Advertisement
E-Paper

কর্মসূত্রে আমেরিকায় যাওয়ার পথ কঠিনতর করে তুললেন ট্রাম্প! ধাক্কা খেতে পারে বিদেশি কর্মী নিয়োগ, চিন্তিত নয়াদিল্লিও

দ্বিতীয় বার ক্ষমতা আসার পর থেকেই ট্রাম্প বার বার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর জমানায় আগে সুবিধা পাবেন আমেরিকানরা। তার পরে অন্যদের বিষয়ে ভাবা হবে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:২৯
(বাঁ দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

কর্মসূত্রে আমেরিকায় যাওয়ার পথ আরও কঠিন করে তুলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বদলে দিয়েছেন এইচ-১বি ভিসার নিয়ম। এটি হল একটি অ-অভিবাসী ভিসা, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীরা সাময়িক ভাবে আমেরিকায় থেকে সেখানকার সংস্থার হয়ে কাজ করতে পারেন। কিন্তু এ বার এখানেও ‘কোপ’ বসিয়েছেন ট্রাম্প। এ বার থেকে এইচ-১বি ভিসার জন্য মার্কিন সংস্থাগুলির কাছ থেকে বছরে এক লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) করে নেবে ট্রাম্পের সরকার।

এইচ-১বি ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে কাজ করা বিদেশিদের মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছেন ভারত এবং চিনের নাগরিকেরা। সরকারি হিসাবে, বর্তমানে আমেরিকায় এই ভিসার সবচেয়ে বেশি সুবিধা পান ভারতীয়েরা। গত বছর ভারত থেকে ৭১ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে চিন। সেখান থেকে ১১.৭ শতাংশ ভিসার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এইচ১বি ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের নয়া নীতিতে সমস্যায় পড়তে পারেন ভারতীয়েরা।

বস্তুত, এই ভিসার আওতায় বিদেশ থেকে যাঁরা আমেরিকায় কাজ করতে যান, তাঁরা সম পদে মার্কিন কর্মীদের সমান বেতনই পেয়ে থাকেন। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প বার বার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর জমানায় আগে সুবিধা পাবেন আমেরিকানরা। তার পরে অন্যদের বিষয়ে ভাবা হবে। এইচ-১বি ভিসায় এই বদল সেই ভাবনারই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও মার্কিন সংস্থায় বিদেশিদের নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ করে দিচ্ছেন না ট্রাম্প। তবে নয়া ভিসা নীতিতে বিদেশিদের আমেরিকায় গিয়ে কাজ করার পথ আরও কঠিন করে তুললেন তিনি। অনেকেই মনে করছেন, এইচ-১বি ভিসায় কর্মীনিয়োগের উপর মোটা অঙ্কের মূল্য ধার্য হওয়ার ফলে অনেক সংস্থায় সেই পথ থেকে সরে আসতে পারে।

বিদেশি নিয়োগে আপত্তি!

শুক্রবারই এইচ-১বি সংক্রান্ত এই নয়া নির্দেশনামাই স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর পরেই ট্রাম্পের বাণিজ্যসচিব হোয়ার্ড লুটনিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা যদি কাউকে কাজ শেখাতে চান, নিয়োগ করতে চান, আমাদের এখানকার এত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর যাঁরা পাশ করছেন, তাঁদের শেখান। আমেরিকানদের শেখান, আমেরিকানদের নিয়োগ করুন। বাইরে থেকে লোক এনে আমাদের নাগরিকদের চাকরি খাওয়া বন্ধ করুন।’’ যদিও ট্রাম্প নিজে সরাসরি এমন কোনও দাবি করেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যাখ্যা, যাঁরা বিদেশ থেকে এসে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন, তাঁরা যে প্রকৃত অর্থেই অত্যন্ত দক্ষ, তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘আমাদের কর্মী চাই। আমাদের খুব ভাল কর্মী চাই। এই নির্দেশে সেটাই নিশ্চিত হবে।’’ ট্রাম্প মুখে যা-ই বলুন না কেন, তাঁর দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি থেকেই এই সিদ্ধান্তের নেপথ্য কারণ অনুমান করা যায়। তাঁর বাণিজ্যসচিবের মন্তব্যেও সেই প্রতিফলনই পাওয়া গিয়েছে।

আমেরিকায় গিয়ে চাকরিতে ‘কোপ’

এইচ১বি ভিসার নয়া নিয়মে বিদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের উপর সরাসরি কোনও চাপের কথা উল্লেখ নেই। মার্কিন সংস্থাগুলি থেকেই ভিসা বাবদ অর্থ নেবে আমেরিকার প্রশাসন। তবে অনেকে মনে করছেন, এই অর্থের বোঝা আসলে চাপবে এইচ১বি ভিসার আবেদনকারীদের উপরেই। তাঁদেরই ভিসার সঙ্গে সঙ্গে এই বাড়তি অর্থ খরচ করতে হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। ফলে আমেরিকায় গিয়ে চাকরি করার প্রক্রিয়া বিদেশিদের জন্য আরও কঠিন হল বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে এইচ-১বি ভিসার মেয়াদ থাকে তিন বছর। সর্বোচ্চ ছ’বছর পর্যন্ত তা বৃদ্ধি করা যায়। এই সময়ের মধ্যে আমেরিকার গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন কর্মীরা। গ্রিন কার্ড বা স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে এইচ-১বি ভিসার মেয়াদ ইচ্ছামতো বৃদ্ধি করা যায়। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে এইচ১বি ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথও জটিল হল বলে মনে করা হচ্ছে।

সমালোচনায় বিদ্ধ ভিসা-নীতি

ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, বাইরের দেশ থেকে লোকজন আমেরিকায় ঢুকে সেখানকার নাগরিকদের অধিকারে ভাগ বসাচ্ছেন। তবে এইচ-১বি ভিসা নিয়ে নতুন যে নির্দেশ তিনি কার্যকর করতে চাইছেন, তা ইতিমধ্যে আমেরিকাতেও সমালোচনার মুখে পড়েছে। অনেকের দাবি, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। দক্ষ বিদেশিদের নিয়োগ করার জন্য এর পর বিভিন্ন সংস্থা আমেরিকান কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিতে পারে। আবার অনেকের মতে, বিদেশি প্রতিভাদের সুযোগ না দিলে মার্কিন অর্থনীতিই আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

‘ব্যবসায়ী’ ট্রাম্প

এইচ-১বি ভিসায় নয়া নীতি ঘোষণার পাশাপাশি আমেরিকায় থাকতে ইচ্ছুক বিদেশিদের জন্য গোল্ড এবং প্ল্যাটিনাম ভিসারও ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। আমেরিকায় বসবাসে ইচ্ছুক কোনও ব্যক্তি ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮ কোটি ৮০ লক্ষ টাকারও বেশি) খরচ করলে ট্রাম্প ‘গোল্ড কার্ড’ পেতে পারেন। কোনও কর্মীর দ্রুত ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে মার্কিন সংস্থাগুলিও ২০ লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৭ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার বেশি) খরচ করতে পারে। অন্য দিকে আমেরিকায় ‘প্ল্যাটিনাম কার্ড’ পেতে খরচ করতে হবে ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪৪ কোটি টাকারও বেশি)। এই ভিসা পেলে এক জন অভিবাসী বছরে ২৭০ দিন আমেরিকায় থাকতে পারবেন।

সাবধানী মেটা, মাইক্রোসফ্‌ট

ট্রাম্পের ঘোষণার পরেই মেটা (ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা), অ্যামাজ়ন, মাইক্রোসফ্‌ট, জেপি মর্গানের মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলির অন্দরে হইচই পড়ে গিয়েছে। ভিসানীতিতে মার্কিন প্রশাসনের নয়া সিদ্ধান্তের পরে কিছুটা সাবধানী এই সংস্থাগুলি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, ‘এইচ-১বি’ ভিসা নিয়ে আমেরিকায় থাকা কর্মীদের আমেরিকাতেই থাকার জন্য বলেছে সংস্থাগুলি। এই ভিসায় আমেরিকায় যাওয়া যে কর্মীরা বর্তমানে আমেরিকার বাইরে রয়েছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমেরিকায় ফেরার জন্য বলেছে মাইক্রোসফ্‌ট। জেপি মর্গান-ও এই ভিসায় থাকা কর্মীদের আমেরিকায় থাকতে বলার পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত অন্য দেশে যেতে বারণ করেছে। যদিও কী কারণে মার্কিন সংস্থাগুলির এই সাবধানী পদক্ষেপ, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে, ট্রাম্পের নয়া সিদ্ধান্তেরই প্রভাব পড়ে থাকতে পারে।

ভারতের ‘শত্রু’ পরনির্ভরতা

শনিবার গুজরাতের এক সভা থেকে মোদী বলেন, “বিশ্বে আমাদের বড় কোনও শত্রু নেই। আমাদের একমাত্র প্রকৃত শত্রু হল অন্য দেশের উপর নির্ভরতা। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু।” একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, আমাদের প্রত্যেককে এক সঙ্গে ভারতের এই শত্রুকে হারাতে হবে।” বক্তৃতায় আত্মনির্ভর হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের নয়া সিদ্ধান্তের পরেই মোদীর এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মোদী আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতি এবং উন্নতির জন্য বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের আত্মনির্ভর হওয়া উচিত।” একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, যদি আমরা এখনও অন্যদের উপর নির্ভরশীল থেকে যাই, তা হলে আমাদের আত্মসম্মানে ঘা লাগবে। হাজার দুঃখের একটাই ওষুধ। আর তা হল আত্মনির্ভর ভারত।”

চিন্তিত মোদী সরকার

শনিবার বিকেলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিষয়টি উল্লেখ করে জানায়, এই পদক্ষেপের ফলে এইচ-১বি ভিসাধারী মানুষের জীবনে পারিবারিক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। ভারত সরকার মনে করে, এ ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা করবে। বস্তুত, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের নয়া ভিসানীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে ভারতের উপরেই। ভারত সরকারের তরফে বলা হয়েছে, আমেরিকার নয়া ভিসানীতিতে পরিবর্তনগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে পরামর্শ নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নীতিনির্ধারকেরা পারস্পরিক সুবিধা বিবেচনা করে সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি মূল্যায়ন করবেন। ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কের কথাও তুলে ধরা হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে।

H-1B Visa Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy