Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Union Budget 2022-23

Union Budget 2022-23: জোর ডিজিটাল শিক্ষায়, শঙ্কা বৈষম্যের

‘ওয়ান ক্লাস-ওয়ান চ্যানেল’ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা পড়াশোনা করতে পারবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মধুমিতা দত্ত ও আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৮
Share: Save:

গ্রামপ্রধান ভারতের অধিকাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ এখনও সুলভ বা মসৃণ নয়। এই অবস্থায় এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে ডিজিটাল শিক্ষায় জোর দেওয়ায় শিক্ষা-সহ বিভিন্ন শিবিরে প্রশ্ন ও বিতর্ক জোরদার হয়ে উঠেছে। করোনাকালে অধিকাংশ গ্রামীণ পড়ুয়া অনলাইন-পাঠের সুযোগ নিতে না-পারায় যে-ডিজিটাল ডিভাইড’ বা ডিজিটাল বিভাজন প্রকট হয়েছে, পাকাপাকি ডিজিটাল শিক্ষা সরস্বতীর প্রসাদ নিয়ে সেই বৈষম্যের পথ আরও প্রশস্ত করবে বলে অভিযোগ শিক্ষা মহলের।

ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ই-বিদ্যা কর্মসূচি যাতে আরও বেশি পড়ুয়ার কাছে পৌঁছতে পারে, সেই বিষয়ে উদ্যোগের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে এ বারের বাজেটে। মঙ্গলবার বাজেট-ভাষণে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, করোনায় স্কুলপড়ুয়াদের পড়াশোনার যে-ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণের লক্ষ্যে ২০০টিরও বেশি টিভি চ্যানেলের ব্যবস্থা হবে। ‘ওয়ান ক্লাস-ওয়ান চ্যানেল’ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা ওই চ্যানেল ব্যবহার করে পড়াশোনা করতে পারবে।

অর্থমন্ত্রী জানান, অনলাইনে পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে পড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে শিক্ষকদের। বিশ্ব মানের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে গুজরাত ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স টেক সিটি (গিফট সিটি)-তে অভ্যন্তরীণ বিধিনিষেধ ছাড়াই পাঠ্যক্রম চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে। ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গণিত এবং ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, ফিনান্সিয়াল টেকনোলজির পাঠ্যক্রম চালাতে পারবে। সেই সঙ্গে পাঠ্যক্রম পুনর্বিন্যাসে জোর দিতে বলা হবে বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে।

বাজেটে সীতারামনের এই সব ঘোষণা নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। পশ্চিমবঙ্গের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে-সব পড়ুয়া অতিমারিতে অফলাইন বা অনলাইন, কোনও রকম শিক্ষা না-পেয়ে ‘ড্রপ আউট’ হয়ে গিয়েছে, তাদের কী করে স্কুলে ফেরাতে হবে, সেই বিষয়ে এই বাজেট কোনও দিশা দেখাতে পারেনি। ডিজিটাইজ়ড শিক্ষাকে আরও প্রসারিত করতে গিয়ে পড়ুয়ারা আরও বেশি ‘ডিজিটাল ডিভাইড’-এর শিকার হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, বিতর্কিত জাতীয় শিক্ষানীতিকে বাস্তবায়িত করা ছাড়া এই বাজেটে শিক্ষা নিয়ে আর কোনও ভাবনার ছাপ নেই। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্করও এ দিনের বাজেটে শিক্ষা সংক্রান্ত ঘোষণার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ বারের বাজেটে জাতীয় শিক্ষানীতির আদলে গোটা শিক্ষাকে অনলাইন-নির্ভর করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষণ, ৭৫০ ভার্চুয়াল পরীক্ষাগার, টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের প্রস্তাব তারই প্রমাণ।’’ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে গিফট সিটিতে ডেকে আনা জাতীয় শিক্ষানীতিরই অঙ্গ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়কের অভিযোগ, স্কুলছুটদের কী ভাবে আবার শিক্ষার মূল স্রোতে যুক্ত করা যায়, বাজেটে তার কোনও উল্লেখই নেই। ‘‘আসলে আন্তর্জাতিক শিক্ষা-ব্যবসায়ীদের জন্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে খুলে দেওয়া হচ্ছে। সরকার আসলে এই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র কথা বলে বড় বড় ধনকুবের কর্পোরেটদের হাতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে,’’ বলেন মণিশঙ্করবাবু।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “এক দিকে বিশ্ব মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হচ্ছে, অন্য দিকে আটকে দেওয়া হচ্ছে গবেষণার টাকা। সেই সঙ্গে ডিজিটাল শিক্ষার কথা বলে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রান্তিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের বার করে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’

নিখিল বঙ্গ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের বক্তব্য, শিক্ষা বিষয়ক চ্যানেল পড়ুয়াদের কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রত্যন্ত এলাকায় অনেকের বাড়িতে টিভি নেই। চ্যানেলটা কেব্ল চ্যানেল হলে সকলে কাছে তা না-ও পৌঁছতে পারে। ‘‘তার থেকে বরং রেডিয়োয় শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা অনেক বেশি ফলপ্রসূ। তাতে অনেক বেশি পড়ুয়া উপকৃত হবে,” বলেন সুকুমারবাবু। শিক্ষক-নেতা তথা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নবকুমার কর্মকারও মনে করেন, “শিক্ষামূলক চ্যানেল সব ধরনের পড়ুয়ার কাছে পৌঁছবে না। অফলাইনে কী ভাবে পড়াশোনার প্রসার এবং শিক্ষাদানের পরিকাঠামো আরও বাড়ানো যায়, বাজেটে তাতে জোর দিলে ভাল হত।”

পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর বক্তব্য, শিক্ষার জন্য আলাদা চ্যানেল করে লাভ হবে না। বরং স্কুলের একটি ঘরকে পুরোপুরি ডিজিটাল মোডে পরিবর্তন করে সেখানে হাইস্পিড ইন্টারনেট, একাধিক কম্পিউটার রেখে পড়ুয়াদের আগামী বিশ্বের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির সঙ্গে পরিচয় করাতে পারলে ভাল হয়। পড়ুয়ারা তাদের সময়মতো সেই ডিজিটাল ক্লাসরুমে ঢুকে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে নিতে পারবে। সেই খাতে অর্থ বরাদ্দ করলে ভাল হত।

এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, ‘‘শিক্ষাকে সর্বজনীন ও সুলভ করার কোনও কথা এই বাজেটে নেই। কেন? সরকার কি মনে করে, কোভিডের সময় প্রতিটি শিশুর শিক্ষার সুযোগ হয়েছিল? এই সময়ে ই-বিশ্ববিদ্যালয় সোনার পাথরবাটি ছাড়া কিছু নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE