Advertisement
E-Paper

ইউডিএফ বিধায়কের বিশ্বাস সর্বার উন্নয়নে

বিধায়ক হিসেবে প্রথম দিন থেকেই তিনি বিতর্কের কেন্দ্রে। বিধানসভায় অসমিয়া ভাষায় শপথ নিয়ে বরাকের বঙ্গপ্রেমীদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।

অমিত দাস

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪০

বিধায়ক হিসেবে প্রথম দিন থেকেই তিনি বিতর্কের কেন্দ্রে।

বিধানসভায় অসমিয়া ভাষায় শপথ নিয়ে বরাকের বঙ্গপ্রেমীদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে নিয়ে হাইলাকান্দির জলসম্পদ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে আরেক দফা বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। আর বিধায়ক হিসেবে এক মাসের মাথায় নাগরিকদের কাছে পরামর্শ চাইতে সভা ডেকে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন হাইলাকান্দির এআইইউডিএফ বিধায়ক আনোয়ার হুসেন লস্কর। পরিচিতজনদের বাচ্চুবাবু। এক সময় জলসম্পদ বিভাগে চাকরি করতেন। ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী গৌতম রায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আর সেই সুবাদে এক সময় ঠিকাদারিও করেছেন চুটিয়ে।

বিভিন্ন কারণে এক সময় গৌতম রায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এআইইউডিএফ সুপ্রিমো বদরউদ্দিন আজমলের কাছাকাছি আসেন। সেই সূত্রেই পেয়েছিলেন দলের মনোনয়ন। আর তখন থেকেই চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি রাজনীতিক বাচ্চুবাবু। এও অবশ্য সহজ ব্যাপার ছিল না। মনোনয়ন পাওয়া নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি হাইলাকান্দিতে। দলের একাংশ তাঁর প্রার্থী পদের বিরোধিতা করেছিলেন। দলে বিক্ষোভও দানা বেঁধেছিল। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন কর্মীদের একাংশ। শুধু তাই নয়, তাঁরা হাইলাকান্দি জেলা এআইইউডিএফ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে জ্বালিয়ে দেন দলীয় সাইনবোর্ড। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, টাকার বিনিময়ে টিকিট সংগ্রহ করেছেন।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে আনোয়ার হুসেন লস্কর হাইলাকান্দি আসনের বিধায়ক নির্বাচিত হন। এখন এই যুব বিধায়কের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? কি ভাবে কাজ করতে চান তিনি? দল, রাজনীতি না জনগণ—কোন বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবেন তিনি? সে সব নিয়ে একান্তে কথা বললেন হাইলাকান্দির বাচ্চুবাবু। তাঁর কথাবার্তায় পরিবর্তনের সুর। রাজ্যবাসীর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনিও চান পরিবর্তন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ব্যবস্থা হওয়া চাই, যেখানে সিন্ডিকেট থাকবে না। সরকারি দফতরে কথায় কথায় ঘুষ দিতে হবে না। হাতেগোনা দু-চারজন ঠিকাদারের কব্জায় গচ্ছিত থাকবে না সরকারি দফতর। প্রশাসন চলবে জনগণের স্বার্থে। জলের পাইপে বিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়া যাবে। হাসপাতালে দরিদ্র রোগী চিকিৎসা পাবে।’’

তাঁর কথায়, ‘‘তবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ভাষণ দেওয়া সহজ। কিন্তু বিধায়ক হয়ে হিসেব করে কথা বলতে হয়। আগে লাগামহীন ছিলাম, এখন নিয়মনীতির ঘেরাটোপে। অনেক রকমের বাধ্যবাধকতার মধ্য দিয়ে চলতে হয়।’’ চান কাজের মাধ্যমেই পরিবর্তন আনতে। তাঁর বক্তব্য, এতদিনের অপশাসনে হাইলাকান্দিতে ‘ব্যবস্থা’ বলে কিছুই অবশিষ্ট নেই।কটাক্ষ করেন তাঁর একদা ‘মেন্টর’ গৌতম রায়কেই, ‘‘পরিবারতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়ে গিয়েছিল জেলায়। ব্যক্তির কথা আইনে পরিণত হয়েছিল। এখন ওসব চলবে না। প্রথমেজঞ্জাল সাফ করতে হবে। তারপর একে একে সমস্যার পাহাড় ঠেলে উন্নয়নের কাজে হাত দিতে হবে।’’

সমাজে শৃঙ্খলা থাকলেই উন্নয়ন আসবে বলে মনে করেন আনোয়ার। এআইইউডিএফ বিধায়ক হয়েও আনোয়ারের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল সবাইকে নিয়ে যে পরিবর্তন আনতে চান আমি সেই পরিবর্তনের পক্ষে।’’ উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি যে রাজনীতির পক্ষপাতী নন তাও সাফ জানিয়ে দিলেন বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘আমি সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। আর তাই নাগরিক সভা ডেকে সকলের পরামর্শ চেয়েছি। আমার বিশ্বাস, হাইলাকান্দির মানুষ আমার সঙ্গে আছেন। আমি সবাইকে নিয়ে উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারব।’’

এক মাসের অভিজ্ঞতায় তাঁর উপলব্ধি, হাইলাকান্দির প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যার পাহাড় জমে আছে। এই পাহাড় সরিয়ে কাজ করা তাঁর একার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চান বিধায়ক আনোয়ার হুসেন লস্কর। বিধায়ক হয়েই যে কারণে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বাচ্চুবাবু, সে প্রসঙ্গ টানতেই হয়, বাঙালি বিধায়ক হয়ে কেন অসমিয়া ভাষায় শপথ নিলেন? আনোয়ারের দাবি, ‘‘বাঙালি হিসাবে আমি গর্বিত। আমার ভাষা-সংস্কৃতি আমার কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার।’’ এরপরই নিজের যুক্তি, ‘‘বরাকের বাঙালি হিসেবেই অসমিয়া ভাষাকে সম্মান জানিয়ে অসমিয়া ভাষায় শপথবাক্য পাঠ করেছি। এতে দোষের কী!’’

UDF MLA Hussain laskar sarbananda sonowal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy