প্রতীকী ছবি।
ধর্মসংসদ নিয়ে ধর্মসঙ্কটে সঙ্ঘ পরিবার, এবং অবশ্যই বিজেপি।
হরিদ্বারের ধর্মসংসদ থেকে যে ভাবে প্রকাশ্যে মুসলিম গণহত্যার ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে এক মাস পরে নড়ে বসল সঙ্ঘ পরিবার। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদীদের ওই গণহত্যার ডাক যে বড় প্রভাব ফেলবে, তা আঁচ করে সংগঠনের সংখ্যালঘু সংগঠন মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চকে আসরে নামাল তারা। যারা সঙ্ঘের শীর্ষকর্তাদের নির্দেশে হরিদ্বারে ধর্মসংসদে দেওয়া ঘৃণাভাষণের নিন্দা করল। একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের ২০ শতাংশ মুসলিম ভোটারের মন জয়ের চেষ্টা করতেও সক্রিয় হল সঙ্ঘ পরিবারের সংখ্যালঘু সংগঠন।
গত ডিসেম্বরে হরিদ্বারে ধর্মসংসদ ডেকে এবং রাজধানী দিল্লিতে হিন্দু বাহিনীর সভায় যে ভাবে প্রকাশ্যেই মুসলিম গণহত্যার ডাক দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে গোটা দেশ। তার পরেও কোনও উচ্চবাচ্য করেননি বিজেপি বা সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। কিন্তু একের পর এক বিশিষ্ট জনের আর্জি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের এবং সেনার অবসরপ্রাপ্ত কর্তাদের চিঠির পরে এ নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সক্রিয় হয়। এবং তার পরেই গ্রেফতার হয়েছে হরিদ্বারে ঘৃণাভাষণের দুই পান্ডা। যদিও বাকিরা এখনও বাইরে এবং বহাল তবিয়তেই। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে আরও ধর্মসংসদ করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন ঘৃণাভাষণের এক পান্ডা। সেই সঙ্গেই ঘৃণাভাষণের পান্ডারা জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না।
একের পর এক এই ধরনের ঘৃণাভাষণ এবং উস্কানিমূলক গণহত্যার ডাক যে উত্তরপ্রদেশ ভোটে ছাপ ফেলতে পারে, সে ব্যাপারে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ উদ্বিগ্ন হলেও দলের শীর্ষ নেতারা সে ভাবে কেউই মুখ খোলেননি। ঘৃণাভাষণের পান্ডাদের সকলেই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তা ছাড়া উত্তরপ্রদেশ ভোটে মুসলিম ভোট না পাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা নিশ্চিত বিজেপি নেতারা সরাসরি হিন্দুত্বের কার্ড খেলছেন। সেই দলে রয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আদিত্যনাথ তো সরাসরিই বলেছেন, ভোট হবে ৮০ শতাংশ বনাম ২০ শতাংশের মধ্যে। তা হলে হঠাৎ কেন সঙ্ঘ পরিবারের এই ভোলবদল? অনেকেই বলছেন, ঘৃণাভাষণের প্রভাব শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, ভোটমুখী অন্য চার রাজ্যেও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে গোয়া, উত্তরাখণ্ড এবং পঞ্জাবে সংখ্যালঘু ভোট নেহাত কম নয়। তা ছাড়া আগামী কয়েক বছরে পরপর বিধানসভার ভোট রয়েছে। ঘৃণাভাষণের ছায়া থেকে বিজেপি এবং সঙ্ঘের দূরত্ব তৈরি করতে না পারলে সেই সব বিধানসভা ভোটেও প্রভাব পড়তে পারে বলে ভয় পাচ্ছে সঙ্ঘ। সে কারণেই নিজেদের সংখ্যালঘু সংগঠনকে আসরে নামিয়েছে তারা।
যদিও হরিদ্বার এবং দিল্লির ঘৃণাভাষণ নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পরে এই কৌশল কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সঙ্ঘের অন্দরেই। বিশেষ করে এই হিন্দুত্ববাদীরা সঙ্ঘেরই অতি ঘনিষ্ঠ। তা সত্ত্বেও আপাতত নিজেদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মুখ তুলে ধরতে এই কৌশলকেই আঁকড়ে ধরছে সঙ্ঘ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy