Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীরি যুবককে জিপে বাঁধা ভুল হয়নি: সেনাপ্রধান

রবিবার সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত কোনও রাখঢাক না করে গগৈয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘নোংরা যুদ্ধের মোকাবিলায় উদ্ভাবনী ক্ষমতাই কাজে লাগাতে হবে।’

সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত।

সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০৪:২৯
Share: Save:

কোনও ভণিতা না করে কাশ্মীরে সেনা-জিপে বেঁধে মানব-ঢাল করার ঘটনাকে মুক্ত কণ্ঠে সমর্থন করলেন ভারতের সেনাপ্রধান।

এপ্রিল মাসে উপনির্বাচনের সময় জনৈক কাশ্মীরি যুবক ফারুক আহমেদ দারকে জিপের বনেটের সঙ্গে বেঁধে ঘুরেছিল সেনাবাহিনী। তাই নিয়ে রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বিপুল তোলপাড় হয়। ওই ঘটনায় জড়িত সেনা অফিসার, মেজর লিতুল গগৈকে সম্প্রতি আলাদা করে সম্মানিত করে সেনাবাহিনী। তখনই ফের বিতর্ক ঘনিয়ে ওঠে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁকে সম্মানিত করে কোন বার্তা দিচ্ছে বাহিনী!

রবিবার সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত কোনও রাখঢাক না করে গগৈয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘নোংরা যুদ্ধের মোকাবিলায় উদ্ভাবনী ক্ষমতাই কাজে লাগাতে হবে।’’ শুধু তাই নয়। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘(ওরা) পাথরের বদলে সেনাকে গুলি ছু়ড়লে ভাল হতো! তা হলে আমরা যা চাইছি, তা আরও সহজে করতে পারতাম!’’

অর্থাৎ? গুলির উত্তরে গুলি। অশান্ত কাশ্মীরকে বাগে আনতে সোজাসুজি খতম-লাইনই নেওয়ার কথা বললেন রাওয়ত। সরকারি মহলে কেউ কেউ বলছেন, এটাই এখন সেনা এবং সরকারের অবস্থান। যা একই সঙ্গে পাকিস্তান এবং কাশ্মীরকে বার্তা দিয়ে বলতে চায়, কোনও ভাবে নরম হওয়ার প্রশ্ন নেই। বিক্ষোভের আগুন যতই জ্বলুক, কাশ্মীরি জনতা আরও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়বে কি না, সেই ভেবে পিছু হটার জায়গা আর নেই। সম্মুখসমরই রাস্তা।

প্রশাসন সূত্রে কারও কারও মত হল, এই বার্তাটা দিতেই কিন্তু মানব-ঢাল নিয়ে দগদগে বিতর্কের মধ্যেই গগৈকে সম্মানিত করা। সেই কারণেই বুরহান ওয়ানির ঘটনার পরেও সবজার আহমেদ বাটকে হত্যা করা। সেই কারণেই সবজারের মৃত্যুর পরদিন সেনাপ্রধানের তরফে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করা।

আরও পড়ুন: বন্‌ধ উপেক্ষা করেই সেনা-পরীক্ষায় সাড়া কাশ্মীরে

গত কালই হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির উত্তরসূরি সবজার আহমেদ বাটকে শুক্রবার রাতে গুলি করে মেরেছে সেনা। গত বছর বুরহানের মৃত্যুর পর থেকে শান্তির মুখ দেখেনি কাশ্মীর। বুরহানের মৃত্যুতে যে ভাবে উপত্যকায় শোকের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল, সবজারের মৃত্যুতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই সঙ্গে গত এক বছর সীমান্ত সন্ত্রাসেও লাগাম নেই। গত ক’মাসে বেশ কয়েক জন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন কাশ্মীরে। পাকিস্তানের তরফে দুই জওয়ানের দেহ ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেনাপ্রধানের উপরে সে সব দিক থেকেও চাপ রয়েছে।

এ দিন বিপিন খোলাখুলি বলেছেন, ‘‘আমাদের দিকে যখন পাথর-পেট্রোল বোমা ছোড়া হচ্ছে, তখন আমি আমার লোকেদের বলতে পারি না, দাঁড়িয়ে থেকে মরো!’’

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি চাপে রয়েছে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারও। বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, এত দীর্ঘ সময় ধরে এত অশান্ত পরিবেশ কাশ্মীর অনেক দিন দেখেনি। তাঁদের দাবি, পরিস্থিতি রোজই একটু একটু করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন একটা সময় নাগাড়ে ছররা বৃষ্টি করে আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে। এখন ছররা বন্ধ হলেও লাগাতার কার্ফু, তল্লাশি, ধরপাকড় চলছে। ইন্টারনেটে কোপ পড়ছে।

এই আবহে পাকিস্তানের নাম না করেই আজ সেনাপ্রধান জানান, কাশ্মীরে ছায়াযুদ্ধ চলছে। আর ছায়াযুদ্ধ একটা নোংরা যুদ্ধ। ফলে ভারতীয় সেনাকেও উদ্ভাবনী কৌশলের কথা ভাবতে হচ্ছে। মেজর গগৈয়ের বিরুদ্ধে সেনার ‘কোর্ট অব এনকোয়্যারি’ চলছে। কিন্তু জেনারেল রাওয়তের বক্তব্য, গগৈ মোটেই অন্যায় করেননি। তিনি ওই কাজ না করলে সেনা, ভোটকর্মী, পুলিশ, আধাসেনাদের উদ্ধার করা যেত না। চিড় ধরত বাহিনীর ঐক্যেই।

কিন্তু বিরোধীরা যে বারবার বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর কথা, তার কী হবে? সেনা-প্রশাসন যদি এত অনড় মনোভাব নিয়ে চলে, তা হলে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হবে কী করে, উঠছে প্রশ্ন। জবাবটা শোনা গিয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহের মুখে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, পাথর ছোড়া বন্ধ না হলে আলোচনা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে আজ বন্‌ধ উপেক্ষা করে পাট্টান, শ্রীনগরে যে ভাবে কয়েকশো কাশ্মীরি যুবক সেনায় ভর্তির পরীক্ষা দিয়েছেন, সে কথা মনে করিয়ে সেনার দাবি, কাশ্মীরিদের ব়ড় অংশের মনই বিষিয়ে যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE