২০০টি পরিবারকে এই মূর্তি নিয়ে মহাযজ্ঞের জন্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের এক সদস্য প্রফুল্ল বলেন, ‘‘আমাদের অনেককেই টাকা অথবা জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিজের বাপ-দাদার ভিটে কি টাকার মূল্যে ছাড়া যায়?’’

গত বছর গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে ছোটুভাই ভাসাভাও-এর নেতৃত্বাধীন ‘ভিলিস্তান টাইগার সেনা’ জোট করেছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। এ বারে তাদের সঙ্গে সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ‘ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি’, আদিবাসী একতা পরিষদ এবং আরও কয়েকটি আদিবাসী সংগঠন। জিগ্নেশ মেবাণীও রয়েছেন। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এই নেতারা। বাহাদুর ভাসাভাও বলছেন, ‘‘আমি নিজে নীতীশ কুমারের জেডি (ইউ) থেকে জিতেছিলাম। কিন্তু নীতীশ নিজেই পাল্টি খেয়েছেন! ফলে এরপর আমি বা আমাদের আদিবাসী সহযোদ্ধাদের কেউ আর তাঁর সঙ্গে থাকব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Patel Statue Narmada Tribals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE