জম্মু ও কাশ্মীরের বৈসরণ উপত্যকার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রত্যাঘাতের পরিকল্পনা হয়েছিল। ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে সেই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। তার পরেই পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিতে হামলার জন্য অভিযান ‘সিঁদুর’-এর রূপরেখা তৈরি এবং প্রত্যাঘাত। জানালেন বায়ুসেনার সহকারী প্রধান এয়ার মার্শল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের উত্তেজনা শুরু হয়। পহেলগাঁও কাণ্ডের জন্য প্রথম থেকেই পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। কী ভাবে ওই হামলার প্রত্যাঘাত করা হবে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় নয়াদিল্লিতে। এমনই জানান নর্মদেশ্বর। তিনি এ-ও জানান, পহেলগাঁও কাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রত্যাঘাতের নকশা নিয়ে হাজির হয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। তার পর সেই নকশার অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পরের দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল প্রত্যাঘাতের সম্ভাব্য পরিকল্পনা কী হবে, তা নিয়ে সামরিক কর্তাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই স্থির হয় প্রত্যাঘাতের পরিকল্পনা। ২৪ এপ্রিল একাধিক বিকল্প জানানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে। কোথায় কোথায় হামলা চালানো হবে, তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২৯ এপ্রিল হামলার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কবে এবং কখন জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালানো হবে, তা ঠিক হয় ৫ মে। সেই পরিকল্পনা মতো ৬ মে রাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারতীয় সেনা।
পহেলগাঁও হামলার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন সৌদি আরবে। তবে সফরসূচি সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসেন ভারতে। তার আগে এই হামলার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেন মোদী। তাঁর নির্দেশেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জম্মু ও কাশ্মীর যান শাহ। জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিংহ এবং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
পহেলগাঁও হামলার ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তান, এমন অভিযোগ তোলে ভারত। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধুচুক্তি স্থগিত করে দেয় নয়াদিল্লি। শুধু তা-ই নয়, অটারি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি, পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়ার উপর বিধিনিষেধও আরোপ করে ভারত সরকার। এর পাশাপাশিই নেপথ্যে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা চলছিল।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা শুরু হয়। সীমান্তে গোলাবর্ষণ চলে। চার দিন সামরিক উত্তেজনা চলার পর সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় দুই পড়শি দেশ। সেই উত্তেজনার সময় কী ভাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর ‘আধিপত্য’ বিস্তার করে ভারতীয় সেনা, তার বর্ণনা করেন নর্মদেশ্বর। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সময়ে ৫০টিরও কম অস্ত্র ব্যবহার করেছিল ভারতীয় সেনা। তার মধ্যেই পাকিস্তান সেনার উপর আধিপত্য কায়েম করি আমরা। এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।’’ পাকিস্তানকে বার্তা পাঠানোর উদ্দেশেই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানান বায়ুসেনার সহকারী প্রধান। তিনি এ-ও জানান, শত্রুর ঘাঁটিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা খুব কঠিন। তবে ভারতীয় সেনা নিখুঁত ভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে।