একের পর এক গন্ডার হত্যার জেরে জেরবার অসমের বনমন্ত্রী গত কাল রাতে নিজেই পিস্তল হাতে কাজিরাঙায় নৈশটহল দিলেন। আর তার জেরে কিনা জানা নেই, তবে আজ ভোরে বনরক্ষীদের হাতে মারা গেল দুই চোরাশিকারি। কিন্তু শিকারি মারার সাফল্য নিয়ে বড়াই করার জায়গায়, বন-আইন ভেঙে বনমন্ত্রীর সশস্ত্র রাত-টহলই আজ বন দফতরকে চরম অস্বস্তিতে ফেলল।
নানা পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও কাজিরাঙায় শিকারিদের সফল অভিযান চলছেই। গত কালও কোহরা রেঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয় এক খড়্গহীন গন্ডারের গুলিবিদ্ধ দেহ। এই নিয়ে চলতি বছরে ৮টি গন্ডার মারল শিকারিরা। চার দিক থেকে সমালোচনায় তিতিবিরক্ত বন মন্ত্রী এটোয়া মুন্ডা গত কাল বিকেলে নিজেই হাজির হন কাজিরাঙায়। উদ্যান অধিকর্তা এম কে যাদবকে জানান, তাঁকে নিয়ে নিজে নৈশটহলে বের হবেন। দেখবেন শিকারীদের আটকাতে রাতের নিরাপত্তা কেমন। রাত ১০টা নাগাদ যাদব ও অন্যান্য বনকর্তাদের নিয়ে মুন্ডা কোহরা রেঞ্জের জঙ্গলে ঢোকেন। তখন তাঁর হাতে ছিল একটি ৯ মিলিমিটার বোরের পিস্তল। বন দফতর সূত্রে খবর, সেটি উদ্যান অধিকর্তাই মন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা জঙ্গলে টহল দেন মুণ্ডা। এর কিছু পরেই, উদ্যানের বুড়াপাহাড় রেঞ্জে ঢোকে শিকারির দল। কিন্তু গন্ডার মারার আগেই বনরক্ষীরা তাদের দেখতে পায়। দু’পক্ষে গুলির লড়াইয়ে দুই শিকারির মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে মেলে .৩০৩ রাইফেল ও সাইলেন্সার।
আজ সকালে, শিকারি-প্রতিরোধের সাফল্য ঘোষণার পাশাপাশি, পিস্তল নিয়ে বনমন্ত্রীর একটি ভিডিও টিভিতে প্রচারিত হয়। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। বাহবার জায়গায় ফের সমালোচনায় জড়িয়ে পড়ে কাজিরাঙা কতৃর্পক্ষ। পশুপ্রেমীরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁদের দাবি, এ ভাবে রাতে অস্ত্র হাতে জাতীয় উদ্যানে ঢুকে আইন ভেঙেছেন বনমন্ত্রী স্বয়ং। বিপদে পড়ে বনকর্তারাও একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। সকলেরই বক্তব্য, আইনে কী রয়েছে তা নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন!
এনটিসিএ-র তরফে কামাল আজাদ বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইনে বনরক্ষী বা বনকর্তা ছাড়া অন্য কেউ অভয়ারণ্য বা জাতীয় উদ্যানে অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে পারেন না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ঘুম পাড়ানি গুলি ছোড়ার দরকার থাকলে, খুনে হাতি বা বাঘ মারার ব্যাপারে বনমন্ত্রকের অনুমতি এলে তবেই বাইরের বৈধ শিকারিরা বৈধ অস্ত্র নিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে পারেন। বনমন্ত্রী সাংবাধানিক দিক থেকে বন বিভাগের মাথা হলেও, আইনের দিক থেকে কিন্তু তিনি বন বিভাগের কর্মী নন। তাই তাঁর এই অধিকার নেই’’ যে রেঞ্জে এই ঘটনা, সেখানকার রেঞ্জার মুকুল তামুলি বলেন, ‘‘আমি অন্য গাড়িতে ছিলাম। তবে বিষয়টি শুনেছি। মন্ত্রী এ ভাবে পিস্তল নিয়ে বনে ঢুকতে পারেন কিনা তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। এ ব্যাপারে ডিএফও বলতে পারবেন।’’ কাজিরাঙার ডিএফও এস কে শীলশর্মার বক্তব্য, ‘‘আইন নিয়ে আমিও ঠিক নিশ্চিত নই।’’ তবে তিনি বনমন্ত্রী, বিভাগের প্রধান। তিনি হয়তো অস্ত্র নিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে পারেন। বনমন্ত্রীর কী বৈধ লাইসেন্স ছিল? শর্মা বলেন, ‘‘থাকতে পারে। আমি নিশ্চিত নই।’’
কী বলছেন কাজিরাঙার উদ্যান অধিকর্তা এম কে যাদব? তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে মন্তব্য করব না। মন্ত্রী আমার ঊর্দ্ধতন কর্তা। কোনও আইন ভঙ্গ হয়নি।’’ কিন্ত কাজিরাঙার এসিএফ, ফরেস্টাররা সাফ জানাচ্ছেন: আইন ভঙ্গ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রী মোটেই বন বিভাগের লোক নন। বহিরাগত কেউ লাইসেন্স থাকলেও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে পারে না। মন্ত্রী যদি অধিকর্তার ৯ মিলিমিটার বোরের পিস্তল নিয়ে ঢুকে থাকেন, সেটিও বেআইনি। কারণ, নিয়মানুযায়ী যে অস্ত্র যাঁর নামে ইস্যু করা হয়, তিনি ছাড়া ওই অস্ত্র অন্য কেউ বহন করতে পারে না।’’
পশুপ্রেমী সংগঠন নেচার্স বেকনের সভাপতি সৌম্যদীপ দত্ত ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘‘বনমন্ত্রী হয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে পিস্তল হাতে ক্ষমতা প্রদর্শন করে মুণ্ডা ঠিক করেননি। তাঁর পিস্তলের কী প্রয়োজন? মন্ত্রীদের সঙ্গে রক্ষী তো ছিলই।’’ বিতর্কের গাড্ডায় পড়ে বনমন্ত্রী নিজে অবশ্য আজ ফোনই ধরেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy