ভারতের স্বাধীনতা দিবসেই ঘটনাচক্রে সুদূর আলাস্কায় মুখোমুখি বসতে চলেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গোটা বিশ্বের নজর এই মহাবৈঠকের দিকে। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ভারতের বর্তমান স্বার্থও এই বৈঠকের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বেশ পোক্তভাবেই।
বৈঠকের ফলাফল কী হবে, তা এখনও সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সাড়ে তিন বছর ধরে চলতে থাকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যতি পড়বে কি না, তা কেউ জানে না এখনও। তবে অন্তত সংঘর্ষ বিরতিতেও পৌঁছনো গেলেও তার প্রভাব ভারত-আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধে কী ভাবে পড়বে, তা নিয়ে চুলচেরা বিচার শুরু হয়েছেকূটনৈতিক মহলে।
আজ আমেরিকার শুল্কনীতির মোকাবিলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক হয়েছে সংসদে। মোদী তার পর তরনজিৎ সান্ধুর সঙ্গেও বৈঠক করেন। সান্ধু আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত।
বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা পরে ব্যাখ্যা করেন, “ট্রাম্পের ভারতের উপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক জরিমানা বসানোর প্রধান কারণ শুধু নয়াদিল্লি নয়, ঘুরিয়ে মস্কোর উপরেও চাপ তৈরি করা। রাশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার ভারত যদি সে দেশ থেকে তেল এবং অন্য পণ্য আমদানি কমিয়ে বা বন্ধ করে দেয়, সেটা মস্কোর জন্য বিপুল চাপের। ঘুরপথে এই চাপ তৈরি করতে পারলে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবেন ট্রাম্প। এটা হোয়াইট হাউসের হিসাবেরমধ্যে রয়েছে।”
ট্রাম্প যে মনে করেন ভারতের উপর চড়া শুল্ক চাপানোয় জোর ধাক্কা খেয়েছেরাশিয়ার অর্থনীতি, সেটাও মাথায় রাখা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতকে রাশিয়ার তেলের ‘বৃহত্তম বা দ্বিতীয় বৃহত্তম’ ক্রেতা বলে উল্লেখ করে এ কথা বলেছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখন তাদের বৃহত্তম বা দ্বিতীয় বৃহত্তম তেলের ক্রেতাকে বলে, ‘রাশিয়ার থেকে তেল কিনলে তোমাদের ঘাড়ে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপবে’, সে ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না। জোর ধাক্কা খেয়েছে।” ফলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করতে পুতিনের উপর বিভিন্ন চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের উপর জরিমানা চাপানোকে আরও একটি কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, আলাস্কা বৈঠকে পুতিন যদি যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়েট্রাম্পের শর্তে রাজি হন, তা হলে সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের উপর থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কের জরিমানা উঠে যাবে কি না, তা নিয়ে বলার সময় আসেনি। কিন্তু এটা অবশ্যই বলা যাচ্ছে যে, ভারত-আমেরিকা শুল্ক যুদ্ধে তার প্রভাব পড়বে এবং ভারত কিছুটা স্বস্তিদায়কজায়গায় থাকবে।
কূটনৈতিক কর্তার কথায়, “রাষ্ট্রনীতিতে ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগের ভূমিকা থাকে না। ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও নেই। ভারতের অর্থনীতিকে গালমন্দ করা, তিরিশবার ভারত-পাক মধ্যস্থতার দাবি, ইসলামাবাদ-নয়াদিল্লিকে একই বন্ধনীতে রাখা, রাশিয়া থেকে ভারতকে তেল কেনার জন্য জরিমানা করার পিছনে নির্দিষ্ট নকশা রয়েছে। তা হল, আমেরিকার সবচেয়ে ফায়দা হবে এমন চুক্তি হাসিল করে নেওয়া। ট্রাম্পের কূটনীতির বৈশিষ্ট হল, জলে ঢিল ফেলে তার পরে তরঙ্গ মাপা। সুবিধাজনক মনে হলে, তার থেকে ফায়দা আদায় করা। এ ক্ষেত্রে ভারতের উপর জরিমানা চাপিয়ে তিনি বস্তুত রাশিয়ার বিরুদ্ধে নয়াদিল্লিকে ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন।”
সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, আলাস্কা বৈঠকে অভিষ্ট সিদ্ধ হলে, নয়াদিল্লির প্রতি শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা নরম হতে পারেন ট্রাম্প। তবে পুতিন যে অক্ষরে অক্ষরে ট্রাম্পের শর্ত মেনে রণে ভঙ্গদেবেন, এমনটাও হলফ করে বলা যাচ্ছে না। তাই ভারতের উপরে চাপানো ট্রাম্প-শুল্ক কমবে কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত কথা বলার সময় এখনও আসেনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)