মিড ডে মিল নিয়ে অভিযোগ তো আকছারই ওঠে। রেলের খাবারের মান নিয়ে হইচইও রোজের ঘটনা। কিন্তু এ বার নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ উঠল খোদ সংসদে। তুললেন সাংসদরাই।
অভিযোগ, সংসদের পচা ও বাসি খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সাংসদরা। এমনকী, ওই খাবার খাওয়ার খেসারতে দু’-এক জন সাংসদকে ঘুরে আসতে হয়েছে হাসপাতালও। ফলে অন্যান্য বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, এই প্রশ্নে দলমত নির্বিশেষে আজ রাজ্যসভায় সরব হয়েছেন বিভিন্ন দলের সাংসদেরা। মিড ডে মিলে স্কুলপড়ুয়াদের নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখতে কার্যত নমো নমো করে তদন্ত কমিটি বসে। পচা খাবার পরিবেশনের অপরাধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার জরিমানা করেছে রেল মন্ত্রক, এমন উদাহরণও খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। কিন্তু সংসদের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই তড়িঘড়ি তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। রাজ্যসভার সতীর্থদের প্রতি তাঁর আশ্বাস, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান হবে।
সাংসদদের অভিযোগটি কী?
রাজ্যসভায় আজ এ নিয়ে প্রথম বিতর্ক উস্কে দেন জেডিইউ সাংসদ কে সি ত্যাগি। তাঁর অভিযোগ, সংসদের খাবার খেয়ে সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, জয়া বচ্চনের মতো সাংসদদের শরীর খারাপ হয়ে পড়েছিল। ত্যাগির বক্তব্য, “সংসদের খাবার খেয়ে রাম গোপাল যাদবের শরীর এতটাই খারাপ হয় যে তাঁকে চার-পাঁচ দিনের জন্য এইমস হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।” ভুক্তভোগী জয়া বচ্চনের কথায়, “বাজেট বিতর্কে দীর্ঘ ক্ষণ সংসদ চলায় সাংসদদের ওই খাবার খাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। আর তা খেতেই শরীর খারাপ।” এর আগে মহারাষ্ট্র সদনে খাবার নিয়ে হইচই করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন শিবসেনার সাংসদেরা। সেখানে খাবারের দায়িত্বে ছিল রেলের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি। এ বার সংসদে খারাপ খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে ওই সংস্থারই বিরুদ্ধে।
যদিও ২০১২ সাল পর্যন্ত সংসদের ক্যান্টিনে হাতে-গরম রান্না করা খাবার পরিবেশনের রীতি ছিল। তখন ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল উত্তর রেলওয়ে। কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সংসদে গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তৎকালীন স্পিকার মীরা কুমার। সিদ্ধান্ত হয়, সকাল-সকাল অন্য জায়গা থেকে রান্না করা খাবার সংসদে চলে আসবে। সারা দিন ধরে সেই খাবারই পরিবেশন করা হবে। সমস্যার সূত্রপাত তখন থেকেই। সংসদের খাদ্য বিষয়ক কমিটির প্রাক্তন সদস্য রাজীব শুক্ল বলেন, “সকাল ছ’টায় রান্না করা খাবার যদি সন্ধেবেলা পরিবেশন করা হয়, তা হলে সমস্যা তো হবেই।” তাঁর দাবি, “ফের সংসদে রান্না শুরু করার অনুমতি দেওয়া হোক।”
মান নিয়ে হইচইয়ের পাশাপাশি সংসদে খাবারের দাম ঘিরেও বিতর্কেরও কমতি নেই। সংসদের ক্যান্টিনে খাবারের দাম বাজার মূল্যের সিকিভাগও নয়। এক কাপ চা এক টাকা। রুটিও তাই। পাঁচ টাকায় চিকেন স্যুপ। ১৮ টাকায় নিরামিষ থালি। আর বিরিয়ানির দাম ৫০ টাকার মধ্যে। স্বভাবতই প্রতিদিন যে বিপুল সংখ্যক পাত পড়ে, তাতে ভাল অঙ্কের ভর্তুকি গুনতে হয় সরকারকে। সাংসদ ছাড়াও এর ফায়দা পান সাংবাদিক ও সংসদের কর্মীরা। ভর্তুকি নিয়ে বহু দিন ধরেই সরব বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সাংসদেরও একটি বড় অংশ ওই ভর্তুকির বিরুদ্ধে। তাই জনমতের চাপে পড়ে বছর দেড়েক আগে এক বার খাবারের দাম বাড়িয়েছিল সরকার। কিন্তু এখনও তা বাজারের তুলনায় অনেক কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy