Advertisement
E-Paper

তিন তালাক: পাঁচ নারী, হাতে তরবারি

শায়রা বানো, ইশরাত জাহান, আতিয়া সাবরি, গুলশন পারভিন ও আরফিন রহমান। এই ৫ মহিলার লড়াই আজ আরও বহু বহু মহিলার জীবনযুদ্ধকে কিছুটা সহজ করে দিল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ২০:০২
শায়রা বানো, ইশরত জাহান ও গুলশন পরভিন (বাঁ দিক থেকে)

শায়রা বানো, ইশরত জাহান ও গুলশন পরভিন (বাঁ দিক থেকে)

সেই ৫ মহিলার গল্প। যাঁরা স্বামীর দেওয়া তিন তালাকের শিকার হয়েছিলেন। কখনও টেলিফোনে, কখনও বা চিঠিতে বা হোয়াটসঅ্যাপে অথবা স্পিড পোস্টে। তার পর দীর্ঘ দিন ধরে যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে হতে তাঁরা কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন, আদালতে। সেই ৫ মহিলার লড়াই আজ আরও বহু বহু মহিলার জীবনযুদ্ধকে কিছুটা সহজ করে দিল।

শায়রা বানো, ইশরাত জাহান, আতিয়া সাবরি, গুলশন পারভিন ও আরফিন রহমান।

উত্তরাখণ্ডের উধমসিংহ নগর জেলার কাশীপুরে বাড়ি শায়রা বানোর। ২০০২ সালে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ইলাহাবাদের এক প্রোমোটার রিজওয়ান আহমেদের সঙ্গে। বিয়ের ১৩ বছরের মাথায় স্পিড পোস্টে শায়রাকে ‘তালাকনামা’ পাঠিয়ে দেন তাঁর স্বামী। সোশিওলজির পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ৩৬ বছর বয়সী শায়রার দু’টি সন্তান। ১৪ বছরের একটি ছেলে আর ১২ বছরের একটি মেয়ে। দুই ছেলেমেয়েকেও পরে তাঁর কাছে নিয়ে যান রিজওয়ান। শায়রাকে একলা ফেলে রেখে। শায়রার অভিযোগ, স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাঁকে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। তাঁকে গর্ভনিরোধক ওষুধ খাইয়ে তাঁরা ৬ বার গর্ভপাত করাতেও বাধ্য করেছিলেন। অত বার গর্ভপাত করানোর ফলে তাঁর শরীর ভেঙে পড়েছিল। তার পরেই আদালতের দ্বারস্থ হন শায়রা। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর শায়রা বলেছেন, ‘‘আমি খুব খুশি। আমি তো মুক্ত হলামই, বহু মহিলাও এ বার বেঁচে যাবেন।’’ ৫ মহিলার মধ্যে শায়রাই প্রথম গিয়েছিলেন আদালতে।

আরও পড়ুন- তিন তালাক সংবিধান বিরোধী, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট

আরও পড়ুন- রায়কে স্বাগত জানাল বিজেপি, মোদীকে ধন্যবাদ জানালেন অমিত শাহ

রাজস্থানের জয়পুরে বাড়ি ২৬ বছর বয়সী আফরিন রেহমানের। দেখাশোনা করেই ২০১৪ সালে বিয়ে হয় আফরিনের। ইনদওরের বাসিন্দা সৈয়দ আশার আলি ওয়ারসির। তাঁর অভিযোগ, বিয়ের ২/৩ মাস পর থেকেই পণের দাবিতে তাঁর ওপর মানসিক অত্যাচার শুরু করেন তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজন। সহ্য করতে না পেরে বাবা, মায়ের কাছে ফিরে যান আফরিন। গত বছরের ২৭ জানুয়ারি আফরিনকে স্পিড পোস্টে একটি চিঠি পাঠান তাঁর স্বামী। তাতে লেখা ছিল ‘তিন তালাক’। আফরিনের অভিযোগ, স্বামীর ওই চিঠি আসার পর তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাড়িয়ে দেন। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আফরিন বলেছেন, ‘‘মুসলিম পার্সোনেল ল’ বোর্ড এখনও সময়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আমি ওঁদের বিরোধিতা করছি না। শুধু বলব, ওঁরা এ বার নিজেদের একটু বদলে নিন।’’

উত্তরপ্রদেশের রামপুরে বাড়ি ৩১ বছরের গলশন পরভিনের। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিয়ে হয় পরভিনের। অভিযোগ, তার পর থেকে টানা দু’বছর পণের দাবিতে তিনি গার্হ্যস্থ হিংসার শিকার হন। ২০১৫ সালে তিনি বাবা, মায়ের কাছে ফিরে গেলে তাঁর স্বামী ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তাঁকে ‘তালাকনামা’ পাঠিয়ে দেন। পরভিন তা নিতে অস্বীকার করলে তাঁর স্বামী ওই ‘তালাকনামা’র ভিত্তিতে রামপুর পারিবারিক আদালতকে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার আর্জি জানান। দু’বছরের একটি ছেলে রয়েছে গুলশনের।

আরও পড়ুন- সাবানেও ‘বর্ণবিদ্বেষ’!

হাওড়ায় বাড়ি ইশরত জাহানের। ৪ সন্তানের জননী ইশরতের বয়স এখন ৩১। বিয়ের ১৫ বছর পর, ২০১৫ সালের এপ্রিলে দুবাই থেকে ফোন করে ইশরতকে ‘তিন তালাক’ দেন তাঁর স্বামী। ইশরতের অভিযোগ, তাঁর ৪ ছেলেমেয়েকে কেড়ে নিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তার পর ইশরতের স্বামী গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে আরেকটা বিয়ে করেন। তালাক দেওয়ার আগে ৩ বছর ধরে তাঁকে কোনও টাকা পাঠাননি ইশরতের স্বামী। এমনকী, শ্বশুর বাড়িতে যে ঘরটিতে তিনি থাকতেন, সেই ঘরের বৈদ্যুতিক সংযোগও ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে বাড়ি আতিয়া সাবরির। ২ সন্তানের মা। আতিয়ার বিয়ে হয় ২০১২ সালে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সাহারানপুরের মহিলা থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। ৩০ বছর বয়সী আতিয়ার অভিযোগ ছিল, তাঁর বাবা-মায়ের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা পণ দাবি করেন তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজন। টাকা দিতে না-পারায় তাঁর উপর অত্যাচার চালানো হয়। তার পর এক টুকরো কাগজে তাঁকে তিন তালাক লিখে দেন তাঁর স্বামী। আতিয়ার কথায়, ‘‘আমি বিবাহবিচ্ছেদের বিরোধী নই। কিন্তু চাই, তা দু’পক্ষের সম্মতিতেই হোক। আমি এক সময় বিষ খেয়ে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিলাম। আজ আমি খুশি। আমার মেয়েদের আর এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না।’’

Triple Talaq Supreme Court Shayara Bano Ishrat Jahan Atiya Sabri Gulshan Parveen Aafreen Rehman শায়রা বানো
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy