ভারতীয় পণ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার পর এই প্রথম আলোচনার টেবিলে বসল ভারত এবং আমেরিকা। নয়াদিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি স্তরের বৈঠক চলছে। সোমবার রাতেই ভারতে এসেছেন দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। তাঁর সঙ্গেই বৈঠকে বসেছেন ভারত-মার্কিন বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে নয়াদিল্লির প্রতিনিধি রাজেশ আগরওয়াল। তিনি কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিবের পদে রয়েছেন।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখার জন্য ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ (মোট ৫০ শতাংশ) শুল্ক চাপিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্কও খানিক ধাক্কা খেয়েছে। থমকে গিয়েছে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দু’পক্ষের কথাবার্তাও। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছিল নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে। স্থির হয়েছিল চলতি বছরের শেষেই প্রাথমিক বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলা হবে। দু’পক্ষের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনার পরেও অবশ্য রফাসূত্র মেলেনি। অগস্টের শেষে ষষ্ঠ দফার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতির কারণে তা ভেস্তে যায়। এই আবহে যাবতীয় জটিলতা কাটিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কথাবার্তা এগোবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, সাম্প্রতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। মোদীও সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুভূতি এবং দুই দেশের সম্পর্কের ইতিবাচক মূল্যায়নকে উপলব্ধি করতে পারছি। তার প্রতিদানও দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ এর মাঝে গত বুধবার ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে জানান, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই একটি সফল সিদ্ধান্তে পৌঁছোবে দুই দেশ। তাঁর ‘অন্যতম ভাল বন্ধু’ মোদীর সঙ্গে কথা বলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলেও জানান ট্রাম্প। যদিও বাস্তব আদৌ এমন নয়। এ সব সৌজন্যবার্তার অনেক আগেই প্রায় তলানিতে ঠেকেছে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক।
কেন্দ্রের একটি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবারের বৈঠকে আমেরিকার তরফে মোদী সরকারের কাছে রাশিয়ার তেল কেনা কমানোর প্রতিশ্রুতি চাওয়া হতে পারে। পাশাপাশি, এ দেশে ইথানল তৈরিতে আমেরিকার ভুট্টা পাঠাতে আগ্রহী ওয়াশিংটন। তারা চায় লাইসেন্সের নিয়ম সরল করুক নয়াদিল্লি, এ দেশে আমেরিকার সংস্থার রফতানি বাড়াতে কমানো হোক আমদানিতে কড়াকড়ি। নয়াদিল্লি অবশ্য আগেই স্পষ্ট করেছে শুধু বাণিজ্য চুক্তি করতে চাপের মুখে মাথা নোয়ানো হবে না। আমেরিকা চাইলেও দেশের কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার খুলতে রাজি নয় তারা। এই পরিস্থিতিতে আলোচনা কোন পথে এগোয়, সে দিকেই সব মহলের নজর রয়েছে।