Advertisement
E-Paper

আমেরিকার উপর্যুপরি চাপের মুখেও ‘হাত গুটিয়ে’ ভারত, ট্রাম্প-নীতি নিয়ে নীরব থাকাই কি নয়া রণকৌশল মোদীর?

হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অ্যানা কেলির দাবি, কূটনৈতিক, প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্যিক অগ্রাধিকারের নানা বিষয়ে এখনও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে রয়েছে ভারত এবং আমেরিকার। যদিও ভারত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৪২
(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

ভারতের উপর দিনে দিনে চাপ বাড়াচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কখনও ভারতের অর্থনীতিকে চিহ্নিত করছেন ‘মৃত অর্থনীতি’ হিসাবে। কখনও রাশিয়ার থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসাবে ভারতীয় পণ্যের উপর বসাচ্ছেন ৫০ শতাংশ শুল্ক। কিন্তু আমেরিকার একের পর এক আক্রমণের মুখোমুখি হয়েও তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি ভারত। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টে প্রকাশ, একে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক কৌশল হিসাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদনের দাবি, এ ধরনের পদক্ষেপে আখেরে লাভ হতে পারে ভারতেরই। কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ভূ-রাজনীতি বিশেষজ্ঞ অ্যাশলে টেলিসের কথায়, ‘‘এক কথায়, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই এখন ভারতের নতুন রণকৌশল। ভারত সরকার যেমন জনসাধারণের সামনে প্রশংসনীয় সমতার ভাবমূর্তি বজায় রেখেছে, তেমনই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পথও উন্মুক্ত রয়েছে।’’ ভারতের এক উচ্চপদস্থ কর্তাও জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বছরের পর বছরের পরিশ্রমে গড়ে তোলা সুসম্পর্ক এত সহজে নষ্ট করতে চায় না নয়াদিল্লি। তাই জেনেবুঝেই এই ‘সংযম’।

চলতি মাসের শুরুতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, সাম্প্রতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। মোদীও সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুভূতি এবং দুই দেশের সম্পর্কের ইতিবাচক মূল্যায়নকে উপলব্ধি করতে পারছি। তার প্রতিদানও দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ এর মাঝে গত বুধবার ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে জানান, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই একটি সফল সিদ্ধান্তে পৌঁছোবে দুই দেশ। শীঘ্রই তাঁর ‘অন্যতম ভাল বন্ধু’ মোদীর সঙ্গে কথা বলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলেও জানান ট্রাম্প। যদিও বাস্তবতাটা আদৌ এমন নয়। এ সব সৌজন্যবার্তার অনেক আগেই প্রায় তলানিতে ঠেকেছে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক।

ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব শ্যাম শরণ বলেন, গত ২৫ বছর ধরে আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় ছিল ভারতের। ট্রাম্পের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন মোদী। তবে চলতি বছরে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহামলার পর থেকেই যেন অবনতি হতে শুরু করেছে সে সম্পর্কের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারত-পাক যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার কৃতিত্ব দাবি করলেও তা স্বীকার করেনি ভারত। কানাডায় জি৭ শীর্ষসম্মেলন থেকে ফেরার পথে ট্রাম্প মোদীকে ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তা-ও প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। এর পর থেকেই রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা নিয়ে ভারতের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে ট্রাম্পের দেশ। ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, নয়াদিল্লির এই বাণিজ্যনীতির কারণেই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছে রাশিয়া। এতে অর্থসাহায্য হচ্ছে মস্কোর। কারণ, ভারত তেল বাবদ যে অর্থ দিচ্ছে, তা যুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ-ও দাবি, পরোক্ষে ইউক্রেনের প্রাণহানির জন্য দায়ী ভারতই। যদিও নয়াদিল্লির তরফে এই যুক্তি গ্রাহ্য করা হয়নি। বরং একই যুক্তিতে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য চিন বা অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করছে না হোয়াইট হাউস, সেই প্রশ্ন তুলেছে ভারত।

তবে এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হয়েছেন মোদী। ট্রাম্প প্রশাসন সূত্রে খবর, বাণিজ্য নিয়ে অচলাবস্থা ভাঙতে আমেরিকা গত ২৮ জুলাই ভারতের সঙ্গে ফোনে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তাতে আগ্রহ দেখায়নি ভারত। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির আবহে বরং চিনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। এমনকি, অগস্টের শেষের দিকে এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে গত সাত বছরে প্রথম বার চিন সফরেও যেতে দেখা গিয়েছে মোদীকে, যেখানে উপস্থিত ছিল রাশিয়াও!

হোয়াইট হাউসের এক কর্তা সার্জিও গোর জানিয়েছেন, একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহেই ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর। শুধু তা-ই নয়, সোমবার রাতে ভারতে আসার কথা বাণিজ্যচুক্তি সংক্রান্ত মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রধান ব্রেন্ডন লিঞ্চের। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অ্যানা কেলি-ও জানিয়েছেন, কূটনৈতিক, প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্যিক অগ্রাধিকারের নানা বিষয়ে এখনও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে রয়েছে ভারত এবং আমেরিকার। যদিও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

India US Relations US Donald Trump Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy