সিঙ্গাপুরের সাংগ্রি-লা বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান। ওই বৈঠকে ছিলেন পাকিস্তানি সেনার শীর্ষকর্তা জেনারেল শাহিদ সমশাদ মির্জ়াও। উভয়ের ভাষণেই উঠে এসেছে ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত এবং সেই সংক্রান্ত বিতর্ক। উভয়েই একে অপরকে সতর্ক করে বার্তা দিয়েছেন। জেনারেল চৌহান জানিয়েছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারতের সহ্যের সীমার লাল দাগটি টেনে দিয়েছে। এর থেকে পাকিস্তান আগামী দিনে শিক্ষা নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। পাক কর্তার ভাষণে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ শোনা গিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের বৈঠক থেকে ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহ্যের সীমার লাল দাগ টেনে দিয়েছে অপারেশন সিঁদুর। এই অভিযান থেকে আমাদের প্রতিপক্ষ কিছু শিক্ষা নেবে, আশা রাখছি। তাদের এটা বোঝা উচিত যে, ভারতের সহ্যক্ষমতার একটা সীমা আছে।’’ ভারতে পর পর সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং সীমান্ত সন্ত্রাসের উল্লেখ করে জেনারেল চৌহান বলেন, ‘‘গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ছায়াযুদ্ধ (প্রক্সি ওয়ার) চলছে। এর ভুক্তভোগী আমরা। এতে ভারতের বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ বার আমরা এটা বন্ধ করতে চাই।’’
আরও পড়ুন:
সাংগ্রি-লা বৈঠকে শনিবার ‘আঞ্চলিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাকর্তা। আঞ্চলিক সঙ্কট এবং ভারত-পাক কৌশলগত স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গে জেনারেল চৌহান বলেছেন, ‘‘দুই হাত জোড়া লাগলে তবেই তালি বাজে। আশা করি, ওরা সেটা বুঝবে।’’
পাকিস্তানের সেনাকর্তা আবার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় জোর দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, যে কোনও সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান প্রয়োজন। সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হলে তাৎক্ষণিক ভাবে কোনও বন্দোবস্ত করে তা ঠেকিয়ে রাখা যায় বা পিছিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু তা চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না। উদাহরণ হিসাবে কাশ্মীর সমস্যার কথা তুলে ধরে পাক কর্তা জেনারেল মির্জা দাবি করেন, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না-হলে আগামী দিনে মধ্যস্থতার সময়ও আর পাওয়া যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের চরমপন্থী রাজনীতিতে সঙ্কট সামাল দেওয়ার (ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট) কোনও ব্যবস্থা নেই। আগামী দিনে বিশ্বশক্তিগুলি সঙ্কটে হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতার সময় না-ও পেতে পারে। তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। ক্ষয়ক্ষতি বা ধ্বংসলীলা তখন আর এড়ানো যাবে না।’’ সন্ত্রাসবাদের কারণে পাকিস্তানেও বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করে ভারত। পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। প্রত্যাঘাতের ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। এর পর টানা চার দিন ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘাত চলেছে। গত ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। সিঙ্গাপুর থেকে ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সিডিএস জেনারেল চৌহান মেনে নেন, পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল। যদিও তার সংখ্যা স্পষ্ট করেননি তিনি। জানিয়েছিলেন, ভারত তার কৌশলগত ভুল বুঝতে পেরেছিল এবং ত্রুটি শুধরে নিয়ে একই কৌশলে আবার হামলা চালিয়েছিল। তাতে সাফল্য এসেছে।