গত চার বছর ধরে দিল্লির সরকারের সড়ক, উড়ালপুলের মতো পরিকাঠামো তৈরিতে খরচের হার একই জায়গায় থমকে রয়েছে। দিল্লির সরকারের শতকরা ৮০ ভাগ অর্থই খরচ হচ্ছে বেতন, পেনশনের পাশাপাশি নানারকম ভর্তুকি দিতে। কারণ আম আদমি পার্টির সরকার নিখরচায় বিদ্যুৎ, জলের জোগান দিতে গিয়ে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিয়েছে। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতার পরে প্রশ্ন উঠেছে, তারা কি একই ভাবে ভর্তুকিতে খরচ করে পরিকাঠামোয় কাটছাঁটের নীতি চালিয়ে যাবে? না কি নীতির পরিবর্তন করবে?
বিজেপি দিল্লির ভোটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, নিখরচায় জল, বিদ্যুতের জোগান বন্ধ হবে না। মহিলাদের মাসে ২৫০০ টাকা, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নানা উপহার, বয়স্কদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিখরচায় চিকিৎসা, বয়স্কদের পেনশন, অটোচালক, ই-রিকশা চালকদের জন্য জীবনবিমার নানা প্রকল্পেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে বিজেপির পক্ষে ভর্তুকি বাবদ খরচ কমানো মুশকিল। তার সঙ্গে বিজেপি যদি পরিকাঠামোয় খরচ বাড়াতে যায়, তা হলে দিল্লির বাজেটে এই প্রথম রাজস্ব ঘাটতি বাড়তে পারে।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে অরবিন্দ কেজরীওয়াল সরকার বাজেটের মোট খরচের মাত্র ২০ শতাংশ পরিকাঠামোর পিছনে খরচ করছিল। সেই কারণেই দিল্লির রাস্তায় খানাখন্দ বেড়েছে। ২০২০-২১-এর পর থেকে দিল্লির বাজেটে পরিকাঠামো তৈরির পিছনে মূলধনী খাতে খরচ কার্যত বাড়েনি। মূল্যবৃদ্ধির হিসেব কষলে পরিকাঠামো খাতে খরচ বাস্তবে কমেছে। গত বছর আম আদমি পার্টির সরকার যখন মাসে ২১০০ টাকার মহিলা সম্মান যোজনা চালু করে, সে সময় অর্থ দফতর সতর্ক করে বলেছিল, এর ফলে বাজেটে ভর্তুকির বহর আরও বাড়বে। বিভিন্ন পরিষেবায় মাসুল বসানোর কথা ভাবতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, দিল্লির বাজেটের এখন ২২ শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় হচ্ছে। স্বাস্থ্যে ১১ শতাংশ খরচ হচ্ছে। সমাজকল্যাণে খরচ হচ্ছে ৯ শতাংশ অর্থ। এখন বিজেপি সরকার প্রতিশ্রুতি মতো মহিলাদের অনুদান ২৫০০ টাকা করলে বাজেটের উপরে চাপ আরও বাড়বে। তবে তাঁদের মতে, দিল্লিতে এখন যেহেতু কেন্দ্রের মতোই বিজেপি সরকার এবং ২৬ বছর পরে দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরছে, তাই কেন্দ্রীয় সরকার ঘুরপথে দিল্লিকে নানা ভাবে অর্থ সাহায্যের বন্দোবস্ত করে দিতে পারে। দিল্লির পরিকাঠামো তৈরির খরচও অনেকখানি কেন্দ্র বহন করতে পারে। নতুন সরকার গঠনের পরে ক্রমশ এই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)