Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বসুন্ধরাকে চাপে ফেলতে আরও চার নথি কংগ্রেসের

ঢোলপুরের প্রাসাদ তা হলে কার? সরকারের না কি ঢোলপুরের একদা মহারানি তথা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া ও তাঁর পুত্র দুষ্মন্ত সিংহের? এ ব্যাপারে বসুন্ধরাকে আজ আরও ফ্যাসাদে ফেলতে চারটি নতুন নথি প্রকাশ করল কংগ্রেস।

মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে জয়রাম রমেশ। ছবি: পিটিআই।

মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে জয়রাম রমেশ। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ১৫:৫৮
Share: Save:

ঢোলপুরের প্রাসাদ তা হলে কার?

সরকারের না কি ঢোলপুরের একদা মহারানি তথা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া ও তাঁর পুত্র দুষ্মন্ত সিংহের?

এ ব্যাপারে বসুন্ধরাকে আজ আরও ফ্যাসাদে ফেলতে চারটি নতুন নথি প্রকাশ করল কংগ্রেস। ললিত মোদীর সঙ্গে বসুন্ধরার অশুভ আর্থিক আঁতাতের কথা চাউর করতেই গতকাল ঢোলপুরের অন্দরমহলের কেচ্ছা হাটখোলা করতে চেয়েছিল কংগ্রেস। জাতীয় রাজনীতির অন্যতম বিরোধী দলের দাবি ছিল, স্বাধীনতার পর রাজস্থানের ঢোলপুর রাজওয়াড়া ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন মহারাজা উদয়ভান সিংহ। তখনই স্থির হয়, আগ্রা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ঢোলপুরের লাল বেলেপাথর (স্যান্ডস্টোন) দিয়ে গড়া এই প্রাসাদ সরকারের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ খণ্ডন করে বসুন্ধরা ঘনিষ্ঠ রাজস্থানের বিজেপি সভাপতি অশোক পারনামি দাবি করেন, মহারাজা হেমন্ত সিংহের সঙ্গে বসুন্ধরার বিবাহ বিচ্ছেদের পর আদালতের হস্তক্ষেপে যে সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা হয় তাতে ওঁদের পুত্র দুষ্মন্ত সিংহ প্রাসাদের মালিকানা পান।

বিজেপি-র ‘মিথ্যা দাবির এই ফানুস’ ফুটো করতে কংগ্রেস গতকালই ভেবেছিল নতুন চার প্রস্থ নথিপত্র বের করবে। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা পরে ঠিক করেন, ব্যাপারটা রসিয়ে রসিয়ে কেচ্ছার ব্যাপারটা জিইয়ে রাখতে। তাই আজ দুপুরে এ ব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। বলেন, ‘‘যত দিন না বসুন্ধরার ইস্তফা চেয়ে দুর্নীতির মামলার ‘ক্লোজার’ (নিষ্পত্তি) করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তত দিন রোজ ‘ডিসক্লোজার’ (তথ্য ফাঁস) চলবে। দেখা যাক, প্রধানমন্ত্রী আর ক’দিন কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোতে পারেন!’’ এ কথা বলেই জাতীয় সংগ্রহশালা থেকে ১৯৪৯ সালের একটি কাগজ ঝোলা থেকে বের করেন জয়রাম। যাতে লেখা রয়েছে, ঢোলপুরের রাজওয়াড়া ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পর কিছু সম্পত্তি রাজা উদয়ভান সিংহের কাছে থাকবে। কিছু চলে যাবে সরকারি মালিকানায়। যেমন, দিল্লিতে ঢোলপুর হাউজে এখন ইউপিএসসি-র সদর কার্যালয় রয়েছে। অর্থাৎ, তা ভারত সরকারের সম্পত্তি হয়েছে। তেমনই ঢোলপুর প্রাসাদের ক্ষেত্রে বলা ছিল, রাজা উদয়ভান সিংহ যত দিন জীবিত থাকবেন, তত দিন ওই প্রাসাদে তিনি থাকতে পারবেন। সে জন্য পরিচারক, আর্দালি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পোহাতে হবে তাঁকে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ওই প্রাসাদ সরকারি মালিকানায় চলে যাবে।

কংগ্রেসের দ্বিতীয় অভিযোগ, ২০১০ সালে ঢোলপুর প্রাসাদ চত্বরের ৬০০ বর্গমিটার জমি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করেছিলেন। সে জন্য ওই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রায় ২ কোটি ক্ষতিপূরণ নেন দুষ্মন্ত সিংহ। কিন্ত তা ছিল বেআইনি। কারণ ওই প্রাসাদ বা জমির মালিক তিনি নন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের মামলা দাবি করে আবেদন জমা পড়ে তিন বছর পর। কংগ্রেসের সবর্শেষ বক্তব্য হল, ২০০৭ সালে মহারাজা হেমন্ত সিংহের সঙ্গে তাঁর ছেলে দুষ্মন্ত সিংহের সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে রফা হয়েছিল অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। ওই আদেশনামা আজ প্রকাশ করে কংগ্রেস। তাতে লেখা রয়েছে ঢোলপুর প্রাসাদের একমাত্র আসবাব সমেত অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি দুষ্মন্ত সিংহের। ওই আদেশনামায় হেমন্ত ও দুষ্মন্তের সাক্ষরও রয়েছে।

জয়রাম বলেন, গতকাল এই কাগজটি দেখিয়েই সংবাদমাধ্যমকে বোকা বানাতে চেয়েছিলেন বসুন্ধরার অনুগামীরা। কিন্তু চালাকি ধরা পড়ে গিয়েছে। যদিও রাজস্থান বিজেপি-র দাবি, ১৯৫৮ সালে সরকারের সঙ্গে রাজ পরিবারের একটি চুক্তি হয়েছিল। তখন ফের এই প্রাসাদ ব্যক্তিমালিকানায় আসে। কিন্তু কংগ্রেসের বক্তব্য, তাই যদি হয় তা হলে রাজস্ব দফতরের খাজনার কাগজে কেন এটি সরকারি সম্পত্তি হিসাবে উল্লেখ থাকবে ২০১০ সালেও! তা ছাড়া, অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের কাগজও মিথ্যা!

তবে মূল প্রশ্ন এটিই যে বর্তমান বিতর্কে ঢোলপুর কতটা প্রাসঙ্গিক? জবাবে জয়রাম আজ বলেন, রাজ পরিবারের অন্দরের ঝঞ্ঝাট নিয়ে কংগ্রেসের মাথাব্যথা নেই। কংগ্রেস এটাই প্রমাণ করতে চাইছে যে বসুন্ধরার সঙ্গে ললিত মোদীর আর্থিক আঁতাত ছিল। ঢোলপুরের প্রাসাদকে এখন একটি বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত করেছে দুষ্মন্তের নিয়ন্ত হোটেল সংস্থা। ওই সংস্থায় ললিত মোদী প্রায় ১৩ কোটি বিনিয়োগ করেন ২০০৭ থেকে ২০০৯-এর মধ্যে। আবার ললিত মোদীর কাছ থেকে মরিশাসের একটি ভুঁইফোড় সংস্থা থেকে বিনিয়োগ এসেছিল।

বসুন্ধরার বিরুদ্ধে এই আক্রমণ শানানোর পর জয়রাম বলেন, ‘‘এমন নয় যে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে আমরা ভুলে গেছি। মানবিক কারণে ললিত মোদীকে ভিসা পাইয়ে দিতে তথা পালিয়ে থাকতে সাহায্য করেছিলেন সুষমা। সেই মানবিক কারণ কী? নানা দেশে ফূর্তি করে বেরানো। সুষমা-র স্বামী, কন্যার সঙ্গে ললিত মোদীর যোগাযোগটাও সাদা-কালোয় রয়েছে।’’

তাৎপর্যপূর্ণ হল, শুধু বসুন্ধরা বা সুষমা নয়, বিজেপি-র বিরুদ্ধে অনিয়মের সব অভিযোগ নিয়ে এখন ধুন্ধুমার ফেলতে চাইছে কংগ্রেস। তাই মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা দাবির বিরুদ্ধে যেমন ছাত্র কংগ্রেস আন্দোলনে নামে, তেমনই এখন মধ্যপ্রদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির বিষয়েও হইহই করে মাঠে নামতে চাইছেন দিগ্বিজয় সিংহরা। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, বিদেশ থেকে সনিয়া গাঁধী আজই দেশে ফিরেছেন। অসুস্থ দিদিমাকে দেখে কাল ফিরবেন রাহুল গাঁধী। তার পর ভবিষ্যতের কৌশল নির্ধারণের জন্য দলের সব সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মা ও ছেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE