Advertisement
E-Paper

পুজোর আগে কফিনে বাড়ি ফিরলেন নয়মন

পুজোয় ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে স্ত্রী, ছেলেকে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন নয়মন কুজুর। রাঁচিতে ফিরলেন পুজোর অনেক আগে, কফিনবন্দি হয়ে! ছবিটা এক রাঁচি-লাগোয়া খুঁটির মাতমেও।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
নিহত নয়মন কুজুরের ছবি নিয়ে মায়ের কোলে অভিনব। সোমবার  রাঁচির কোকরে।— নিজস্ব চিত্র

নিহত নয়মন কুজুরের ছবি নিয়ে মায়ের কোলে অভিনব। সোমবার রাঁচির কোকরে।— নিজস্ব চিত্র

পুজোয় ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে স্ত্রী, ছেলেকে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন নয়মন কুজুর। রাঁচিতে ফিরলেন পুজোর অনেক আগে, কফিনবন্দি হয়ে!

ছবিটা এক রাঁচি-লাগোয়া খুঁটির মাতমেও। বিহার রেজিমেন্টের জওয়ান জাভর মুন্ডার মৃত্যুর খবর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেই শুনলেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত স্ত্রী।

ভূস্বর্গের উরিতে জঙ্গি-সন্ত্রাসের আঁচ এ ভাবেই পৌঁছলো ঝাড়খণ্ডে।

অগস্টে বাড়িতে ফিরেছিলেন বছর তিরিশের নয়মন। পরিজনরা জানান, ছুটির মধ্যেই আচমকা ফোন আসে সেনা দফতর থেকে। নয়মনকে জানানো হয়, তাঁর বদলি হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে। ছুটি বাতিল করে সেখানে চলে যান নয়মন। স্ত্রী বীণাদেবীকে বলে যান, গত বার পুজোয় বাড়ি আসা হয়নি। এ বার ফিরবেনই।

আজ স্বামীর কফিনবন্দি দেহ বাড়িতে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বীণাদেবী। মুখে একটাই কথা— ‘‘বলেছিলাম কাশ্মীর অশান্ত। তোমার কী হবে! ও বলেছিল, ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু সবই তো ওলটপালট হয়ে গেল।’’

নয়মনদের আদি বাড়ি গুমলায়। কিন্তু এখন তাঁর পুরো পরিবার থাকে রাঁচিতেই। কোকরে টিনের চালের এক চিলতে ঘর। এ দিন সকাল থেকেই সেখানে ভিড় আত্মীয়-বন্ধু-পড়শিদের। চারপাশে কী হচ্ছে তা ঠিক মতো বুঝতে পারছিল না শহিদ জওয়ানের বছর দু’য়েকের ছেলে অভিনব। কেউ তার হাতে বাবার একটা ছবি দিয়েছিল। সেটা আঁকড়ে ধরে মায়ের কোলে গিয়ে বসল অভিনব। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বীণাদেবী জানালেন, শনিবার সন্ধেবেলাও স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। নয়মনের নৈশপ্রহরা ছিল সে দিন। বলেছিলেন, সকালে ফের ফোন করবেন।

গত কাল দুপুরে টেলিভিশনে উরিতে জঙ্গিহানার খবর শোনেন বীণাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘বারবার ওকে ফোন করছিলাম। কিছুতেই লাইন পাচ্ছিলাম না। ভেবেছিলাম নেটওয়ার্কে সমস্যা রয়েছে।’’ বিকেলে নয়মনের মোবাইল থেকেই ফোন আসে। ফোনের ওপারে ছিলেন নয়মনের এক সহকর্মী।

বীণাদেবীর পাশে বসেছিলেন নয়মনের মা সুশান্তি কুজুর। তিনি জানালেন, ৬ বিহার রেজিমেন্টে ছিলেন নয়মন। গত তিন বছর ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিনাগুড়িতে। বদলি হওয়ার পরে যেতে হয়েছিল কাশ্মীরে। শনিবার সকালে উরি পৌঁছন তিনি। সেনাবাহিনীর তরফে নয়মনের পরিবারকে জানানো হয়, রাত-প্রহরার পর সেনা-শিবিরের শৌচাগারে যাচ্ছিলেন নয়মন। তখনই জঙ্গিদের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যান। বীণাদেবী বলেন, ‘‘ও তো নিরস্ত্র ছিল। জঙ্গিরা কাপুরুষের মতো ওকে মারল। মুখোমুখি লড়াই হলে আমার স্বামী ১০ জনকে খতম করে দিত।’’

খুঁটি শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে মাতম গ্রাম। সেখানে বাড়ি জাভর মুন্ডার। তিনিও নয়মনের মতো ৬ বিহার রেজিমেন্টে ছিলেন। জাভরের স্ত্রী জাঙিদেবী ম্যালেরিয়ায় ভুগছিলেন। কয়েক দিন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। গত কাল বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পৌঁছয় তাঁর কাছে। তারপরই জ্ঞান হারান তিনি। বছর পঁয়ত্রিশের জাভরের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে সন্ধ্যা বলে, ‘‘বাবা বলেছিল শীতের সময় বাড়ি আসবে। বাবাকে যারা এ ভাবে মারল, তারা যেন শাস্তি পায়।’’

kashmir attack uri bihar regiment soldier
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy