জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগের গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন উমর নবি। দিল্লিতে লালকেল্লার সামনে যে গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার চালকের আসনে ছিলেন এই কাশ্মীরি চিকিৎসক। বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উমর বরাবর ছিলেন কট্টরপন্থী মানসিকতার। কাশ্মীরের হাসপাতালে থাকাকালীনও তার পরিচয় মিলেছে একাধিক বার। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের মহিলা রোগীদের পোশাক নিয়ে মাঝেমধ্যে আপত্তি জানাতেন উমর। কট্টর ভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে না-দেখলেই তিনি অসন্তুষ্ট হতেন।
উমরের সহকর্মীদের মতে, মাঝেমধ্যেই হাসপাতালের কিছু মহিলা রোগীকে চিহ্নিত করতেন তিনি। তাঁরা নিজেদের মাথা ভাল করে ঢাকেননি বলে আপত্তি করতেন। তাঁদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন, ‘‘আপনি কেন হিজাব পরেননি? আপনার মাথা ঠিক করে ঢাকা নেই কেন?’’ এ ছাড়া, দিনে কে কত বার নমাজ পড়েন, তা-ও জিজ্ঞেস করতেন উমর। প্রাক্তন সহকর্মীরাই অনেকে তাঁকে ‘কট্টরপন্থী’ বলে চিহ্নিত করেছেন। অভিযোগ, ক্লাসে পড়ুয়াদের মধ্যেও তিনি নারী-পুরুষের বিভেদ করতেন। তাঁর ব্যবহারে বিরক্ত হয়েছেন এমন রোগীদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেছিলেন। এর পরেই অনন্তনাগের হাসপাতাল থেকে উমরের চাকরি গিয়েছিল।
আরও পড়ুন:
কাশ্মীর ছেড়ে এর পর উমর চলে এসেছিলেন হরিয়ানার ফরিদাবাদে। সেখানে আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই চাকরি পেয়ে যান উমর। তদন্তকারীদের অনুমান, সেখানে বসেই দিল্লি-সহ একাধিক শহরে বিস্ফোরণের ছক কষেছিলেন।
গত ১০ নভেম্বর লালকেল্লার সামনে ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা রঙের হুন্ডাই আই২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। তাতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন উমর নিজে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। গাড়িটি চালিয়ে ফরিদাবাদ থেকে রাজধানীতে এসেছিলেন উমর। অন্তত দু’কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করা ছিল ওই গাড়িতে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ঘটনার দিন বিকেলে লালকেল্লার সামনের একটি পার্কিংয়ে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা উমরের গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। অনেকে মনে করছেন, সেই সময়েই বোমা তৈরি করেছিলেন উমর। তিনি বোমা তৈরিতে পারদর্শী ছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। দিল্লির ঘটনায় ফরিদাবাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও কয়েক জন চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলার তকমা দিয়েছে ভারত সরকার।