Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Coromandel Express accident

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে, লাইন সারিয়ে কবে স্বাভাবিক হতে পারে ট্রেন চলাচল? এখনও জানে না দক্ষিণ-পূর্ব রেল

দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের কামরাগুলো একটার গায়ে আর একটা উঠে পড়েছে। কোনওটা উল্টে গিয়েছে। কয়েকটা পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে। মালগাড়ির উপরে উঠে পড়েছে আস্ত ইঞ্জিন।

When Rail services resumed after Coromondel express accident in Odisha

দুর্ঘটনাস্থলে উঠে গিয়েছে রেলের স্লিপার। —পিটিআই

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ১৩:২৬
Share: Save:

বিক্ষিপ্ত ভাবে পড়ে রয়েছে তিনটি ট্রেনের অংশ। বেঁকেচুরে যাওয়া কামরাগুলো চারটে লাইন জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ওড়িশার বালেশ্বরে দুর্ঘটনাস্থলের ছবিটা এককথায় এই রকমই। তবে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির পর এখন যে প্রশ্নটা উঠছে, তা হল ওই পথ দিয়ে দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেন পরিষেবা আবার কবে স্বাভাবিক হবে? রেলের তরফে সরকারি ভাবে এখনও এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে রেলের উদ্ধার সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের একাংশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, অন্তত সোমবারের আগে ধ্বংসস্তূপ সরানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হতে পারে মঙ্গলবার।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধরি জানিয়েছেন, কবে ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, হতাহতদের উদ্ধার করাকেই তাঁরা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে আতঙ্কিত যাত্রীদের যে বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে, তার নির্যাস অনেকটা এই রকম— ট্রেনের কামরা একটার গায়ে আর একটা উঠে পড়েছে। কোনওটা উল্টে গিয়েছে। তাদের চাকাগুলো উপরের দিকে। কয়েকটা পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে। মালগাড়ির উপরে উঠে পড়েছে আস্ত একটা ইঞ্জিন। যেন উড়ে গিয়ে ঘাড়ের উপর চড়ে বসেছে! রেলের লাইন বলতে কিছুই নেই। সিমেন্টের স্লিপারগুলি ভেঙেচুরে, লোহার রড বেরিয়ে একেবারে কঙ্কালসার। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। ইতস্তত ছড়িয়ে মৃতদেহ। সাদা কাপড়ে ঢাকা। তার মধ্যেই ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। চিৎকার। আর্তনাদ। আর সব কিছু ছাপিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দ।

এই লন্ডভন্ড চিত্রটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, উদ্ধারকাজে গতি আনলেও ট্রেন পরিষেবা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে। সে ক্ষেত্রে শনিবার দুপুরের মধ্যে হতাহতদের উদ্ধার করা গেলেও, ধ্বংসস্তূপ সরাতে আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা লাগতে পারে রেল কর্তৃপক্ষের। শুক্রবারের পর শনিবারও এই রুট দিয়ে যাওয়া অধিকাংশ ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ পরিবর্তন করা হয়েছে।

বাতিল ট্রেনের তালিকায় রয়েছে— হাওড়া-পুরী-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, হাওড়া-পুরী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, হাওড়া-সেকন্দ্রাবাদ ফলকনুমা এক্সপ্রেস, হাওড়া-বেঙ্গালুরু দুরন্ত এক্সপ্রেস, হাওড়া-তিরুপতি হমসফর এক্সপ্রেস, হাওড়া-তিরুপতি হমসফর এক্সপ্রেস, হাওড়া-চেন্নাই মেল, হাওড়া-জলেশ্বর বাঘাযতীন এক্সপ্রেস, সেকেন্দরাবাদ-হাওড়া ফলকনুমা এক্সপ্রেস।

এ ছাড়া খড়্গপুর থেকেও বাতিল করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেন। সেগুলি হল— খড়্গপুর-খুড়দা রোড এক্সপ্রেস, খড়্গপুর-জাজপুর এক্সপ্রেস, খড়্গপুর-ভদ্রক-খড়্গপুর মেমু স্পেশাল।

শালিমার স্টেশন থেকে বাতিল করা হয়েছে— শালিমার-হায়দরাবাদ ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস, পুরী-শালিমার-পুরী ধৌলী এক্সপ্রেস, শালিমার-পুরী এক্সপ্রেস।

বাতিল ট্রেনের তালিকায় রয়েছে, জলেশ্বর-পুরী-জলেশ্বর মেমু স্পেশাল, বালেশ্বর-ভুবনেশ্বর মেমু স্পেশাল, বাংরিপসি-পুরী-বাংরিপোসি সুপারফাস্ট, বালেশ্বর-ভদ্রক-বালেশ্বর মেমু স্পেশাল, ভদ্রক-হাওড়া বাঘাযতীন এক্সপ্রেস, জাজপুর কেওনঝড়-খড়্গপুর মেমু, জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, হাওড়া-পুরী-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেস, পুরী-আনন্দবিহার নন্দনকানন এক্সপ্রেস, পুরী-পটনা এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি সুফারফাস্ট এক্সপ্রেস, চেন্নাই-শালিমার করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং পুরী-হাওড়া সুফারফাস্ট এক্সপ্রেস। বাতিল করা হয়েছে পুরী-শালিমার জগন্নাথ এক্সপ্রেস, পুরী-ভঞ্জপুর স্পেশাল, পুরী-সাঁতরাগাছি স্পেশাল, কন্যাকুমারী-হাওড়া সুফারফাস্ট, দিঘা-পুরী-দিঘা সুপারফাস্ট, বেঙ্গালুরু-কামাখ্যা সুপারফাস্ট, বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট, বেঙ্গালুরু-ভাগলপুর অঙ্গ এক্সপ্রেস।

দুর্ঘটনার কারণে বেশ কয়েকটি ট্রেনের পথ পরিবর্তন করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সাঁতরাগাছি-চেন্নাই সেন্ট্রাল এসএফ এক্সপ্রেস, দিঘা-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস, হাওড়া-মাইসুরু এক্সপ্রেস-সহ একাধিক ট্রেন। জলেশ্বর-পুরী এক্সপ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি ট্রেন সংক্ষিপ্ত যাত্রাপথে চলবে বলেও রেলের তরফে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে বালেশ্বর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, একটি মালগাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে ট্রেনটির। দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে পাশের লাইন দিয়ে আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। ডাউন লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত কামরাগুলির উপর এসে পড়ে বেঙ্গালুরু-হাওড়া ডাউন ট্রেনটি। সঙ্গে সঙ্গে হাওড়াগামী সেই ট্রেনটির দু’টি কামরাও লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে নিহত এবং আহতের সংখ্যা। শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত রেল সূত্রে মৃতের সংখ্যা ২৬১ বলে জানানো হয়েছে। আহত ৬৫০ জনেরও বেশি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coromandel Express accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE