করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ় প্রদানে গতি আনতে আগামিকাল দিল্লিতে দেশের সব রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া।
দেশে এখন পর্যন্ত টিকাকরণ হয়েছে প্রায় ১০৩.৫০ কোটি। যার মধ্যে প্রথম ডোজ় পেয়েছেন অন্তত ৭২.৩০ কোটি ও দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন ৩১.২৪ কোটি। অর্থাৎ, দেশের মোট প্রাপ্তবয়স্কের ২২ শতাংশ দুই ডোজ় পেয়েছেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সংখ্যাটি যে বেশ কম তা মেনে নিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাই টিকাকরণে গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কী ভাবে কাটানো যায়, তা নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাণ্ডবিয়া। আজ আয়ুষ্মান ভারত পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত সাংবাদিক বৈঠকের শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের কথা জানান তিনি।
কেন্দ্র ১০০ কোটির ডোজ় নিয়ে প্রচারের ঢাক পেটালেও এখন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হল দ্বিতীয় ডোজ় প্রদানে গতি বাড়ানো। সম্প্রতি কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে জানিয়েছে, প্রথম ডোজ় নেওয়ার পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেকে দ্বিতীয় ডোজ় নিচ্ছেন না।
এই অনীহা কাটাতে সচেতনতা বাড়ানোর উপরে রাজ্যগুলিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে বলা হয়েছে। উপরন্তু উৎসবের মরসুমে টিকা দেওয়ার হার নিম্নমুখী। আগামী দিনে তা কী ভাবে বাড়ানো সম্ভব— তা নিয়ে কালকের বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। সরকারের কাছে সমস্যা হল ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা মোট জনসংখ্যার মধ্যে অন্তত তিন কোটি মানুষ এখনও টিকার প্রথম ডোজ় নেননি। দ্বিতীয় ডোজ় বাকি অন্তত ৭.৫ কোটির।
কেন্দ্রের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ, প্রবীণদের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রশ্নে যে দ্বিধা রয়েছে তা কী ভাবে কাটানো কাটানো যায়। দেখা গিয়েছে, ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭ কোটি প্রথম ডোজ় ও ১৯ কোটি এখন দ্বিতীয় ডোজ় নেননি। করোনা রোখার প্রশ্নে ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের টিকাকরণের শুরু থেকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছে কেন্দ্র। কিন্তু টিকাকরণ শুরু হওয়ার ১০ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রবীণ জনসংখ্যার একটি বড় অংশ একটি ডোজ় না পাওয়া যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মনে করছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের হাতে যথেষ্ট প্রতিষেধক রয়েছে। রাজ্যগুলিকেও যথেষ্ট টিকা পাঠানো রয়েছে।’’
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক যেমন সংক্রমণ বাড়ছে, তেমনি টিকাকরণের প্রশ্নে অন্য রাজ্যের তুলনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বলেই মত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান বা তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলিতে যখন প্রথম দফা টিকাকরণে প্রায় আশি থেকে নব্বই শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ৭২.১ শতাংশ ব্যক্তি প্রথম দফার টিকা পেয়েছেন। দুটি ডোজ় পেয়েছেন মাত্র ২৭ শতাংশ মানুষ।
কেন্দ্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ-সহ কিছু রাজ্যে টিকাকরণের গতি আশানরূপ নয়। রাজ্যগুলি কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তা কাটাতে কী পদক্ষেপ করা উচিত তা নিয়ে আগামিকালের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার কথা।