১০ মাস পরে ফের মুখোমুখি বৈঠকে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রবিবার চিনের তিয়ানজিন শহরে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে জিনপিং এবং মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকে চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আমাদের পারস্পরিক সংহতির উপর ভারত এবং চিনের ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। এতে সারা পৃথিবীর কল্যাণ হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমরা এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী।’’
মোদীকে স্বাগত জানিয়ে জিনপিংও পারস্পরিক সমন্বয়ের বার্তা দেন। বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, আপনার সঙ্গে আবার দেখা হল, ভাল লাগছে। এসসিও সম্মেলনের জন্য চিনে আপনাকে স্বাগত। গত বছর (রাশিয়ার) কাজ়ানে আমাদের বৈঠক সফল হয়েছিল। এই পৃথিবী একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে। চিন এবং ভারত সবচেয়ে সভ্য দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। আমরা বিশ্বের দু’টি সবচেয়ে জনবহুল দেশ। আমাদের বন্ধুত্ব, প্রতিবেশী হিসাবে একে অপরের পাশে থাকা জরুরি। ড্রাগন এবং হাতির একজোট হওয়া দরকার।’’ দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
কৌশলগত স্বাধীনতা
জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠকে মোদী জানান, দুই দেশেরই পারস্পরিক কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র বজায় রাখা উচিত। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, পারস্পরিক সম্পর্ককে কখনও তৃতীয় কোনও দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়। বিবিধ আন্তর্জাতিক বিষয়ে যৌথ ভাবে কাজ করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন মোদী এবং জিনপিং। পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক বরাবরই বেশ ‘নিবিড়’। ‘তৃতীয় দেশের দৃষ্টিকোণ’ বলে মোদী সে দিকেই ইঙ্গিত করলেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সীমান্তে ‘দোস্তি’
জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠকে মোদী জানান, ভারত-চিন সীমান্তে শান্তি এবং সুস্থিতি রয়েছে। তিনি বলেন, “সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের (ভারত এবং চিন) একটি বোঝাপড়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গলওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা প্রতিরোধে বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হন। গলওয়ানকাণ্ডের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য বৈঠক শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চুশুল-মলডো পয়েন্টে দুই সেনার কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কিছু এলাকা থেকে সেনা সরানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সমাপ্ত হয় সেই প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন:
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতা
চিনের তিয়ানজিন শহরে চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং প্রধানমন্ত্রী মোদীর বৈঠকে উঠে এসেছিল সীমান্তপারের সন্ত্রাস প্রসঙ্গ। রবিবার ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী জানান, জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সীমান্তপারের সংঘাতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বোঝান যে, এই সন্ত্রাসবাদ ভারত এবং চিন, দুই দেশকেই প্রভাবিত করছে। তাই সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ রুখতে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ জরুরি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরাসরি বিমান যোগাযোগ
পাঁচ বছর পর ফের কৈলাস ও মানস সরোবর যাত্রা শুরু হয়েছে। বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মোদী জানান, দুই দেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা শীঘ্রই শুরু হবে। প্রসঙ্গত, কোভিডের বাড়বাড়ন্তের পর থেকে ভারত এবং চিনের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা স্থগিত হয়ে যায়। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গালওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন। সেখান থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা তৈরি হয়েছিল। সেই অবস্থায় করোনার প্রভাব কাটলেও আর দুই দেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা চালু হয়নি। এ বার সেই পরিষেবা দ্রুত শুরু করতে চাইছে দুই দেশ।
বাণিজ্য এবং দুষ্প্রাপ্য খনিজ
সীমান্তবাণিজ্য ফের শুরু করার বিষয়ে মোদী এবং জিনপিং দু’জনেই একমত হন। দুষ্প্রাপ্য খনিজ, কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার এবং টানেল বোরিং মেশিন বা সুড়ঙ্গ খনন করার যন্ত্র আমদানির জন্য ভারত চিনের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কেন্দ্রের একটি সূত্রের খবর, এই পণ্যগুলি ভারতে সরবরাহ করার বিষয়ে মোদীকে আশ্বস্ত করেছেন জিনপিং। করোনা অতিমারির আবহে ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সীমান্ত বাণিজ্য। তার পর পরই লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারত-চিন সংঘর্ষ হয়। সেই থেকে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধই রয়েছে। তবে এ বার ফের সীমান্তবাণিজ্য শুরু করতে চাইছে দুই দেশই।