Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
National

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক মানে ঠিক কী?

আবালবৃদ্ধবনিতার মুখে মুখে ঘুরছে এখন একটাই শব্দ। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। সকলেরই এক রকম ধারণা হয়েছে, যুদ্ধ বোধ হয় লেগেই গেল ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে। গভীর রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলির ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর খবরটা চাউর হয়ে যেতেই মানুষের ধারণা হয়েছে যুদ্ধটা শেষমেশ লেগেই গেল সীমান্তে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:৩৬
Share: Save:

আবালবৃদ্ধবনিতার মুখে মুখে ঘুরছে এখন একটাই শব্দ। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। সকলেরই এক রকম ধারণা হয়েছে, যুদ্ধ বোধ হয় লেগেই গেল ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে। গভীর রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলির ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর খবরটা চাউর হয়ে যেতেই মানুষের ধারণা হয়েছে যুদ্ধটা শেষমেশ লেগেই গেল সীমান্তে।

যদিও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ কোনও যুদ্ধ নয়। এমনকী, নয় কোনও ছায়া-যুদ্ধও। কোনও যুদ্ধের মহড়াও নয়। শব্দটা আমাদের কানে শুনতে নতুন লাগলেও, বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই কোনও না কোনও সময়ে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীকেই এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাতে হয়েছে। চালাতে হবে আগামী দিনেও।

কোনও দেশের সেনাবাহিনী এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামের হানাদারি চালায়, অতর্কিতে। কোনও প্রাক-ঘোষণা ছাড়াই। দেশের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক দীর্ঘ দিনের কোনও সমস্যা মেটাতে। তা সে কোনও অভ্যন্তরীণ শত্রু, সংস্থা বা সংগঠন হোক কিংবা বহিরাগত, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ সব সময়েই হঠাৎ করা হয়। আগেভাগে তার খবর ঘোষণা করা হয় না। খুব অল্প সময়ে, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে শত্রুদের গোপন ডেরা বা সুড়ঙ্গ বা কোনও দুর্গম, দুর্ভেদ্য ঘাঁটির ওপরে চালানো হয় এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। ওই হানাদারি চালিয়ে শত্রুদের ঘাঁটিগুলিকে গুঁড়িয়ে-উড়িয়ে দিয়ে আসার পর সেনাবাহিনী আর সেই এলাকায় মোতায়েন থাকে না বা সেই এলাকা দখল করে বসে থাকে না। হানাদারির উদ্দেশ্য সফল হলেই সেনাবাহিনী আবার দেশে বা তার আগের অবস্থানে ফিরে আসে। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়ে সেনাবাহিনী শত্রুদের আটক বা গ্রেফতার করে না। তাদের একেবারে নিকেশ করে দেয়। তুমুল গোলাবর্ষণে তাদের ঘাঁটিগুলি মাটিতে মিশিয়ে দেয়। এমন হানাদারিতে সবটাই সেনাবাহিনী করে প্রায় আলোর গতিতে।

দেখে নিন কী ভাবে হল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক

‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। যে দেশের সেনাবাহিনীই এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাক, তাদের নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব সামান্য রাখতে হয়। এমনকী, যে এলাকায় গিয়ে সেনাবাহিনী হামলা চালাচ্ছে, সেই এলাকার পরিধি যাতে খুব বেশি না বেড়ে বা ছড়িয়ে যায় বা যারা ‘টার্গেট’, তাদের ছাড়া যেন অন্য কেউ সেনাবাহিনীর ওই ‘স্ট্রাইকে’ না মারা যায় বা জখম হয়, সে দিকেও সেনাবাহিনীকে কড়া্ নজর রাখতে হয়। সে জন্যই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করতে হয় প্রায় আলোর গতিতে। আচমকা, চোখের পলক পড়ার আগেই।

‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করার জন্য সেনাবাহিনীর কোনও সবিস্তার পরিকল্পনা বা দফাওয়ারি বৈঠকেরও প্রয়োজন হয় না। সেনাবাহিনীর গুটিকয়েক সংশ্লিষ্ট কর্তার চটজলদি বৈঠকের পরেই দুম করে শুরু হয়ে যায় এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। আর মাছ নয়, তির ছোঁড়ার আগে ‘মাছের চোখ’ দেখার মতোই নিশানাকে নির্ভুল ভাবে বেছে নিতে হয়। এখানে ‘এটা না হলে, ওটা’ বা ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর মেথড’ খাটে না। একটাই নিশানা হবে, আর সেটাকেই নির্ভুল হতে হবে। আর একেবারে একশো ভাগ নিশ্চিত হয়েই সেই নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে হবে। এটাই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র মূল মন্ত্র। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী যেমন বুঝিয়ে বলেছেন, ‘‘কোনও সার্জেন যেমন তাঁর সার্জারিতে একমাত্র সেই জায়গাটাতেই ছুরি-কাঁচি চালান, ঠিক যেখানটায় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। শরীরের ভেতর ওই অঙ্গের আশপাশের এলাকাগুলিতে তখন ওই সার্জেনের ছুরি-কাঁচির ছোঁয়াচ লাগে না। এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ও ঠিক তেমনই।’’

ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার প্রবীর সান্যাল বলেন, ‘‘গত কাল রাতে ভারত যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে, তা বেশ বড় রকমের। আর সেই স্ট্রাইক অসম্ভব রকমের সফল হয়েছে। কারণ, অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে শত্রুশিবিরে হানা দেওয়া হয়েছে আর তাতে শত্রুশিবিরের অসম্ভব রকমের ক্ষতি হয়েছে। আর তার পরেও নিজেদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরে আসতে পেরেছে।’’

বহু দেশই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পর সেটা চেপে রাখতে চায়, বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায়। তাই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র সব ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে না বেশির ভাগ সময়েই। তবে নাগা জঙ্গি ঘাঁটিগুলি নির্মূল করতে গত জুনে মায়ানমারে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তাতে সেনাবাহিনীর ৭০ জন কম্যান্ডার ওই জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে নেমে ৪০ মিনিটের মধ্যে ৩৮ জন নাগা জঙ্গিকে নিকেশ করেছিল। শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই দমনেও এক বার ভারতীয় শান্তিরক্ষীবাহিনী চালিয়েছিল ওই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’।

আরও পড়ুন- নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বিধ্বস্ত জঙ্গিরা

কোনও ভাবেই জঙ্গি হামলা বরদাস্ত করা হবে না: রণবীর সিংহ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE