সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে নয়াদিল্লির বার্তা দেশে দেশে পৌঁছে দেবে কেন্দ্রের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল। তারই সাত জন নেতার নাম শনিবার প্রকাশ করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সাতটি প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে থাকবেন শাসক-বিরোধী বিভিন্ন দলের সাংসদেরা। শনিবার কেন্দ্রের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে এই সাত জনের নাম প্রকাশ করেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের বিবৃতি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেন মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। সাতটি প্রতিনিধিদলের নেতাদের তালিকায় আছেন কংগ্রেসের শশী তারুর, বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ, জেডিইউয়ের সঞ্জয় কুমার ঝা, বিজেপির বৈজয়ন্ত পাণ্ডারা। এ ছাড়া, তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির কন্যা ডিএমকে-র কানিমোঝি করুণানিধি, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের পুত্র শিবসেনার শ্রীকান্ত শিন্ডেকে এই তালিকায় রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলের কোনও সাংসদ নেই। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কেন্দ্রের তরফে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রতিনিধিদলে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সুদীপ পিটিআইকে বলেন, ‘‘কিরেন রিজিজু আমাকে ফোন করেছিলেন। আমেরিকায় যেতে বলা হয়েছিল আমাকে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি যেতে পারছি না।’’
আরও পড়ুন:
-
পাকিস্তানের চাপ বাড়িয়ে এ বার চন্দ্রভাগার খাল সম্প্রসারণ করতে চলেছে ভারত! সিন্ধুচুক্তি স্থগিতের পর নতুন ‘অভিযান’
-
‘এন’ দিয়ে শুরু, এমন শব্দে পৌঁছে গিয়েছিল ভারত-পাক সংঘাত! দাবি ট্রাম্পের, কিসের কথা বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
-
‘মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার...’, রাত আড়াইটেয় পাক সেনাপ্রধানের ফোন! দাবি শরিফের, ভারতের হামলার পর কী কথা দু’জনের
কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অপারেশন সিঁদুরের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লাগাতার লড়াইয়ের আবহে চলতি মাসের শেষ দিকে সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশে ভারতের বার্তা পৌঁছে দিতে যাবে। যাওয়া হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলিতেও। যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থান প্রচার করবে এই দলগুলি। ভারত কোনও অবস্থানেই সন্ত্রাসবাদকে সহ্য করবে না, এ বিষয়ে ভারতের নীতি ‘জ়িরো টলারেন্স’, সেই বার্তাই দেবেন সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা।’’ কেন্দ্রের তৈরি এই প্রতিনিধিদলগুলিতে থাকবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদ, উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং কূটনীতিকেরা।
বিবৃতি প্রকাশ করে রিজিজু লিখেছেন, ‘‘যে সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজন, সেই সময়েই ভারত ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের বার্তা নিয়ে সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল শীঘ্রই যাত্রা শুরু করবে। রাজনীতির মতভেদের ঊর্ধ্বে এটি জাতীয় ঐক্যের একটি শক্তিশালী নিদর্শন।’’
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই ‘সিঁদুর’ অভিযানে। এর পর ভারত-পাক সংঘাত বেশ কিছু দিন স্থায়ী হয়েছিল। আপাতত সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এ বার সেই ‘সিঁদুর’ অভিযানের বার্তাই আন্তর্জাতিক মহলের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে চাইছে ভারত। আর সেই প্রচারের মুখ হিসাবে থাকছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সব দলকে এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করে মোক্ষম চাল চেলেছেন মোদী। এতে অন্যান্য দেশের সামনে যেমন ভারতের ঐক্য তুলে ধরা যাবে, তেমনই দেশের অন্দরেও বিরোধীদের সমালোচনার পথ বন্ধ করে দেওয়া যাবে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর কেন্দ্রের নীতির প্রশংসা করেছিলেন তারুর। তাঁকে নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তিনি যে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে থাকবেন, তা একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। এ বার বাকি ছ’জনের নামও প্রকাশ করা হল।