দীপাবলির আগে এক দিকে রোশনাই, অন্য দিকে অন্ধকার।
বৃহস্পতিবার ধনতেরাসের আগের দিন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২% মহার্ঘভাতা (ডিএ) ঘোষণা করল দিল্লি। একই দিনে ষষ্ঠ রাজ্য বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার নবান্নের কাছে কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার সময়সীমা আরও এক বছর বাড়ানোর আর্জি জানালেন। এটা জানার পরেই নবান্ন-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অনেকেই বলেন, ‘‘মেলা-খেলা-উৎসবে সরকারের টাকার অভাব হয় না। শুধু কর্মীদের পাওনা দেওয়ার সময়ে কান্নাকাটি।’’ তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ছ’মাসে বেতন কমিশন সুপারিশ জমা দেবে বলে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার কী হল?’’
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়ে দেন, ২% মহার্ঘভাতা বৃদ্ধিতে প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৫৮ লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হবেন। এই ২% বৃদ্ধি আসলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনের তুলনায় প্রায় ৬% বলে মনে করছেন কর্মচারীং নেতারা। তাঁদের যুক্তি, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের নতুন বেতনক্রমে আগের বর্ধিত ডিএ-কে বেসিকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার জেরে রাজ্যের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি বেতন পান কেন্দ্রীয় কর্মীরা। ফলে, কেন্দ্রের এক কিস্তি ডিএ বৃদ্ধির অর্থ রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের ডিএ-র ফারাক ৫০% থেকে বেড়ে ৫৬% হওয়া।
ডিএ বকেয়ার তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ প্রথম। তথ্য বলছে, গত মার্চে কেন্দ্র যখন ৬% ডিএ ঘোষণা করে, তখন কেন্দ্রের সঙ্গে বিহার, ওড়িশা, গুজরাত, কেরল, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর মতো ১৫টি রাজ্যের ডিএ বকেয়া ছিল ৬%। আর পঞ্জাব, মহারাষ্ট্রের মতো কিছু রাজ্য ১২% পিছিয়ে ছিল। সাত মাসে অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের ডিএ-র ফারাক কমলেও পশ্চিমবঙ্গে একই থেকেছে।
অথচ কেন্দ্রের সঙ্গে বেতনক্রমের ফারাক কমাতে গত বছর ২৬ নভেম্বর ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠন করে রাজ্য। তখন বলা হয়েছিল, ছ’মাসের মধ্যে কমিশন সুপারিশ জমা দেবে। কিন্তু আট মাস পরে দেখা যায়, কমিশনের কাজের জন্য শুধু একটা অফিস বরাদ্দ করেছে নবান্ন। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের কাছে আরও এক বছর সময় চেয়েছেন অভিরূপবাবু। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কমিশনের শুনানি শেষ হয়নি। তাই সময়সীমা বৃদ্ধির আর্জি জানিয়েছি।’’
নবান্ন কর্তাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, বেতন কমিশনের সুপারিশ যে ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে জমা পড়বে না, তা ঠিকই ছিল। সে কারণেই এ বারের বাজেটে আলাদা করে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ মানতে বেতন খাতে
৫৮.৯২% এবং পেনশন খাতে ৪৬.৮৭% খরচ বেড়েছিল। তা সামাল দিতে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বাজার থেকে অতিরিক্ত প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন।
সরকারি কর্তারা বলছেন, দশ বছর আগে করা সেই ঋণের আসল শোধ করা শুরু হবে ২০১৭-১৮ থেকে। আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যকে গড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা করে দেনা শোধ করতে হবে। ফলে রাজ্যের পক্ষে বাড়তি বোঝা নেওয়া সম্ভব নয়।
আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’-এর নেতা মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেতন কমিশন যত দেরি করবে, তত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সরকারি কর্মীরা।’’ সিপিএম প্রভাবিত কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা মনোজ গুহ বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকেই সব দফতরে বিক্ষোভ হবে। ১ ডিসেম্বর থেকে বেতন কমিশনের অফিস ঘেরাও করা হবে।’’
শাসক দলের কর্মী সংগঠন অবশ্য সরকারের উপরেই আস্থা রাখছে। আহ্বায়ক সৌম্য বিশ্বাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদের কথা ভাবেন। সে জন্য দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই সরকারি কর্মীদের অন্তর্বর্তীকালীন সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy