E-Paper

বাড়ি থেকে পালানো ‘মাল্লার ছেলে’-র নজরে উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব

মাত্র ১৮ বা ১৯ বছর বয়সে বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন মুকেশ সাহনি। দ্বারভাঙ্গার সুপৌল গ্রামের বাড়ি থেকে। ঠিক ছিল, স্টেশনে গিয়ে দিল্লির ট্রেন ধরবেন। তার আগে মুম্বইয়ের ট্রেন এসে যাওয়ায় সেই ট্রেনেই উঠে পড়েন মুকেশ। তারপরে?

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৭
মুকেশ সাহনি।

মুকেশ সাহনি। — নিজস্ব চিত্র।

মুকেশ সাহনিকে নিয়ে ‘বায়োপিক’ তৈরি হলে তার নাম কী হবে? বিহারের সবাই এক সুরে বলবেন, ‘সন অব মাল্লা’। মাল্লার পুত্র। তাঁর ‘বায়োপিক’-এর নাম ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ হলেও ভুল হবে না।

মাত্র ১৮ বা ১৯ বছর বয়সে বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন মুকেশ সাহনি। দ্বারভাঙ্গার সুপৌল গ্রামের বাড়ি থেকে। ঠিক ছিল, স্টেশনে গিয়ে দিল্লির ট্রেন ধরবেন। তার আগে মুম্বইয়ের ট্রেন এসে যাওয়ায় সেই ট্রেনেই উঠে পড়েন মুকেশ। তারপরে? প্রথমে কিছুদিন সেলসম্যানের চাকরি। তারপরে বলিউডের সিনেমার জন্য সেট তৈরির ঠিকাদারি। নিজেই সিনেমার সেট তৈরির সংস্থা খুলে ফেলেন। শাহরুখ খানের ‘দেবদাস’ থেকে সলমন খানের ‘বজরঙ্গী ভাইজান’ সিনেমার সেট তাঁর সংস্থারই তৈরি।এ সব পুরনো খবর। নতুন খবর হল, বিকাশশীল ইনসান পার্টির প্রধান মুকেশ সাহনি এখন থেকেই বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। মহাগঠবন্ধন তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণার সঙ্গে মুকেশ সাহনিকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেছে। সাহনির মতে, ‘‘বিহারের প্রথম দফায় যে ১২১টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে, তার মধ্যে বিরোধীদেরমহাগঠবন্ধন ৮০টি আসন জিততে চলেছে। দ্বিতীয় দফায় ১২২টি আসনে মহাগঠবন্ধন সরকার গড়ার জায়গায় পৌঁছে যাবে।’’

এ বার বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশ কুমারের বিশ বছরের সরকারকে হটিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গদি দখল করতে তেজস্বী যাদবের প্রধান বাজি মুকেশ সাহনি। কারণ নীতীশের ভোটব্যাঙ্কে উচ্চবর্ণ, ওবিসি ও অতি অনগ্রসর বা ইবিসিদের যে মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে, তাতে ভাঙন ধরাতে মুকেশ সাহনি ও তাঁর বিকাশশীল ইনসান পার্টি প্রধান অস্ত্র। কী ভাবে?

পটনা থেকে গঙ্গা পেরিয়ে উত্তর দিকে এগোলে বৈশালী, মুজফ্‌ফরপুর, দ্বারভাঙ্গা, মধুবনী জেলায় মাল্লা সম্প্রদায়ের দাপট দেখা যায়। যাঁদের আদি পেশা হল নদী, পুকুরে মাছ ধরা বা নৌকা চালানো। এই মাল্লা সমাজ থেকেই উঠে এসেছেন মুকেশ সাহনি। মাল্লারা আবার বৃহত্তর নিষাদ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। যার মধ্যে মাল্লা, সাহনি ছাড়াও বিন্দ, বেলদার, কেওত গোষ্ঠীও রয়েছে। সবই অতি অনগ্রসর শ্রেণি বা ইবিসি-র তালিকায় পড়ে। নিষাদদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেই মুকেশ সাহনির উত্থান হয়েছিল। বৈশালীর জেলা সদর হাজিপুর বা মুজফ্‌ফরপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরলে নিষাদ মহল্লার অনেকেই বলবেন, তাঁদের মোবাইলে মুকেশ সাহনির নম্বর রয়েছে। ফোন করলেই তাঁকে পাওয়া যাবে।

বিহারে জাতপাতের অঙ্ক কষলে শুধু মাল্লা সম্প্রদায়ের জনসংখ্যায় ভাগ মাত্র ২.৬ শতাংশ। কিন্তু গোটা নিষাদ সম্প্রদায়ের জনসংখ্যায় ভাগ ৯.৬ শতাংশ। নীতীশের ইবিসি ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসিয়ে মুকেশের ভরসায় তেজস্বী যাদব, রাহুল গান্ধী ওই ৯.৬ শতাংশ ভোট ঝুলিতে পোরার আশা করছেন। আর মুকেশ আফশোস করছেন, রাজনীতিতে নেমে তিনি নিজের ‘সন অব মাল্লা’ পরিচিতি তৈরি করে ভুল করেছেন। উচিত ছিল ‘সন অব নিষাদ’ পরিচিতি তৈরি করা। তিনি রোজ মনে করাচ্ছেন, ‘‘বিকাশশীলনসান পার্টির ১৪ জনের মধ্যে ৮ জনই নিষাদ প্রার্থী।’’ তেজস্বী যাদবের মহাগঠবন্ধনে ১৪.২৭ শতাংশ যাদব, ১৭.৭ শতাংশ মুসলিম ভোট, ৫.২৬ শতাংশ হরিজন ভোটের সঙ্গে এই নিষাদ ভোট যোগ হলে জাতপাতের অঙ্কে ভোটের হার ৪৭ শতাংশেj কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তার সঙ্গে নীতীশের প্রতি অসন্তুষ্ট অন্যান্য ভোট যোগ হলে মহাগঠবন্ধনের ভোট ৫০ শতাংশ ছুঁয়ে জয় নিশ্চিত হতে পারে। সেই কারণেই তেজস্বী মুকেশকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নিয়েছেন। রাহুল তাঁর সঙ্গে বেগুসরাইতে প্রচারে গিয়ে পুকুরের জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন। মুকেশের বক্তব্য, ‘‘এটা কম কথা নয়। দেশের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী রাহুল গান্ধী আজ নিষাদদের সঙ্গেমাছ ধরছেন।’’

শনিবার খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারে প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধীর মুকেশ সাহনিকে নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়ার দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বড় বড় লোকেরা এখানকার মাছ দেখতে আসছেন। জলে ডুব দিচ্ছেন। বিহারের নির্বাচনে ডোবার অভ্যাস করছেন!’’ অতীতে মহাগঠবন্ধন থেকে ঠিকমতো আসন না পেয়ে মুকেশ সাহনি বেরিয়ে গিয়ে এনডিএ-তে যোগ দিয়েছিলেন। নীতীশ সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু মনোমালিন্য হওয়ায় বিজেপি তাঁর দলের বিধায়কদের ভাঙিয়ে নেয়। তাঁর মন্ত্রিত্বও কেড়ে নেওয়া হয়। মুকেশ আবার মহাগঠবন্ধনে ফিরেছেন। তাঁকে নিয়ে এনডিএ-র চিন্তা বেড়েছে। একইসঙ্গে জল্পনা, ভোটের পরে মহাগঠবন্ধন সরকার গড়তে না পারলে মুকেশ ফের দলবল নিয়ে এনডিএ-তে যোগ দেবেন না তো?মুকেশের জবাব, ‘‘আমরা মাছ ধরি। জালে ফাঁসিয়ে। নিজেরা জালে ফেঁসে যাই না!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bihar Assembly Election 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy