জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমা থেকে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) প্রত্যাহার করার পরেও বিমা সংস্থাগুলি যেন সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে না পারে। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে জিএসটি কাউন্সিল গঠিত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে তা স্মরণ করিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বিমার প্রিমিয়ামের উপর বর্তমানে ১৮ শতাংশ জিএসটি রয়েছে। সেটি পুরোপুরি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। বুধবারই এ বিষয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয় বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীদের মধ্যে। বৃহস্পতিবার সকালেও মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে ফের এই প্রসঙ্গ উঠে আসে।
বিমার উপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহারের দাবিতে বছর খানেক আগেই সরব হয়েছেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর লোকসভা ভোটের পরে বিমায় জিএসটি প্রত্যাহারের দাবিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে চিঠিও লিখেছিলেন মমতা। সেই চিঠি পাঠানোর কয়েক মাসের মধ্যেই তা কার্যকর করতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পরে তা ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রিমা। তিনি জানান, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাই এই দাবি প্রথম তুলেছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার উপর থেকে জিএসটি তুলে নেওয়ার বিষয়ে প্রায় সকলেই সহমত। তবে চন্দ্রিমার বক্তব্য, শুধু জিএসটি প্রত্যাহার করলেই হবে না। জিএসটি প্রত্যাহারের পরে বিমা সংস্থাগুলি যাতে গ্রাহকদের উপর প্রিমিয়াম বৃদ্ধি করতে না পারে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। তাঁর আশঙ্কা, জিএসটি প্রত্যাহার হলেও প্রিমিয়াম বৃদ্ধি করে গ্রাহকদের থেকে সমপরিমাণ টাকা তুলতে পারে বিমা সংস্থাগুলি। এমন কিছু ঘটলে, জিএসটি তুলে দিলেও সাধারণ মানুষের কোনও উপকার হবে না। তাই এই বিষয়টির উপরেও কেন্দ্রের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন চন্দ্রিমা। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ অতশত হিসাব বোঝেন না। সেই দুর্বলতার সুযোগ নেয় বিমা সংস্থাগুলি। তা যাতে না-হয়, সেটাও সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।’’ পাশাপাশি বিলাসবহুল গাড়ির উপর ৪০ শতাংশ জিএসটি চাপানোরও প্রস্তাব দিয়েছেন চন্দ্রিমা।
বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠী বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে দিল্লিতে। ওই বৈঠকে চন্দ্রিমা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, উত্তরপ্রদেশের অর্থমন্ত্রী সুরেশকুমার খন্না, রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ, কর্নাটকের রাজস্বমন্ত্রী কৃষ্ণ গৌড়া এবং কেরলের অর্থমন্ত্রী কেএন বালাগোপাল। বৈঠক শেষে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী জানান, ১২ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ জিএসটি ‘স্ল্যাব’ তুলে দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের প্রস্তাবে মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্যেরা সহমত। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সকলেরই নিজস্ব মতামত দিয়েছেন। কিছু রাজ্য নিজেদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। সেগুলি জিএসটি কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। কাউন্সিলই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”
আরও পড়ুন:
কেন্দ্রের এই প্রস্তাবের বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন বলেন, “এটি একটি বিলম্বিত বোধদয়। ঠেলার নাম বাবাজি। অনেক দেরিতে হলেও বুঝেছে যে না মানলে বড় অসুবিধা হতে পারে। ভোট বড় বালাই। মানুষকে ভালবেসে তো এটা বোঝেনি। তা হলে তো আগে আগেই বুঝত। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। মানুষের স্বার্থে তিনি জনবিরোধীদেরও অনেক সময় বাধ্য করেন শেষ পর্যন্ত পদক্ষেপ করতে।” চন্দ্রিমা থেকে দোলা সকলেই স্বাস্থ্য ও জাবীন বিমায় জিএসটি প্রত্যাহারকে মমতার ‘চাপ’ হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। প্রসঙ্গত, বিরোধী শিবিরে থাকা মমতা এই দাবি যেমন তুলেছেন, তেমন একই দাবিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলাকে চিঠি লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকরীও। ফলে সরকারের মধ্যেও এ নিয়ে ‘চাপ’ তৈরি হচ্ছিল।
স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণের সময়ে জিএসটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বারের দীপাবলি দেশবাসীর জন্য ‘ডবল দীপাবলি’ হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মোদী বলেছেন, “আমরা নতুন প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার আনছি। এর ফলে সারা দেশে করের বোঝা কমবে। দীপাবলির আগে এটিই হবে উপহার।” মোদীর বার্তার পরেই জিএসটি সরলীকরণের জন্য আরও তৎপর হয়েছে কেন্দ্র। বুধবার জিএসটি কাউন্সিল গঠিত মন্ত্রিগোষ্ঠীকে নির্মলা বলেন, “এই করের হার সাধারণ মানুষ, কৃষক, মধ্যবিত্ত এবং ক্ষুদ্র-কুটির-মাঝারি শিল্পগুলিকে আরও বেশি স্বস্তি দেবে। একই সঙ্গে আরও বেশি সরল এবং স্বচ্ছ কর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।” নির্মলার ওই প্রস্তাবের পরে বুধবার সন্ধ্যায় একটি বৈঠকে বসে মন্ত্রিগোষ্ঠী। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কেন্দ্রের প্রস্তাবের ফলে প্রতি বছর ৯,৭০০ কোটি টাকার রাজস্ব কম আসতে পারে। তবে বেশির ভাগ রাজ্যই এটিতে সমর্থন জানিয়েছেন।