স্বস্তি পাওয়া দূরে থাক! উল্টে সিবিআইয়ের সক্রিয়তায় আশঙ্কা বেড়ে গেল!
নাবালিকাকে গণধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের সাজা স্থগিত ও জামিনে মুক্তির নির্দেশের বিরুদ্ধে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, ধর্ষণের শিকার নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবীরা চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাঁদের অভিযোগ, সিবিআই উল্টে কুলদীপ সেঙ্গারকে সুবিধা করে দিতে পারে।
উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে নাবালিকার গণধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়ার পরেও দিল্লি হাই কোর্ট দু’দিন আগে কুলদীপ সেঙ্গারের সাজা স্থগিত রেখে তাঁকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে। এই ঘটনায় দেশ জুড়ে ক্ষোভ ছড়ায়। নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা দিল্লি হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। বুধবার সন্ধ্যায় দশ জনপথে গিয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের লোকজন বড় কোনও আইনজীবীর সাহায্য চেয়েছিলেন। এর পরেই বুধবার রাতে সিবিআই জানিয়েছিল, দিল্লি হাই কোর্টের রায় খতিয়ে দেখে সিবিআই অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিবিআইয়ের এই পদক্ষেপেই স্বস্তির বদলে নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবীরা শঙ্কিত। বৃহস্পতিবার উন্নাওয়ের নির্যাতিতা প্রশ্ন তুলেছেন, “এতদিন সিবিআই কী করছিল? সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার দোষী কুলদীপ সেঙ্গারের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছিলেন। আমাদের সুপ্রিম কোর্টে আরও সতর্ক থাকতে হবে।” এ দিনই নির্যাতিতা তাঁর আইনজীবী মেহমুদ প্রাচার সঙ্গে দেখা করতে যান। বড়দিনের ছুটি থাকলেও প্রাচা তাঁর দফতরে পৌঁছে যান। প্রাচা বলেন, “সিবিআই যদি হারার ইচ্ছা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়, তা হলে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। তাই আমি ছুটির দিনে দফতরে ছুটে এসেছি। সিবিআই যাতে আগেই দোষীর সুবিধা করে দিতে কোনও রায় না আদায় করে নেয়, তার জন্য আমরা সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দায়ের করব। যাতে আমাদের বক্তব্য শুনে তবেই সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়।”
নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবীদের অভিযোগ, সিবিআই এর আগে কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির কঠিন ধারায় মামলা করেনি। সিবিআই সূত্রের অবশ্য দাবি, তাঁরাও হাই কোর্টে সেঙ্গারের জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু প্রাচার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তরপ্রদেশ সরকার সমস্ত শক্তি দিয়ে, বড় বড় আইনজীবীদের মাঠে নামিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে। এখন দিল্লি হাই কোর্ট বলছে, সেঙ্গার জামিন পেলেও নির্যাতিতার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে যেতে পারবেন না। সেঙ্গার তো পুলিশকে দিয়ে নির্যাতিতার বাবাকে পুলিশি হেফাজতে খুন করিয়েছিলেন। নির্যাতিতাতে গাড়ির মধ্যে ট্রাক চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন।
আজ উন্নাওয়ের নির্যাতিতা জানিয়েছেন, ওই দুর্ঘটনার পরে তাঁর শরীরে ২৫০টি সেলাই পড়েছিল। হাতে, পায়ে, শরীরের বহু জায়গায় ধাতুর রড বসাতে হয়েছে। তার পরেই হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া গেটের সামনে মৌন প্রতিবাদে বসায় দিল্লি পুলিশ তাঁকে টেনে হিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে পুলিশ ভ্যানে তুলেছে।
উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের মন্ত্রী, বিজেপির শরিক দলের নেতা ওমপ্রকাশ রাজভড় উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে বুধবার বলেছিলেন, উনি কেন উন্নাও থেকে দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসেছিলেন! বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ সরকারের পরিবহণ মন্ত্রী, বিজেপি নেতা দয়াশঙ্কর সিংহ দিল্লি হাই কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের এই নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এটাই বিজেপি শাসিত রাজ্যের ‘বেটি বচাও’-এর বাস্তবতা। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার রাজ্যসভার সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর কথায়, “বিলকিস বানোর ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের মুক্তি, মহিলা কুস্তিগিরদের অভিযোগ সত্ত্বেও ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়া এবংএখন কুলদীপ সেঙ্গারের জামিন—সব ক্ষেত্রেই একটা অভিন্ন বিষয় লক্ষ্যণীয়। তা হল, বিজেপিরসম্পূর্ণ নীরবতা। এক জনওপ্রতিবাদ করেননি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)