Advertisement
E-Paper

ব্রহ্মপুত্রে ডুবন্ত মা-পিসিকে বাঁচিয়ে হিরো এই কিশোর

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কমলকৃষ্ণ দাস সঙ্গে থাকা মা ও পিসিকে মজা করে বলেছিল, ‘‘যদি নৌকা ডুবে যায়, তোমরা শুধু মুখ বন্ধ রাখবে। জল গিলবে না। বাকিটা আমি দেখে নেব।’’

গুয়াহাটি

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪১
ত্রাতা: মায়ের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

ত্রাতা: মায়ের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

তার কথা যে এমন ‘ফলে’ যাবে তা ভাবেনি ১২ বছরের ছেলেটা। গুয়াহাটি থেকে ‘ব্রহ্মপুত্র’ নামের নৌকায় চেপে ব্রহ্মপুত্র পারাপারের জন্য রওনা হওয়ার সময়েই অন্য নৌকার মাঝিরা সতর্ক করেছিলেন, ও নৌকার ইঞ্জিন খারাপ! ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কমলকৃষ্ণ দাস সঙ্গে থাকা মা ও পিসিকে মজা করে বলেছিল, ‘‘যদি নৌকা ডুবে যায়, তোমরা শুধু মুখ বন্ধ রাখবে। জল গিলবে না। বাকিটা আমি দেখে নেব।’’

মিনিট দশেকের মধ্যেই অঘটন ঘটল। ব্রহ্মপুত্রের উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় টুকরো টুকরো হয়ে গেল নৌকা। আর সকলের সঙ্গে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কমলও। নিয়ম করে ব্রহ্মপুত্রের বুকে দাপাদাপি করা কিশোরের কাছে সাঁতরে পাড়ে চলে আসা কোনও ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু পাড়ে পৌঁছে সে দেখতে পায়, সাঁতার না জানা মা ও পিসি কোথাও নেই। মুহূর্তের মধ্যে ফের বর্ষায় ফুঁসতে থাকা ব্রহ্মপুত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে কমল। মা জিতুমণি দাসের হাতটা ভেসে ওঠে জলের উপরে। পলকে মায়ের হাতের বালা দেখে চিনতে পেরে মায়ের চুল ধরে টেনে তোলে সে। কোনও মতে জল প্রকল্পের নির্মীয়মাণ পিলারের বেদিতে তুলে দেয় মাকে। তত ক্ষণে পিসি মীনাক্ষী দাস নৌকোর ভাঙা কাঠ ধরে অনেক দূরে ভেসে গিয়েছেন। পিসিকে উদ্ধার করতে ফের জলে ঝাঁপায় সে। সেখানেই থামেনি। আরও এক মুসলিম মহিলা বাচ্চা কোলে ভেসে যাচ্ছিলেন। তাঁদেরও টেনে তোলে কমল। কিন্তু তার আক্ষেপ, ওই মহিলার হাত পিছলে বাচ্চাটি আবার জলে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে সেই মা ফের জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তীব্র স্রোতে ভেসে যায় মা-ছেলে দু’জনেই।

বেঁচে ফেরা মানুষদের মুখে মুখে কমলের বীরত্বের কথা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনার কথা কোনও ভাবে কানে যেতে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ টুইট করে তাঁর প্রশংসাও করেছেন। উত্তর গুয়াহাটির সেন্ট অ্যান্টনিজ স্কুলের ছাত্র কমলকে স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্ররা সম্বর্ধনা দিয়েছেন। কমলের কথায়, ‘‘আমি অনেক দিন থেকে সাঁতার শিখছি। তাই ফ্রি স্টাইল, ব্যাক স্ট্রোক, বাটারফ্লাই সবই রপ্ত। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর, ৩০ সেপ্টেম্বর সাঁতরে ব্রহ্মপুত্র এপার-ওপার করব বলে প্রতি রবিবার ও বুধবার মণিকর্ণেশ্বর ঘাট থেকে মধ্যমখণ্ড পর্যন্ত সাঁতার অনুশীলন করি। তাই সে দিন ভয় পাইনি।’’

Teenager Woman Drowning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy