জয় হল আমিষেরই! আজ থেকে দিল্লিতে শুরু বিশ্ব খাদ্যমেলায় নিরামিষের পাশাপাশি আমিষ খাদ্য জায়গা পাবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছিল পুরোদমে। শেষ পর্যন্ত সহাবস্থান হল উভয়েরই। মেলাপ্রাঙ্গনে তাই বাবা রামদেবের সংস্থার লাউয়ের সরবতের সঙ্গেই বিকোচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের শুঁটকি মাছ।
শুরুতে সরকার তথা সঙ্ঘ পরিবারের একটি অংশ চাইছিল, গোটা মেলায় কেবল নিরামিষ খাবারের স্টলই থাকুক। এই প্রস্তাবে আপত্তি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষ করে যে মেলায় প্রতিনিধিত্ব করছে প্রায় ত্রিশটি বিদেশি রাষ্ট্র, সেখানে কেবল নিরামিষ খাবার রাখা কেন হবে, তা নিয়ে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়। বিতর্ক গড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় পর্যন্ত। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে সরকার জানিয়ে দেয়, এই মেলা কোন বিশেষ খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত এমন মানুষদের জন্য নয়। এটি গোটা ভারত তথা বিশ্বের খাদ্যমেলা। তাই প্রতিটি দেশ ও রাজ্যের অধিকার রয়েছে নিজেদের এলাকার বৈশিষ্ট্যযুক্ত খাদ্যসামগ্রী তুলে ধরার। আমিষ সংক্রান্ত ছুৎমার্গ যে মানা হবে না, তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে আজ অনুষ্ঠানের দিন মধ্যাহ্নভোজেও ঢালাও উপস্থিতি ছিল একাধিক আমিষ পদের। গত তিন বছরে যা কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছিল যে কোনও সরকারি মধ্যাহ্নভোজে।
আরও পড়ুন: বিরল রায়! ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে গুয়ান্তানামো বে-তে বন্দি করার নির্দেশ
পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য আমিষ-নিরামিষ দু’ধরনের খাদ্যসম্ভার নিয়েই হাজির হয়েছে। কৃষি বিপণন দফতরের উদ্যোগে সীতাশাল, গোবিন্দভোগ, তুলাইপাঞ্জি চালের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে মালদহ-মুর্শিদাবাদের আম, লিচু, আনারসের জ্যাম-জেলিও। পাওয়া যাচ্ছে মেদিনীপুরের গয়না বড়ি, সিউড়ির মোরব্বা। নিরামিষের মতোই আমিষ সম্ভারেও পিছিয়ে নেই রাজ্য। মাংসের মধ্যে খাসি, ভেড়া বা শুয়োরের মাংসের সঙ্গেই পাল্লা দিচ্ছে কোয়েল, টার্কি হাঁস। আর রয়েছে নানা জাতের বাংলার মাছ। ইলিশ, ট্যাংরা, পার্শে, কই, ভেটকির সঙ্গেই পাওয়া যাচ্ছে প্রন পিকল বা ফিস সুইট অ্যান্ড সাওয়ার আচার। চেখে দেখার সুযোগ রয়েছে গেঁড়ি, গুগলিও।
আখলাখ থেকে শুরু। উত্তরপ্রদেশে দাদরিতে গো-রক্ষা বাহিনীর তাণ্ডবে আখলাখের মৃত্যুর পর গোটা দেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে স্বঘোষিত ধর্মরক্ষকেরা। বহু ক্ষেত্রে আমিষ খাওয়া নিয়েও আপত্তি তোলে তারা। সম্প্রতি দিল্লির বিভিন্ন দুর্গা পুজো প্রাঙ্গনে আমিষ খাবার বিক্রি নিয়ে আপত্তি তোলে সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ। পুজো করতে না দেওয়ার ফতোয়ার মুখে পড়ে সেই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় পূর্ব দিল্লির পূর্বাচল পুজো কমিটি। খোদ সংখ্যালঘু মন্ত্রকের দিল্লিতে হওয়া খাদ্য উৎসবেও বিক্রি বারণ ছিল গরু ও শুয়োরের মাংসের। সমস্যায় পড়তে হয়েছে উত্তরপ্রদেশ বা উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে আসা মুসলিম ও খ্রিস্টান প্রতিনিধিদের। আজ কেন্দ্র জানিয়েছে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে আগামী ৩ বছরে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে দেশে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই শিল্পে চাকরি তৈরি হতে পারে প্রায় দশ লক্ষের। দু’দিন আগে প্রকাশিত বিশ্বব্যাঙ্কের ব্যবসা করার পরিবেশ তালিকায় ভারতের সূচক যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন আমিষ-নিরামিষের এই অহেতুক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বিনিয়োগ হারানোর ঝুঁকি নিতে চায়নি কেন্দ্রও।