Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ফিরে এসে কী বলবেন রাহুল, উদ্বেগ দলে

কী রাজকার্য করছিলেন এত দিন— এমন কটাক্ষ বিরোধীরাও করবেন না তাঁকে। প্রশ্নটা বরং হতে পারে, রাজকার্যের বাইরে এত দিন কী করছিলেন তিনি? দল জানিয়েছিল, ছুটি নিয়েছেন রাহুল গাঁধী। দেখতে দেখতে তা-ও দু’মাস হতে চলল তাঁর অজ্ঞাতবাসের। কাল সকালে, হয়তো বা আজ বেশি রাতে ফিরতে পারেন কংগ্রেস সহসভাপতি। কিন্তু এসে কী বলবেন তিনি? এটাই এখন বড় ভাবনা দলের। বিশেষ করে রাহুলের পরামর্শদাতাদের মধ্যে বইছে উদ্বেগের চোরা স্রোত। ফিরে এসে অজ্ঞাতবাসের কী ব্যাখ্যা দেবেন সহসভাপতি?

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

কী রাজকার্য করছিলেন এত দিন— এমন কটাক্ষ বিরোধীরাও করবেন না তাঁকে। প্রশ্নটা বরং হতে পারে, রাজকার্যের বাইরে এত দিন কী করছিলেন তিনি? দল জানিয়েছিল, ছুটি নিয়েছেন রাহুল গাঁধী। দেখতে দেখতে তা-ও দু’মাস হতে চলল তাঁর অজ্ঞাতবাসের। কাল সকালে, হয়তো বা আজ বেশি রাতে ফিরতে পারেন কংগ্রেস সহসভাপতি। কিন্তু এসে কী বলবেন তিনি? এটাই এখন বড় ভাবনা দলের। বিশেষ করে রাহুলের পরামর্শদাতাদের মধ্যে বইছে উদ্বেগের চোরা স্রোত। ফিরে এসে অজ্ঞাতবাসের কী ব্যাখ্যা দেবেন সহসভাপতি?

দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্যের মতে, রাহুলের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে এটাই। কারণ, দেশ জানতে চাইবে, কোথায় ছিলেন রাহুল? নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমি নীতির বিরোধিতায় যখন খোদ সনিয়া গাঁধী পথে নেমেছেন, যখন সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে আদালত সমন পাঠাচ্ছে, দলের সেই উত্তেজনাময় রাজনৈতিক প্রহরে কী করছিলেন তিনি? সনিয়ার রাজনৈতিক পরামর্শদাতারাও মনে করছেন, রাহুলকে এই ব্যাখ্যা দিতেই হবে। ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলে চলবে না। আবার কোথায় গিয়েছিলেন, তা নিয়ে মিথ্যাও বলা যাবে না। কারণ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে সব তথ্য রয়েছে। মিথ্যা বললে, বিজেপি পরে তা নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা করতে পারে!

দলে কেউ কেউ এমন প্রশ্নও তুলছেন, রাহুল সেই জবাব না দিলে ক্ষতি কী? কংগ্রেসের শীর্ষ সারির নেতারা কিন্তু বলছেন, গত লোকসভা ভোটে রাহুল কার্যত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। দলের ভবিষ্যৎ নেতা তিনি। দুম করে তিনি কেন ছুটি নিলেন, কী করলেন তা সাধারণ মানুষ থেকে নীচুতলার কংগ্রেস কর্মীদের সামনে যুক্তিগ্রাহ্য ভাবে তুলে ধরা দরকার। নয়তো রাহুলের ‘সিরিয়াসনেস’ নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতারা সনিয়ার দৃষ্টান্তও তুলে ধরছেন। তাঁদের মতে, অসুস্থতার কারণে সনিয়াও ছুটি নিয়েছিলেন। ছুটির কারণটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয় বলে কংগ্রেস জানিয়েছিল। কিন্তু পরক্ষণেই ঘরোয়া বৈঠকে দলের নেতারা মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, চিকিৎসার কারণে আমেরিকা গিয়েছেন সনিয়া। কোন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে, তা-ও গোপন ছিল না। কিন্তু রাহুলের ক্ষেত্রে তেমন ঘটেনি। দল শুধু জানিয়েছিল, ‘আত্মমন্থন’-এর জন্য ছুটি নিয়েছেন। তিনি দেশে আছেন না বিদেশে, তা-ও জানানো হয়নি। দলীয় নেতাদের মতে, ১৯ এপ্রিল কংগ্রেসের কিষাণসভার মঞ্চ থেকে হোক বা পৃথক ভাবে রাহুলকে সেই ব্যাখ্যা এ বার দিতে হবে।

শুধু অজ্ঞাতবাসের ব্যাখ্যা নয়, রাহুলকে ঘিরে গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের অন্য উদ্বেগও রয়েছে। এ বছর কংগ্রেসের সভাপতি পদে রাহুলের অভিষেক হবে বলে স্থির করে ফেলেছিলেন সনিয়া। কিন্তু সনিয়ার আস্থাভাজনরাই মনে করছেন, দলে তা রোখার চেষ্টা শুরু হয়েছে। রাহুল সভাপতি হলে সবার আগে সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের পদ যাওয়ার আশঙ্কা। সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে জনার্দন দ্বিবেদী, শাকিল আহমেদ, মোহন প্রকাশ, মধুসূদন মিস্ত্রীদেরও সরানো হতে পারে। রাহুল-ঘনিষ্ঠদের আশঙ্কা, আহমেদ পটেলরা সম্মানজনক পুনর্বাসন না পেলে রাহুলের অভিষেক মসৃণ হতে দেবেন না। রাহুলের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে আরও কিছু গোষ্ঠী। শীলা দীক্ষিত, অমরেন্দ্র সিংহরা প্রকাশ্যেই সওয়াল করছেন, সভানেত্রী পদে সনিয়ারই কাজ চালিয়ে উচিত। এটাও আশঙ্কায় রাখছে রাহুল-শিবিরকে।

টিম-রাহুলের এক সদস্য বলেন, ‘‘একটি বিদেশি সংবাদ প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি সমীক্ষা করে দেখেছে যে, গত জানুয়ারি থেকে মিডিয়া রাহুলকে নিয়ে অনেক বেশি লেখালেখি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন সংবাদপত্রে ৪১৯ বার রাহুলের নাম প্রকাশিত হয়েছে, অথচ এ বছর মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার। অর্থাৎ রাহুলকে নিয়ে কৌতূহল রয়েছে এবং তিনি প্রচারে রয়েছেন।’’ কংগ্রেস নেতাটি যেটা বললেন না, তা হল নেতিবাচক কারণে প্রচারে থাকাটাকেও লাভজনক মনে করেন অনেক তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী। কিন্তু শীর্ষস্থানীয় কোনও রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর ক্ষেত্রে ইতিবাচক কারণে প্রচারে থাকাটা জরুরি। দলে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাহুলকে এ বার ইতিবাচক কারণে প্রচারে থাকার জন্যও একটা সমান্তরাল লড়াই চালাতে হবে।

এখন প্রশ্ন রাহুল কখন ফিরছেন? নাকি ফিরে এসেছেন? ঘটনা হল, এক পাঁচিলের এ-ধার ও-ধার হলেও অরাজনৈতিক কারণে, ১০ জনপথ ও ২৪ আকবর রোডের মধ্যে গাঁধী পরিবারের লোকজনের গতিবিধির খবর চালাচালি হয় না বড় একটা। দু’-তিন জন কংগ্রেস নেতার কাছে সেই খবর থাকলেও ভক্তিতে হোক বা পদে থাকতে তাঁরা তা পাঁচকান করেন না। তবু কংগ্রেস মহলে খবর, প্রায় দু’মাস অজ্ঞাতবাসের পর আজ রাতে বা কাল ফিরবেন রাহুল। আগামী রবিবার তো তাঁকে দেখাই যাবে রামলীলা ময়দানের মঞ্চে। কেমন চেহারায়? তা নিয়েও কৌতূহল কম নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE