E-Paper

BJP: বিরোধী-স্বর চাপা দিতেই কি নেই গডকড়ী, যোগীরা

বিজেপি শিবিরের দাবি, বিজেপির সংসদীয় বোর্ডে সামাজিক ও আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্যই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হয়েছে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২২ ০৮:৩১
নতুন সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের ঘোষণা করেছে বিজেপি।

নতুন সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের ঘোষণা করেছে বিজেপি। ছবি: সংগৃহীত।

বিরোধী কণ্ঠকে রুখতেই কী দলের সংসদীয় বোর্ডের খোলনলচে পাল্টে ফেলা হল? এই প্রশ্ন উঠেছে বিজেপিরই অভ্যন্তরেই।

দীর্ঘ সময় বাদে গত কাল নতুন সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের ঘোষণা করে বিজেপি। ১১ সদস্যের ওই দলে সভাপতি জে পি নড্ডা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও দুই শীর্ষ মন্ত্রী অমিত শাহ ও রাজনাথ সিংহ থাকলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাদ পড়েছেন প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। পর পর দু’বার উত্তরপ্রদেশ জয় করেও বোর্ডে স্থান পাননি যোগী আদিত্যনাথ। দুই শীর্ষ নেতাকে বাদ দেওয়া ও যোগীর স্থান না পাওয়া নিয়ে তুমুল জল্পনা ছড়িয়েছে দলের মধ্যে। দলের অনেকের মত, সংসদীয় বোর্ডে যাতে কোনও ধরনের বিরোধী স্বর না ওঠে সে জন্যই বর্ষীয়ান নেতাদের স্থান দেওয়া হল না। উল্টে জায়গা দেওয়া হয়েছে কর্নাটক ও অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে বি এস ইয়েদুরাপ্পা ও সর্বানন্দ সোনোয়াল-সহ এমন নেতাদের, যাদের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা প্রায় নেই।

সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকলেও অতীতে বিজেপি সংসদীয় বোর্ডের শক্তি মূলত সাত থেকে আট সদস্যের হয়ে থাকত। যাতে দলীয় সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী, দুই কক্ষের দলনেতা, মার্গদর্শক মণ্ডলীর সদস্য হিসাবে বর্ষীয়ান নেতা এবং প্রাক্তন বিজেপি সভাপতিরা স্থান পেতেন। অমিত শাহ দলীয় সভাপতি থাকাকালীন মার্গদর্শক মণ্ডলীর সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলীমনোহর জোশীকে সংসদীয় বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়। দলীয় সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় বোর্ডের সদস্যের ভিটো দেওয়ার অধিকার রয়েছে। বিজেপিতে দলের সংসদীয় বোর্ড দলের যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্নে সর্বোচ্চ কমিটি। মূলত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য সভাপতি বা দলের অন্যান্য শীর্ষ পদে কারা বসবেন সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সংসদীয় বোর্ড। তাই দলের কোনও সিদ্ধান্তে বিশেষ করে টিকিট বণ্টন থেকে রাজ্য সভাপতি নিয়োগে নিজের অপছন্দ ভিটো দিয়ে জানাতে পারেন কোনও সদস্য।

অতীতে বাজপেয়ী-আডবাণী জামানায় সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজেদের আপত্তি জানাতে দেখা যেত অন্য সদস্যদের। যে মতানৈক্য পরে ঘরোয়া ভাবে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতেন তৎকালীন শীর্ষ নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, আগামী দিনে সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে ভিন্ন মত বা বিরোধিতার স্বর যাতে কোনও ভাবেই না ওঠে, তা নিশ্চিত করতেই গডকড়ী ও শিবরাজকে বাদ দেওয়া হল। যোগী যদি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হতেন সে ক্ষেত্রে তাঁর স্বভাবজনিত কারণে বিরোধিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই স্থান পাননি তিনিও। বর্ষীয়ান নেতা হিসাবে রাজনাথ সিংহ কমিটিতে থাকলেও তিনি নিজের মন্ত্রকের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। কৌশলগত ভাবে দলীয় বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখার কারণেই এখনও বিজেপিতে নিজের গুরুত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার একমাত্র সদস্য রাজনাথ। আর বাকি যারা কমিটিতে রয়েছেন তাঁরা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কার্যত আনকোরা। তাঁদের পক্ষে শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখ খোলা কার্যত অসম্ভব।

তবে দলের একাংশ মনে করছেন, শিবরাজ এ যাত্রায় বাদ পড়েছেন কেবলমাত্র যোগীর কারণে। কারণ সংসদীয় বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন আদিত্যনাথ। অনেকের মতে, ২০২৯ সালের লোকসভা ভোট ও দলে গুজরাত শিবিরের প্রতিপত্তি বজায় রাখতেই ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয় যোগীকে। যুক্তি হিসাবে তুলে ধরা হয়, এ বারে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকেই স্থান দেওয়া হয়নি বোর্ডে। ফলে বাদ পড়তে হয় মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজকেও। অন্য দিকে নিতিন গডকড়ী দলের প্রাক্তন সভাপতি তথা সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সূত্রের মতে, তাঁর সঙ্গে অন্যান্য দলের নেতা ও ব্যবসায়ীদের সুসম্পর্ক থাকা এবং বিভিন্ন সময়ে তাঁদের হয়ে তদ্বিরের কারণে কোপে পড়েন তিনি।

যদিও বিজেপি শিবিরের দাবি, বিজেপির সংসদীয় বোর্ডে সামাজিক ও আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্যই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই সূত্র মেনেই স্থান পেয়েছেন শিখ সমাজের প্রতিনিধি ইকবাল। জায়গা পেয়েছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজাতি সম্প্রদায়ের সোনোয়াল, দক্ষিণ থেকে ইয়েদুরাপ্পা ও তফসিলি উপজাতির প্রতিনিধি কে লক্ষ্মণ।

BJP Yogi Adiyanath Nitin Gadkari

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy