Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Chandrima Bhattacharya

বকেয়া প্রসঙ্গ তুললেন চন্দ্রিমা, শুনলেন নির্মলা

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। রাজ্যের পাওনা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকাও বন্ধ রয়েছে।

An image of Chandrima Bhattacharya

রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৩১
Share: Save:

দিল্লিতে এসেও তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়করা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা পাননি। গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে সময় দিলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরও দেখা মেলেনি, যা নিয়ে চাপানউতোর অব্যাহত। একশো দিনের কাজের প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বকেয়া নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিবাদের মধ্যেই আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সামনে রাজ্যের বকেয়া নিয়ে সরব হলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

শনিবার দিল্লিতে সুষমা স্বরাজ ভবনে জিএসটি পরিষদের বৈঠক বসেছিল। সেখানে রাজ্যের বকেয়া আলোচ্যসূচির মধ্যে না থাকলেও সুকৌশলে এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে চন্দ্রিমা বলেন, রাজ্য কেন্দ্রের কথা মতো করের হার বাড়িয়েছে, অথচ কেন্দ্র রাজ্যের পাওনা আটকে রেখেছে। সীতারামন নিজেও মহিলা অর্থমন্ত্রী, তিনি বিবেচক, ধৈর্য ধরে সকলের কথা শোনেন, সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন ইত্যাদি বলে আজ চন্দ্রিমা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, পশ্চিমবঙ্গের অর্থ প্রতিমন্ত্রী আলোচ্যসূচির বাইরের প্রসঙ্গ তুলছেন দেখেও সীতারামন তাঁকে এক বারও থামানোর চেষ্টা করেননি।

জিএসটি পরিষদের বৈঠকে দিল্লির অর্থমন্ত্রী অতিশী অনলাইন গেমিং সংস্থাকে বিপুল পরিমাণে কর আদায়ের নোটিস পাঠানো নিয়ে সরব হয়েছিলেন। সে সময় তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সীতারামন তাঁকে থামিয়ে দেন। কিন্তু চন্দ্রিমার কথা তিনি ধৈর্য ধরে শোনেন।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। রাজ্যের পাওনা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকাও বন্ধ রয়েছে। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রীদের দেখা না পেয়ে এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার দাবিতে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন। আজ সেই প্রসঙ্গ তুলে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে চন্দ্রিমা বলেন, “আমি জানি, এটা পরিষদের বৈঠকের বিষয় নয়। তবে পশ্চিমবঙ্গ করের হার বাড়ানোর কাজে বরাবর যোগদান করেছে। দেশের গরিব মানুষের যাতে আঘাত না লাগে, সে কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনমাফিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা মানুষের পক্ষে। তাই বাংলার পক্ষ থেকে অনুরোধ করেছি। আমি নিশ্চিত আপনি একশো দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু একশো দিনের কাজে তিন ভাগের এক ভাগ জব কার্ডধারী মহিলা। গত দু’বছর ধরে তাঁরা কাজ করছেন। কিন্তু বকেয়া টাকা পাননি। আপনি এক জন মহিলা অর্থমন্ত্রী। এক জন মহিলাই এই দিকটি বিবেচনা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার পাকা বাড়ি মঞ্জুর হয়েও টাকা আটকে রয়েছে।” সীতারামনকে চন্দ্রিমা বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যেন এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন।

বৈঠকের মধ্যে বা বৈঠকের পরে সীতারামন এ নিয়ে কিছু না বললেও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের অভিযোগ, এমজিএনআরইজিএ-তে পশ্চিমবঙ্গে ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড তৈরি করে কোটি কোটি সরকারি টাকা বেহাত হয়ে যাচ্ছিল। আধার সংযুক্তিকরণের সময় তা ধরা পড়েছে। কেন্দ্র একশো দিনের কাজ ও গরিবদের আবাস প্রকল্পে ‘জালিয়াতির’ ঘটনা তুলে ধরেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য কী ব্যবস্থা নিয়েছিল, তার রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার কিছুই করেনি। বরং দোষীদের আড়াল করে একটি ব্যবস্থা গ্রহণ রিপোর্ট পেশ করেছিল। দুর্নীতির প্রশ্নে কোনও জবাব মেলেনি। সেই কারণেই টাকা আটকানো হয়েছে।

কেন্দ্রের আরও অভিযোগ, আবাস যোজনা-য় গরিবদের বঞ্চিত করে, সরকারি নিয়ম ভেঙে দলীয় কর্মীদের নাম ঢোকানো হয়েছে। এই কারণে কেন্দ্র আবাস যোজনায় ১১.৩ লক্ষ বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল। শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল, সরকারি নির্দেশিকা মেনে উপযুক্ত পরিবারকেই এই প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ মেলায় টাকা আটকে গিয়েছে। রাজ্য অবশ্য আগেও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তালিকায় অনিয়ম সামান্য যা হয়েছিল, তা সংশোধন করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE