এ ভাবেই জেসিবি মেশিন চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে ফসল। —টুইটারের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি
জমি অধিগ্রহণ করেছিল রেল। তবে শর্ত ছিল, রবিশস্য তোলার পরে সেই জমিতে কাজ শুরু হবে। কিন্তু আচমকাই ফসল ‘ধ্বংস’ করতে জেসিবি মেশিন নিয়ে গ্রামে হাজির পুলিশ-প্রশাসন। কৃষকরা পায়ে ধরে কাকুতি মিনতি করেছেন। কিন্তু সে সবে কর্ণপাত না করে কার্যত ‘পাকা ধানে মই’ দিয়ে দিল যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন। জেসিবি মেশিন চালিয়ে ধ্বংস করা হল বিঘের পর বিঘে জমির ফসল। উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের এই ঘটনায় টুইট করে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর তোপ, ‘‘বিজেপির কৃষকবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট।’’ ক্ষোভে ফুঁসছেন চাষিরাও।
মির্জাপুরের বিভিন্ন মৌজায় বেশ কয়েক বছর আগে প্রচুর জমি অধিগ্রহণ করেছিল রেল। প্রায় ১০ হাজার কৃষক জমি দিয়েছিলেন। এত দিন পর্যন্ত সেই জমিতে কাজ শুরু করেনি রেল। সম্প্রতি তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ তৎপরতা শুরু করতেই স্থানীয় কৃষক সংগঠনগুলি রেলের সঙ্গে আলোচনায় বসে। তাতে সিদ্ধান্ত হয়, কৃষকরা রবিশস্য ঘরে তোলার পর ওই জমি ছেড়ে দেবেন। তার পর রেল কাজ শুরু করবে।
কিন্তু আচমকাই রবিবার বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় আসেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। পুলিশি প্রহরায় জেসিবি মেশিন দিয়ে ওই এলাকার জমির ফসল ধ্বংস করতে শুরু করেন তাঁরা। মাথার ঘাম ফেলে ধার দেনা করে বীজ-সার দিয়ে চাষ করা ফসল ঘরে তোলার মুখে প্রশাসনের এমন অমানবিক আচরণে মাথায় বাজ পড়ে চাষিদের। পুলিশ প্রশাসনের কর্তা-কর্মী যাঁকে সামনে পেয়েছেন, তাঁরই পায়ে পড়ে গিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই মহিলা। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি। মাঠের ফসল মাঠে মারা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্ভয়া: কাল ফাঁসি হচ্ছে না দণ্ডিতদের, স্থগিত অনির্দিষ্টকালের জন্য
জমি অধিগ্রহণের কথা অস্বীকার করছেন না চাষিরা। কিন্তু এখনও পরিবারের এক জনের চাকরি-সহ অনেক দাবিই মেটেনি। তবু এই মরসুমের ফসল ঘরে তোলার পরেই জমি ছেড়ে দিতে রাজি তাঁরা। কিন্তু প্রশাসন কোনও কথাই শুনতে নারাজ। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক ইউপি সিংহ বলেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কৃষকরা চাকরি-সহ নানা দাবি করছিলেন, যার কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। আর সেই দাবি তুলে স্থানীয়রা জমি ছাড়তে চাইছিলেন না। কৃষকরা একটি দাবিপত্র মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে দিয়েছেন। সেটাও আমরা নিয়েছি।’’
রবিবারের ওই ঘটনার ছবি-ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই তার নিন্দায় সরব হয়েছেন। কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে বিজেপি এবং যোগী সরকারকে আক্রমণ করেছেন। সোমবার টুইটারে ওই ভিডিয়ো শেয়ার করে ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার পাশাপাশি লিখেছেন, ‘‘গতকালই প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। মহিলা কৃষকদের সঙ্গে সরকার কী ব্যবহার করছে দেখুন। বিজেপি বরাবরই কৃষকবিরোধী।’’
শনিবারই প্রয়াগরাজে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ওই অনুষ্ঠানে ১০ হাজার কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী সংগঠনের সূচনা করেন মোদী ও যোগী। প্রিয়ঙ্কা সেই ঘটনার কথাই উল্লেখ করতে চেয়েছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের মত।
मिर्जापुर के किसानों ने मेहनत से अपनी फसल लगाई थी और भाजपा सरकार की पुलिस ने खड़ी फसल रौंद दी।
— Priyanka Gandhi Vadra (@priyankagandhi) March 2, 2020
कल मुख्यमंत्री और प्रधानमन्त्री ने किसानों के लिए खूब झूठे ऐलान किए और 24 घंटे भी नहीं बीते कि महिला किसानों के साथ सरकार का व्यवहार देखिए।
किसान विरोध भरा है भाजपा के अंदर। pic.twitter.com/WFEkWPAjzH
আরও পড়ুন: দিদিকে ‘বলে’ বিপদে, পুলিশের মার খেয়ে মমতারই শরণাপন্ন তরুণী
অধিগ্রহণের কথা জানিয়ে স্থানীয় কৃষক সংগঠন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা প্রহ্লাদ সিংহ বলেন, ‘‘কৃষকরা বাড়িতে ছিলেন। আচমকাই সরকারি আধিকারিকরা গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করতে শুরু করেন। চাষিরা তাঁদের পায়ে পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু ওঁদের টলানো যায়নি। আমরা ফসলের ক্ষতিপূরণ চাই। ২০১৯ সালের নভেম্বরে একটি চুক্তি হয়েছিল যে, ২০২০ সালে চাষিদের রবিশস্য ঘরে তোলার সুযোগ দিতে হবে। প্রায় ১ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত। জেলাশাসক কেন আমাদের সঙ্গে কথা বললেন না? কেন এই স্বেচ্ছাচারী আচরণ?’’
রবিশস্য প্রায় ঘরে তোলার মুখে। অনেকে তুলতে শুরুও করেছিলেন। মাত্র কয়েক দিন দেরি করে কেন গরিব চাষিদের সেই সুযোগ দেওয়া হল না? কেন আর কয়েক দিন অপেক্ষা করা গেল না? এ প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য ইউপি সিংহ বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’’ কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা কি আর ফেরত পাবেন চাষিরা? জবাব দেননি ওই সরকারি আমলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy