রাশিয়া এবং তার থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলির অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে! এই ধরনের অর্থনৈতিক পতনই কেবল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পারে। এমনই মনে করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট।
রবিবার সংবাদমাধ্যম এনসিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট মনে করেন এখন দুই পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। তাঁর কাছে দু’টি প্রশ্ন এখন বড় আকার নিয়েছে। এক, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী কত দিন টিকতে পারবে? দুই, রাশিয়ার অর্থনীতি কত দিন ঠিক থাকবে? বেসেন্ট মনে করেন, বর্তমানে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে যে কোনও সময় এই দুই পরিস্থিতির মধ্যে একটি ঘটতে পারে।
বেসেন্টের কথায়, ‘‘যদি ব্রিটেন এবং ইইউ রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর আরও নিষেধাজ্ঞা এবং আরও শুল্ক আরোপ করতে পারে, তবে রাশিয়ার অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। তার পরেই পুতিন আলোচনার টেবিলে বসবেন।’’ ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থসচিব এ-ও বলেন, ‘‘আমরা (আমেরিকা) রাশিয়ার উপর আরও চাপ বৃদ্ধি করতে প্রস্তুত। তবে আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদেরও উচিত, তা অনুসরণ করা।’’
‘রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির’ কথা বললেও বেসেন্ট সরাসরি কারও নাম করেনি। তবে রাশিয়া থেকে তেল কেনার নিরিখে ভারত এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারত ছাড়াও রাশিয়া থেকে তেল কেনে চিনও। বেসেন্ট সরাসরি ভারত বা চিনের নাম না করলেও তাঁর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুঁশিয়ারি কোন দিকে তা একপ্রকার স্পষ্ট। রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য অতীতেও মার্কিন অর্থসচিবের রোষের মুখে পড়েছে ভারত।
ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্বের কথা বললেও ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনা নিয়ে তিনি হতাশ। সেই হতাশার কথা ভারতকেও জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, ‘জরিমানা’ হিসাবে ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্কও আরোপ করেন ট্রাম্প। বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত না-হওয়া এবং ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। তার মধ্যেই ছিল মোদীর চিন সফর। সম্প্রতি এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে চিনে গিয়েছিলেন মোদী। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় তাঁর।
আরও পড়ুন:
মোদী, জিনপিং এবং পুতিনের সাক্ষাৎ ভাল ভাবে নেননি ট্রাম্প। গত শুক্রবার মোদী-পুতিন-জিনপিঙের সেই ছবি পোস্ট করে শুক্রবার সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ করেছিলেন ট্রাম্প। লিখেছিলেন, ‘‘ভারত আর রাশিয়াকে আমরা চিনের অন্ধকারে হারিয়ে ফেললাম। ওদের ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছা।’’ তবে তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প আবার মতবদল করে ফেলেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ভারতকে হারিয়ে ফেলিনি তো! মোদী আমার খুব ভাল বন্ধু, সব সময় সে বন্ধুত্ব থাকবে। উনি খুব ভাল প্রধানমন্ত্রী।’’ ট্রাম্পের বাড়িয়ে দেওয়া ‘বন্ধুত্বের হাত’ ধরতে রাজি বলেই জানান মোদী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ইতিবাচক বক্তব্যের প্রতিদান তিনি দেবেন। ট্রাম্পের অবস্থানের প্রশংসাও করেন মোদী। অনেকের মতেই দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। তবে তার মধ্যে মার্কিন অর্থসচিবের নিষেধাজ্ঞা আরোপের মন্তব্যে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছে কূটনৈতিক মহল।