রোহিত আর্য। বৃহস্পতিবারের পর থেকে তিনি গোটা দেশে অপহরণকারী হিসাবেই পরিচিত। মুম্বইয়ের পওয়াইয়ে একটি স্টুডিয়োয় বৃহস্পতিবার ১৭ শিশুকে পণবন্দি করায় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে রোহিতের মৃত্যুর পর থেকে কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। কেন তিনি এ কাজ করতে গেলেন? কোন দাবি এবং প্রশ্নের কথা বলছিলেন তিনি? রোহিতের এই ধরনের কাণ্ডে হতবাক তাঁর প্রতিবেশীরাও।
পুণের কোথরুড়ের শিবতীর্থ এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন রোহিত। বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান ছাড়াও বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারের ঘটনার এক সপ্তাহ আগে কোথরুড়ের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্রতিবেশীরা জানান, গত কয়েক দিন ধরেই রোহিতকে এলাকায় দেখা যায়নি। তাঁরা কোথায় গিয়েছেন কেউ জানতেনও না। তাঁর স্ত্রী পানভেলে কাজ পাওয়ায় মুম্বইয়ের চেম্বুরে সপরিবার চলে এসেছিলেন রোহিত। চেম্বুরের যে ফ্ল্যাটে রোহিত থাকতেন, সেটি তাঁর আত্মীয়ের। কর্মসূত্রে তিনি আবার বিদেশে থাকেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজ়নেস থেকে পড়াশোনার পর নিজের একটি সংস্থা খোলেন রোহিত। তাঁর সংস্থা সরকারের সামাজিক সচেতনতামূলক প্রকল্পের কাজগুলির সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে অনেক কাজ করেছে রোহিত এবং তাঁর সংস্থা। সামাজিক সচেতনতামূলক ছোট ছোট ভিডিয়ো বানাতেন তিনি। রমেশ দেওকে নিজের গুরু বলে দাবি করতেন রোহিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল বলে দাবি করেছিলেন রোহিত।
শিবসেনা নেতা তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী দীপক কেসরকর জানিয়েছেন, তিনি যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন (২০২২-’২৪), সেই সময় রোহিতকে স্বচ্ছতা নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ‘স্বচ্ছতা মনিটর’ পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করতে বলেছিলেন। তিনি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে এই কাজ চালানোর জন্য রোহিতকে টাকা দিয়েছিলেন। কেসরকরের দাবি, রোহিত তাঁর কাছে অভিযোগ জানান যে, শিক্ষা দফতর এই কাজের জন্য তাঁর বকেয়া আটকে দিয়েছে। তখন তিনি নিজেই তাঁকে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু রোহিত অভিযোগ তোলেন, কাজ করার পরেও তাঁর সংস্থার টাকা আটকে রেখেছে সরকার। বকেয়া টাকা দেওয়া হচ্ছে না। যদিও রোহিতের সমস্ত অভিযোগ এবং দাবি খণ্ডন করেছে রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার পওয়াইয়ের একটি স্টুডিয়োয় অডিশনের আয়োজন করেছিলেন রোহিত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটি ওয়েব সিরিজ় বানানোর প্রস্তুতি চলছিল। তারই চূড়ান্ত অডিশন ছিল স্টুডিয়োয়। প্রায় একশো ছেলেমেয়ে অডিশনে আসে। পুলিশ সূত্রে খবর, রোহিত বেশির ভাগ শিশুকে চলে যেতে বলেন। তার পর ১৭টি শিশুকে নিয়ে স্টুডিয়োয় ঢুকে পড়েন। তার পরই একটি ভিডিয়োবার্তায় দাবি করেন, শিশুদের তিনি পণবন্দি করেছেন।