প্রথম বারের বিধায়ককেই যে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করা যায় রাজস্থানে ১৪ মাসে আগেই তা করে দেখিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। বসুন্ধরা রাজে, সিপি জোশীর মতো হেভিওয়েটদের দূরে সরিয়ে বেছে নিয়েছিলেন আনকোরা ভজনলাল শর্মাকে। ২৭ বছর বাদে ক্ষমতা দখলের পরে এ বার দিল্লিতেও প্রথম বারের বিধায়ক রেখা গুপ্তের উপরেই ভরসা রাখলেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে যিনি এখনও দিল্লি পুরসভার কাউন্সিলর।
প্রথম বার বিধায়ক হলেও দিল্লির পুরভোটে টানা তিন বার জিতেছেন রেখা। শেষ বার ২০২২-এর ডিসেম্বরে। কিন্তু তার পরেই মেয়র নির্বাচন ঘিরে বেধেছিল গন্ডগোল। তিন বার ভেস্তে যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে মেয়র নির্বাচনে আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রার্থী শেলি ওবেরয় ৩৪ ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির রেখাকে। আর এক ফেব্রুয়ারি তাঁর কাছে এনে দিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রিত্ব।
আরও পড়ুন:
এ বারের বিধানসভা ভোটে চাঁদনি চক এলাকার শালিমার বাগ কেন্দ্রে তিন বারের আপ বিধায়ক বন্দনা কুমারীকে সাড়ে ২৯ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছেন রেখা। ২০১৫ এবং ২০২০ সালে এই আসনেই বন্দনার কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন রেখা। ঘটনাচক্রে, ১৯৯৮ সালে দিল্লির ক্ষমতা হারানোর সময়ও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন এক মহিলা নেত্রী— সুষমা স্বরাজ। সুষমা, শীলা দীক্ষিত, আতিশী মার্লেনার পরে চতুর্থ মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দিল্লি পেল রেখাকে।
হরিয়ানার জুলানায় ১৯৭৪ সালে রেখার জন্ম। পড়াশোনা, দিল্লির দৌলতরাম কলেজ এবং উত্তরপ্রদেশের মেরঠের চরণ সিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বণিক (বানিয়া) সমাজের প্রতিনিধি রেখা নব্বইয়ের দশকে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপির নেত্রী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। সে বার সভাপতি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন এ বারের বিধানসভা ভোটে জামানত হারানো কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা। ১৯৯৬ সালে রেখা জেতেন সভাপতি নির্বাচনে। ২০০৭ সালে প্রথম বার দিল্লির পুরভোটে জিতেছিলেন। হয়েছিলেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আরএসএসের সদস্য রেখা বর্তমানে বিজেপির মহিলা মোর্চার অন্যতম সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি।
আরও পড়ুন:
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছিল ৪৮টিতে। মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা নিজে জিতলেও, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর হেরে গিয়েছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ। তারা পেয়েছে মাত্র ২২টি আসন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বিজেপির জয়ের ফলে আবার দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা থেকে যাবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বুধের সন্ধ্যায় সেই জল্পনার নিরসন ঘটালেন রেখা।