Advertisement
E-Paper

কারাট ও সুর্যকান্ত, দু’কূল রেখেই সিপিএমের ভারসাম্যের খেলা

প্রেমাংশু চৌধুরীতিন দিনের গৃহযুদ্ধের পর অবশেষে দু’কূলই রক্ষা পেল! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিল, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট দলের রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০২:২৫

তিন দিনের গৃহযুদ্ধের পর অবশেষে দু’কূলই রক্ষা পেল!

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিল, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট দলের রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কাজেই তা সংশোধন করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে তৃণমূলের ‘হিংসা’ রুখতে কংগ্রেসের সঙ্গে গণ-আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ছাড়পত্র দিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি।

অর্থাৎ, কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধী প্রকাশ কারাট ও তাঁর অনুগামীদের দাবিও রক্ষা পেল। আবার সূর্যকান্ত মিশ্রদের দাবিও মেনে নেওয়া হল।

বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পরে প্রাথমিক ভাবে পলিটব্যুরো এই সিদ্ধান্তই নিয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনার পর নতুন সংযোজন বলতে, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটি কংগ্রেসের সঙ্গে কোনওরকম বোঝাপড়া বা জোটের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসের সেই রাজনৈতিক রণকৌশল মেনে চলার গুরুত্বের উপরেই জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কাজেই পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী রণকৌশল সংশোধন করতে হবে। পলিটব্যুরো রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে।

শুনলে যতই মনে হোক, কেন্দ্রীয় কমিটি রাজ্য নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলে জেলে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে ফেলেছে, বাস্তব মোটেই তা নয়। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নিজেই বলছেন, ‘‘এখন আর নির্বাচন কোথায়?’’ যার অর্থ, নির্বাচনী রণকৌশল সংশোধন করারও আর প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? আর অধীর চৌধুরী-সূর্যকান্ত মিশ্র, আবদুল মান্নান-সুজন চক্রবর্তীরা যে একসঙ্গে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তার কী হবে? ইয়েচুরির জবাব, ‘আমরা তো বলেইছি, হিংসা রুখতে মানুষের যত বড়মাপের সম্ভব জোট তৈরি করতে হবে।’’ সেই জোটে কি কংগ্রেসও রয়েছে? ইয়েচুরির জবাব, ‘‘সবাই থাকবে।’’

পলিটব্যুরোর মতোই কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি লাইন ভাঙার কথা বলা হয়নি। যার প্রতিবাদে আজ দল থেকে পদত্যাগ করেছেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জগমতী সাঙ্গয়ান। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থানে অবিচল থেকেছেন ইয়েচুরিরা। উল্টে জগমতীকেই পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিদেশে ‘ছোট সফর’, ফের অজ্ঞাতবাসে রাহুল!

তিন দিন ধরে চলা কেন্দ্রীয় কমিটির বিতর্কে যে ৭৭ জন অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বাংলার ১৬ জন বাদে বাকি সকলেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। এমনকী, বাংলা থেকেও তিন জন জোটের উল্টো সুরে কথা বলেছেন। অনেকে আলিমুদ্দিনের নেতাদের সমালোচনায় পৃথক নিন্দা প্রস্তাব, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে রাজ্য নেতৃত্বের দিকে কোনওরকম অভিযোগের আঙুল তোলেনি। শাস্তি তো দূরের কথা। ইয়েচুরি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দোষ হলে তা রাজ্য নেতৃত্ব ও পলিটব্যুরো, উভয় পক্ষেরই। কারণ পশ্চিমবঙ্গে যে রণকৌশল নেওয়া হবে, তা রাজ্য নেতৃত্ব পলিটব্যুরোর সঙ্গে আলোচনা করেই নেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন পলিটব্যুরোও তার দায় এড়াতে পারে না। সিপিএমের সূত্রের যুক্তি, ইয়েচুরি নিজেই ভোটের আগে অন্তত ১৫ বার কলকাতা গিয়েছেন। রাজ্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তার পর সব সিদ্ধান্ত রাজ্য একা নিয়েছে, বলা সম্ভব নয়।

তা হলে সংশোধন কী করে হবে? সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, এখন কোনও নির্বাচন নেই। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নও আসছে না। কিন্তু তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আরও বেশি আলোচনা করে, সায় নিয়েই যা করার করতে বলা হবে। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘পলিটব্যুরোর সদস্যরা কলকাতায় গিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’’ পলিটব্যুরো সূত্রের ব্যাখ্যা, কেন রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্বাচনী কৌশল রক্ষা করা যায়নি, তা নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে রাজ্য নেতৃত্বের অবস্থান বদলানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। কাজেই আলিমুদ্দিন যে পথে চলছে, সেই পথেই চলবে।

এই অদ্ভূত ভারসাম্য রেখে দু’কূল রক্ষা করা ছাড়া সিপিএম নেতৃত্বের সামনে আর কোনও উপায়ও ছিল না। কারণ সূর্যকান্ত মিশ্ররা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, পলিটব্যুরোর সব নেতার পক্ষে চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে পশ্চিমবঙ্গে কী ধরনের হিংসা চলছে, তা বোঝা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির দাবি মেনেই তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছেন। তাতে পার্টির কেতাবি রাজনৈতিক লাইন অমান্য হয়ে থাকলে, হয়েছে। তার জন্য তাঁরা পদ থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হচ্ছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজ্য শাখা ভেঙে দিতে পারে, এমন চ্যালেঞ্জও ছুড়েছিলেন সূর্যকান্তরা। বাংলা বাদ দিলে যে সিপিএমের বিশেষ কিছু অবশিষ্ট থাকবে না, সেই বাস্তব বুঝেই আলিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে পার্টি লাইন ভাঙা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পথে হাঁটা সম্ভব হয়নি। বিতর্কে অংশ নেওয়াদের সিংহভাগই যেখানে জোটের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সিংহভাগই সায় মিলিয়েছে।

country india new delhi cpm prakas karat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy